প্রহ্লাদের প্রার্থনায় নৃসিংহদেবের ক্রোধোপশম

 

সপ্তম স্কন্ধ

নবম অধ্যায়

প্রহ্লাদের প্রার্থনায় নৃসিংহদেবের ক্রোধোপশম




শ্রীনারদ উবাচ

এবং সুরাদয়ঃ সর্বে ব্রহ্মরুদ্রপুরঃসরাঃ ।

নোপৈতুমশকম্মন্যুসংরম্ভং সুদুরাসদম্ ॥ ১ ৷৷

অনুবাদঃ দেবর্ষি নারদ বললেনভগবান তখন অত্যন্ত ক্রোধাবিষ্ট ছিলেন বলে ব্রহ্মা, রুদ্র প্রমুখ দেবতারা তাঁর সামনে যেতে সাহস করেননি।

 

সাক্ষাৎ শ্রীঃ প্রেষিতা দেবৈদৃষ্ট্বা তং মহদদ্ভুতম্ ।

 অদৃষ্টাশ্রুতপূর্বত্বাৎ সা নোপেয়ায় শঙ্কিতা ৷৷ ২ ॥

অনুবাদঃ সমস্ত দেবতারা লক্ষ্মীদেবীকে ভগবানের সামনে যেতে অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু তিনিও ভগবানের এই অদৃষ্ট এবং অশ্রুতপূর্ব অদ্ভুত রূপ দর্শন করে ভয়ভীত হওয়ার ফলে তার সামনে যেতে পারেননি।

 

প্রহ্লাদং প্রেষয়ামাস ব্রহ্মাবস্থিতমস্তিকে ।

তাত প্রশময়োপেহি স্বপিত্রে কুপিতং প্রভুম্ ॥ ৩ ॥

অনুবাদঃ তখন ব্রহ্মা তার নিকটে দণ্ডায়মান প্রহ্লাদ মহারাজকে অনুরোধ করেছিলেনহে বৎস, ভগবান নৃসিংহদেব তোমার আসুরিক পিতার প্রতি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তার কাছে গিয়ে তুমি তাঁকে শান্ত কর।

 

তথেতি শনকৈ রাজন্ মহাভাগবতোভকঃ ।

উপেত্য ডুবি কায়েন ননাম বিধৃতাঞ্জলিঃ ॥ ৪ ॥

 

অনুবাদঃ নারদ মুনি বললেন-হে রাজন, মহাভাগবত প্রহ্লাদ মহারাজ একটি ছোট্ট বালক হওয়া সত্ত্বেও, ব্রহ্মার বাণী শিরোধার্য করে ধীরে ধীরে ভগবান নৃসিংহদেবের কাছে গিয়ে ভূতলে পতিত হয়ে, কৃতাঞ্জলিপুটে তাঁকে সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করেছিলেন।

 

স্বপাদমূলে পতিতং তমর্ভকং

বিলোক্য দেবঃ কৃপয়া পরিপ্লুতঃ ।

উত্থাপ্য তচ্ছীষ্ণদধাত্ করাম্বুজং

কালাহিবিত্রস্তুধিয়াং কৃতাভয়ম্ ॥ ৫ ॥

অনুবাদঃ প্রহ্লাদ মহারাজকে তার শ্রীপাদপদ্মে পতিত দেখে ভগবান নৃসিংহদেব করুণাস্ত্র হয়ে তাকে উত্থাপন করেছিলেন এবং তার ভক্তদের অভয় প্রদানকারী করকমল তাঁর মস্তকে স্থাপন করেছিলেন।

 

স তৎকরস্পর্শধুতাখিলাশুভঃ

সপদ্যভিব্যক্তপরাত্মদর্শনঃ ।

তৎপাদপদ্মং হৃদি নিৰ্বতো দধৌ

হৃষ্যত্তনুঃ ক্লিন্নহৃদশ্ৰুলোচনঃ ॥ ৬ ॥

অনুবাদঃ প্রহ্লাদ মহারাজের মস্তকে ভগবান নৃসিংহদেবের করকমলের স্পর্শের ফলে, প্রহ্লাদ মহারাজ সমস্ত জড় কলুষ এবং বাসনা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়েছিলেন, যেন তিনি তখন সম্পূর্ণরূপে বিধৌত হয়েছিলেন। তার ফলে তিনি তখন চিন্ময় স্তরে অবস্থিত হয়েছিলেন এবং তাঁর শরীরে চিন্ময় আনন্দের সমস্ত লক্ষণগুলি প্রকাশিত হয়েছিল। তার হৃদয় ভগবৎ প্রেমে পূর্ণ হয়েছিল, তাঁর নয়নযুগল থেকে অশ্রুধারা ঝরে পড়ছিল, এবং তিনি তখন পরম আনন্দে ভগবানের শ্রীপাদপদ্ম তার হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন।

 

অস্তৌষীদ্ধরিমেকাগ্রমনসা সুসমাহিতঃ ।

প্রেমগদগদয়া বাচা তন্ন্যস্তহৃদয়েক্ষণ ॥৭॥

অনুবাদঃ প্রহ্লাদ মহারাজ একাগ্র চিত্তে সমাহিত হয়ে, ভগবান নৃসিংহদেবের প্রতি তার মন এবং দৃষ্টি নিবদ্ধ করে প্রেম গদগদ বচনে তাঁর স্তব করতে লাগলেন।

 

শ্রীপ্রহ্লাদ উবাচ

ব্রহ্মাদয়ঃ সুরগণা মুনয়োহথ সিদ্ধাঃ

সত্ত্বৈকতানগতয়ো বচসাং প্ৰবাহৈঃ ।

নারাধিতুং পুরুগুণৈরধুনাপি পিপ্রুঃ

কিং তোষ্টুমহতি স মে হরিরুগ্রজাতেঃ ॥ ৮ ॥

অনুবাদঃ প্রহ্লাদ মহারাজ প্রার্থনা করেছিলেনঅসুর কুলোদ্ভূত আমার পক্ষে ভগবানের প্রসন্নতা বিধানের জন্য স্তব করা কি করে সম্ভব? সত্ত্বগুণান্বিত এবং অত্যন্ত যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও ব্রহ্মা আদি দেবতাগণ এবং ঋষিগণ অপূর্ব সুন্দর বাক্য প্রবাহের দ্বারা ভগবানের প্রসন্নতা বিধান করতে সক্ষম হননি, সুতরাং আমার পক্ষে কি করে সম্ভব হবে? আমার তো কোনই যোগ্যতা নেই।

 

 

মন্যে ধনাভিজনরূপতপঃশ্ৰুতৌজ

স্তেজঃপ্রভাববলপৌরুষবুদ্ধিযোগাঃ ।

নারাধনায় হি ভবস্তি পরস্য পুংসো

ভক্ত্যা তুতোষ ভগবান্ গজযূথপায় ॥ ৯ ॥

 

অনুবাদঃ প্রহ্লাদ মহারাজ বললেন- আমি মনে করি যে ধন-সম্পদ, সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম, তপস্যা, পাণ্ডিত্য, ইন্দ্ৰিয়নৈপুণ্য তেজ, প্রতাপ, শারীরিক বল, পৌরুষ, বুদ্ধি, এবং যোগশক্তি, এই সমস্ত গুণের দ্বারাও ভগবানের প্রসন্নতা বিধান করা যায় না। ভগবান কেবল ভক্তির দ্বারাই প্রসন্ন হন। এই সমস্ত গুণে গুণান্বিত না হলেও গজেন্দ্র কেবল ভক্তির দ্বারাই ভগবানের প্রসন্নতা বিধান করেছিলেন।

 

বিপ্রাদ দ্বিষড়গুণযুতাদরবিন্দনাভ-

পাদারবিন্দবিমুখাৎ শ্বপচং বরিষ্ঠম্ ।

মন্যে তদর্পিতমনোবচনেহিতার্থ-

প্রাণং পুনাতি স কুলং ন তু ভূরিমানঃ ॥ ১০ ॥

অনুবাদঃ (সনৎসুজাত গ্রন্থে বর্ণিত) বারোটি ব্রাহ্মণোচিত গুণে ভূষিত অথচ ভগবানের শ্রীপাদপদ্ম বিমুখ অভক্ত ব্রাহ্মণ অপেক্ষা যার মন, বাক্য, কর্ম, ধন এবং প্রাণ ভগবানে অর্পিত, সেই চণ্ডালও শ্রেষ্ঠ। এই প্রকার ভক্ত সেই রকম ব্রাহ্মণ অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ, কারণ ভক্ত তার কুল পবিত্র করতে পারে, কিন্তু সেই অতি গর্বান্বিত ব্রাহ্মণ নিজেকেও পবিত্র করতে পারে না।

 

নৈবাত্মনঃ প্রভুরয়ং নিজলাভপূর্ণো

মানং জনাদবিদুষঃ করুণো বৃণীতে ৷

যদ্ যজ্জনো ভগবতে বিদধীত মানং

তচ্চাত্মনে প্রতিমুখস্য যথা মুখশ্রীঃ॥ ১১ ॥

অনুবাদঃ ভগবান সর্বদাই সর্বতোভাবে আত্মতৃপ্ত। তাই কেউ যখন তাঁকে কিছু নিবেদন করেন, তখন সেই ভক্তের মঙ্গলের জন্যই ভগবান তা কৃপাপূর্বক গ্রহণ করেন। ভগবানের কারও সেবার প্রয়োজন হয় না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, নিজের মুখের সৌন্দর্যই দর্পণে প্রতিবিম্বিত হয় (অর্থাৎ ভগবানের মারাধনার ফলে নিজেরই মঙ্গল হয়)।

 

তস্মাদহং বিগতবিক্লব ঈশ্বরস্য

সর্বাত্মনা মহি গৃণামি যথামনীষম্ ।

নীচোজয়াগুণবিসর্গমনুপ্রবিষ্টঃ

পুয়েতযেন হি পুমাননুবর্ণিতেন ৷৷ ১২

 

অনুবাদঃ অতএব, অসুরকুলে জন্মগ্রহণ করলেও আমার বুদ্ধি এবং পূর্ণ প্রয়াস অনুসারে আমি শঙ্কা পরিত্যাগপূর্বক ভগবানের মহিমা বর্ণনা করব। ভগবানের মহিমা শ্রবণ বা পাঠ করলে অবিদ্যাবশত এই জড় জগতে প্রবিষ্ট মানুষও পবিত্র হয়।

 

সর্বে হামী বিধিকরাস্তব সত্ত্বধান্নো

ব্রহ্মাদয়ো বয়মিবেশ ন চোদ্বিজন্তঃ ।

ক্ষেমায় ভূতয় উতাত্মসুখায় চাস্য

বিক্রীড়িতং ভগবতো রুচিরাবতারৈঃ ॥ ১৩ ॥

অনুবাদঃ হে ভগবান, ব্রহ্মা আদি সমস্ত দেবতারা চিন্ময় স্থিতিতে অবস্থিত আপনার নিষ্ঠাপরায়ণ সেবক। তাই তারা আমাদের মতো নন (প্রহ্লাদ এবং তাঁর আসুরিক পিতা হিরণ্যকশিপু)। এই ভয়ঙ্কর রূপে আপনার আবির্ভাব আপনার নিজের আনন্দ বিধানের জন্য আপনারই লীলাবিলাস। আপনার এই প্রকার অবতার জগতের মঙ্গল এবং শ্রীবৃদ্ধির জন্য।

 

তদ যচ্ছ মন্যুমসুরশ্চ হতস্ত্বয়াদ্য

মোদেত সাধুরপি বৃশ্চিকসপহত্যা ।

লোকাশ্চ নিবৃতিমিতাঃ প্রতিয়স্তি সর্বে

রূপং নৃসিংহ বিভয়ায় জনাঃ স্মরন্তি ॥ ১৪ ॥

অনুবাদঃ হে ভগবান নৃসিংহদেব, তাই, আপনি এখন আপনার ক্রোধ সম্বরণ করুন, কারণ আমার পিতা মহা অসুর হিরণ্যকশিপু এখন নিহত হয়েছে। সাধু ব্যক্তিও যেমন সৰ্প অথবা বৃশ্চিক হত্যা করে আনন্দিত হন, সমগ্র জগৎ এই অসুরের মৃত্যুতে পরম সন্তোষ লাভ করেছে। এখন তারা তাদের সুখ সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়েছে, এবং ভয় থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তারা সর্বদা আপনার এই মঙ্গলময় অবতারকে স্মরণ করবে।

 

নাহং বিভেম্যজিত তেতিভয়ানকাস্য-

জিহ্বার্কনেত্রভ্রুকুটীরভসোগ্রদংষ্ট্রাত্।

আস্ত্রস্রজঃক্ষতজকেশরশঙ্কুকর্ণা-

ন্নিহ্রাদভীতদিগিভাদরিভিন্নখাগ্রাৎ ॥ ১৫ ॥

অনুবাদঃ হে অজিত ভগবান, আপনার অত্যন্ত ভয়ঙ্কর মুখ, জিহ্বা, সূর্যের মতো উজ্জ্বল নেত্র অথবা ভ্রূকুটিভঙ্গির ভয়ে আমি ভীত নই। আমি আপনার তীক্ষ্ণ দত্ত, অন্ত্রের মালা, রক্তাক্ত কেশর অথবা উন্নত কর্ণের ভয়ে ভীত নই। এমন কি আপনার যে গর্জনের ফলে দিগগজেরা পলায়ন করে অথবা যে নখাগ্রের দ্বারা শত্রুরা বিনাশ প্রাপ্ত হয়, তার ভয়েও আমি ভীত নই।

 

 

ত্রস্তোস্ম্যহংকৃপণবৎসলদুঃসহোগ্র-

সংসারচক্রকদনাদ গ্রসতাং প্ৰণীতঃ ।

বদ্ধঃ স্বকর্মভিরুশত্তম তেঘিমূলং

প্রীতোপবর্গশরণংহুয়সেকদানু৷৷১৬

 

অনুবাদঃ হে পরম শক্তিমান, পতিত-বৎসল, দুর্জয় প্রভু, আমার কর্মের ফলে আমি অসুরদের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছি এবং তাই এই দুঃসহ সংসার চক্রে অত্যন্ত ভীত হয়েছি। কবে আপনি আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে ভব-বন্ধন থেকে মুক্তির আশ্রয় আপনার পাদমূলে আমাকে আহ্বান করবেন?

 

যস্মাৎ প্রিয়াপ্রিয়বিয়োগসংযোগজন্ম-

শোকাগ্নিনা সকলযোনিষু দহ্যমানঃ ।

দুঃখৌষধং তদপি দুঃখমতদ্ধিয়াহং

ভূমন্ ভ্রমামি বদ মে তব দাস্যযোগম্ ৷৷১৭৷৷

অনুবাদঃ হে মহান্, হে পরমেশ্বর ভগবান, প্রিয় এবং অপ্রিয় পরিস্থিতির সংযোগের ফলে এবং তার সংযোগ ও বিয়োগের ফলে জীবকে স্বর্গ অথবা নরকের অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় পতিত হয়ে শোকাগ্নিতে দগ্ধ হতে হয়। যদিও এই দুঃখময় জীবনের নিবৃত্তি সাধনের বহু উপায় রয়েছে। কিন্তু সেই সমস্ত উপায়গুলি সেই দুঃখদায়ক পরিস্থিতি থেকেও অধিক দুঃখজনক। তাই আমি মনে করি যে, তার একমাত্র নিরাময় হচ্ছে আপনার সেবায় যুক্ত হওয়া দয়া করে আপনি আমাকে সেই সেবার উপদেশ প্রদান করুন।

 

সোহহং প্রিয়স্য সুহৃদঃ পরদেবতায়া

লীলাকথাস্তব নৃসিংহ বিরিঞ্চগীতাঃ ।

অস্তিতমনুগণন্ গুণবিপ্রমুক্তো

দুর্গাণি তে পদযুগালয়হংসসঙ্গঃ ॥ ১৮ ॥

অনুবাদঃ হে ভগবান নৃসিংহদেব, মুক্ত পুরুষদের (হংস) সঙ্গে আপনার দিবা প্রেমময়ী সেবায় যুক্ত হয়ে আমি জড়া প্রকৃতির তিন গুণের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণরূপে কলুষমুক্ত হব এবং তার ফলে আমার অত্যন্ত প্রিয় প্রভু আপনার মহিমা কীর্তন করতে সক্ষম হব। আমি ব্রহ্মার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর পরম্পরায় আপনার মহিমা কীর্তন করব। এইভাবে আমি অনায়াসে ভবসাগর উত্তীর্ণ হব।

 

বালস্য নেহ শরণং পিতরৌ নৃসিংহ

নাতস্য চাগদমুদন্বতি মজ্জতো নৌঃ ৷

তপ্তস্য তৎপ্রতিবিধিৰ্ষ ইহাঞ্জসেষ্ট-

স্তাবদ্ বিভো তনুভূতাং ত্বদুপেক্ষিতানাম্ ৷১৯৷

অনুবাদঃ হে নৃসিংহদেব, হে বিভো, দেহাত্মবুদ্ধির ফলে আপনার দ্বারা উপেক্ষিত দেহধারী জীবেরা তাদের নিজেদের কল্যাণের জন্য কিছুই করতে পারে না। তারা তাদের দুঃখ নিবারণের যে উপায়ই গ্রহণ করে তা সাময়িকভাবে লাভজনক হলেও, ক্ষণস্থায়ী। যেমন, পিতা এবং মাতা তাদের শিশুকে রক্ষা করতে পারে না, চিকিৎসক এবং ঔষধ রোগীর কষ্ট দূর করতে পারে না, এবং তরণি সমুদ্রে নিমজ্জমান ব্যক্তিকে রক্ষা করতে পারে না।

 

যস্মিন্ যতো যহি যেন চ যস্য যম্মাদ্‌

যস্মৈ যথা যদুত যত্নপরঃ পরো বা।

ভাবঃ করোতি বিকরোতি পৃথকৃস্বভাবঃ

সঞ্চোদিতস্তদখিলং ভবতঃ স্বরূপম্ ৷৷ ২০ ৷৷

অনুবাদঃ হে প্রভু, এই জড় জগতে সকলেই সত্ত্ব, রজ এবং তমোগুণের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জড়া প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণাধীন। ব্রহ্মা থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র পিপীলিকা পর্যন্ত সকলেই এই গুণের বশীভূত হয়ে কর্ম করে। তাই এই জড় জগতে সকলেই আপনার প্রকৃতির বশীভূত। যে কারণে তারা কর্ম করে যে স্থানে তারা কর্ম করে, যে সময়ে তারা কর্ম করে, যে পদার্থ নিয়ে তারা কর্ম করে, তাদের জীবনের যে উদ্দেশ্যকে তারা চরম বলে বিবেচনা করেছে এবং সেই উদ্দেশ্য সাধনের উপায়তা সবই আপনারই শক্তির প্রকাশ। প্রকৃতপক্ষে, যেহেতু শক্তি এবং শক্তিমান অভিন্ন, তাই সেই সবই আপনারই প্রকাশ।

 

মায়া মনঃ সৃজতি কর্মময়ং বলীয়ঃ

কালেন চোদিতগুণানুমতেন পুংসঃ ।

ছন্দোময়ং যদজয়ার্পিতষোড়শারং

সংসারচক্রমজ কোতিতরেৎত্বদন্যঃ৷৷২১॥

অনুবাদঃ হে ভগবান, হে পরম শাশ্বত, আপনার স্বীয় অংশ বিস্তার করে কালের দ্বারা ক্ষোভিত আপনার বহিরঙ্গা শক্তির মাধ্যমে আপনি জীবের সূক্ষ্ম শরীর সৃষ্টি

করেছেন। এইভাবে মন বৈদিক কর্মকাণ্ডের নির্দেশ এবং যোলটি উপাদানের দ্বারা অন্তহীন বাসনার বন্ধনে জীবকে বেঁধে রাখে। আপনার শ্রীপাদপদ্মের শরণ গ্রহণ বিনা এই বন্ধন থেকে কে মুক্ত হতে পারে?

 

স ত্বং হি নিত্যবিজিতাত্মগুণঃ স্বধান্না

কালো বশীকৃতবিসৃজ্যবিসর্গশক্তিঃ ।

চক্রে বিসৃষ্টমজয়েশ্বর ষোড়শারে

নিষ্পীড্যমানমুপকর্ষ বিভো প্রপন্নম্ ৷৷ ২২

অনুবাদঃ হে প্রভু, হে বিভো, আপনি ষোলটি উপাদানের দ্বারা এই জড় জগৎ করেছেন, কিন্তু আপনি তাদের জড় গুণের অতীত। অর্থাৎ, এই জড় গুণ সর্বতোভাবে আপনার নিয়ন্ত্রণাধীন এবং আপনি কখনও তাদের দ্বারা পর হন না। তাই, কাল আপনার প্রতিনিধিত্ব করে। হে প্রভু হে পরমেশ্বর অজেয়, আমি কালচক্রে নিষ্পেষিত এবং তাই আমি সর্বতোভাবে আপ শরণাগত হয়েছি, এখন দয়া করে আপনি আমাকে আপনার শ্রীপাদপদ্মের আ গ্রহণ করুন।

 

দৃষ্টা ময়া দিবি বিভোখিলধিষ্ণ্যপানা-

মায়ুঃশ্রিয়োবিভবইচ্ছতিযাঞ্জনোয়ম্।

যেস্মৃৎপিতৃঃকুপিতহাসবিজুস্তিতভ্রূ

বিস্ফূর্জিতেনলুলিতাঃসতুতেনিরস্তঃ৷৷২৩৷৷

অনুবাদঃ হে ভগবান, মানুষ সাধারণত দীর্ঘ আয়ু, ঐশ্বর্য এবং সুখভোগের জন্য স্বর্গলোকে উন্নীত হতে চায়, কিন্তু আমার পিতার কার্যকলাপের দ্বারা আমি তা দেখেছি।আমার পিতা যখন ক্রুদ্ধ হয়ে ব্যঙ্গভরে অট্টহাস্য করত, তখন তার ভ্রুকুটি দর্শন করে দেবতারা বিনষ্ট হত। কিন্তু আমার সেই পিতা, যিনি এত শক্তিশালী ছিলেন, তিনি এখন নিমেষের মধ্যে আপনার দ্বারা বিনাশ প্রাপ্ত হয়েছেন।

 

তস্মাদস্তনুভূতামহমাশিষোজ্ঞ

আয়ুঃ শ্রিয়ং বিভবমৈন্দ্রিয়মাবিরিষ্ক্যাৎ ।

নেচ্ছামি তে বিলুলিতানুরুবিক্রমেণ

কালাত্মনোপনয় মাং নিজভৃত্য পার্শ্বম্ ॥ ২৪ ॥

অনুবাদঃ হে ভগবান, এখন আমি ব্রহ্মা থেকে শুরু করে পিপীলিকা পর্যন্ত সমস্ত জীবের জড় ঐশ্বর্য, যোগশক্তি, দীর্ঘ আয়ু এবং অন্যান্য জড় সুখের পূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। মহাকাল রূপে আপনি এই সবই ধ্বংস করেন। তাই আমি সেগুলি চাই না। হে ভগবান, আমি কেবল আপনার কাছে অনুরোধ করি, দয়া করে আমাকে শুদ্ধ ভক্তের সান্নিধ্য প্রদান করুন এবং ঐকান্তিক সেবকরূপে তাকে সেবা করতে দিন।

 

কুত্রাশিষঃ শ্ৰুতিসুখা মৃগতৃষ্ণিরূপাঃ

ক্বেদং কলেবরমশেষরুজাং বিরোহঃ ।

নির্বিদ্যতে ন তু জনো যদপীতি বিদ্বান্

কামানলং মধুলবৈঃ শময়ন্ দুৱাপৈঃ ৷৷ ২৫ ৷

অনুবাদঃ এই জড় জগতে প্রতিটি জীবই ভবিষ্যৎ সুখের কামনা করে, যা ঠিক মরুভূমির মরীচিকার মতো। মরুভূমিতে জল কোথায়? ঠিক তেমনই এই জড় জগতে সুখ কোথায়? এই শরীরটির কি মূল্য? এটি কেবল নানা প্রকার রোগের উদ্ভবস্থল। তথাকথিত দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক এবং রাজনীতিবিদেরা সেই কথা ভালভাবেই জানে, কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা অনিত্য সুখের আকাঙ্ক্ষা করে। সুখ লাভ করা অত্যন্ত কঠিন, কিন্তু যেহেতু তারা তাদের ইন্দ্রিয় সংযমে অক্ষম, তাই তারা জড় জগতের তথাকথিত সুখের পিছনে ধাবিত হয় এবং কখনই সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে না।

 

ক্বাহং রজঃপ্রভব ঈশ তমোধিকেস্মিন্

জাতঃসুরেতরকুলেক্বতবানুকম্পা।

নব্রহ্মণোনতুভবস্যনবৈরমায়া

যন্মেপিতঃশিরসিপদ্মকরঃপ্রসাদঃ॥২৬॥

অনুবাদঃ হে ভগবান, হে পরমেশ্বর, নারকীয় তম ও রজোগুণাচ্ছন্ন অসুরকুল জাত আমি বা কোথায়? আর ব্রহ্মা, শিব অথবা লক্ষ্মীদেবীকেও যা কখনও প্রদান করা হয়নি, আপনার সেই অহৈতুকী কৃপাই বা কোথায়? আপনি কখনও তাদের মস্তকে আপনার করকমল অর্পণ করেননি, কিন্তু আমার ক্ষেত্রে আপনি তা করেছেন।

 

নৈষা পরাবরমতির্ভবতো ননু স্যা-

জ্জত্তোর্যথাত্মসুহৃদো জগতস্তথাপি ৷

সংসেবয়া সুরতরোরিব তে প্রসাদঃ

সেবানুরূপমুদয়ো ন পরাবরত্বম্ ৷৷ ২৭ ॥

অনুবাদঃ হে ভগবান, আপনি সাধারণ জীবের মতো শত্রু ও মিত্রের, এবং অনুকূল প্রতিকূলের মধ্যে ভেদভাব দর্শন করেন না, কারণ আপনার মধ্যে উচ্চ এবং নি ধারণা নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও কল্পবৃক্ষ যেমন মহৎ এবং ক্ষুদ্রের মধ্যে পার্থ দর্শন না করে জীবের বাসনা অনুসারে ফল প্রদান করে, তেমনই আপনি ভক্তে সেবার মাত্রা অনুসারে তাকে আপনার আশীর্বাদ প্রদান করেন।

 

এবং জনং নিপতিতং প্রভবাহিকূপে

কামাভিকামমনু যঃ প্রপতন প্ৰসঙ্গাত্ ।

কৃত্বাত্মসাৎ সুরর্ষিণা ভগবন্ গৃহীতঃ

সোহংকথংনুবিসৃজেতবভৃত্যসেবাম্ ॥২৮॥

অনুবাদঃ হে ভগবান, একের পর এক জড় বাসনার সঙ্গ প্রভাবে আমি সাধারণ মানুষদের অনুসরণ করে সর্পপূর্ণ অন্ধকূপে পতিত হয়েছি। আপনার সেবক নারদ মুনি কৃপা করে আমাকে তার শিষ্যরূপে গ্রহণ করেছেন এবং দিব্য স্থিতি প্রাপ্ত হওয়ার শিক্ষা প্রদান করেছেন। তাই আমার সর্বপ্রথম কর্তব্য তার সেবা করা। তাঁর সেবা আমি কি করে পরিত্যাগ করতে পারি?

 

 

মপ্রাণরক্ষণমনস্ত পিতৃবর্ধশ্চ

মন্যে স্বভৃত্যঋষিবাক্যমৃতং বিধাতুম্ ॥

ৰগং প্রগৃহ্য যদবোচদসদ্ধিধিৎসু-

স্বামীশ্বরো মদপরোবতুকংহরামি॥২৯॥

অনুবাদঃ হে ভগবান, হে চিন্ময় গুণের অন্তহীন উৎস, আপনি আমার পিতা হিরণ্যকশিপুকে বধ করে তাঁর খণ্ণ থেকে আমাকে রক্ষা করেছেন। তিনি অত্যন্ত ক্রুদ্ধভাবে বলেছিলেন, আমি এখন তোর দেহ থেকে তোর মস্তক ছিন্ন করব। আমি ব্যতীত অন্য কোন ঈশ্বর যদি থাকে তা হলে সে তোকে রক্ষা করুক।তাই আমি মনে করি যে, আপনার ভক্তের বাণীর সত্যতা প্রমাণ করার জন্য আপনি আমাকে রক্ষা করেছেন এবং আমার পিতাকে বধ করেছেন। এই ছাড়া অন্য কোন কারণ নেই।

 

একস্ত্বমেব জগদেতমমুষ্য যত্ ত্ব-

মাদ্যস্তয়োঃ পৃথগবস্যসি মধ্যতশ্চ ৷

সৃষ্ট্বা গুণব্যতিকরং নিজমায়য়েদং

নানেব তৈরবসিতস্তদনুপ্রবিষ্টঃ ॥ ৩০ ॥

অনুবাদঃ হে ভগবান, আপনি নিজেকে সমগ্র জগৎরূপে প্রকাশিত করেন, কারণ সৃষ্টির পূর্বে আপনি ছিলেন, সৃষ্টির পরে আপনি থাকেন, এবং আদি ও অন্তের মধ্যবর্তীঅবস্থায় আপনি পালন করেন। তা সবই প্রকৃতির তিনটি গুণের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে আপনার বহিরঙ্গা শক্তির দ্বারা সম্পাদিত হয়। অতএব অন্তরে এবং বাইরে যা কিছু বিরাজ করে, তা সবই আপনি।

 

ত্বং বা ইদং সদসদীশ ভাংস্ততোন্যো

মায়া যদাত্মপরবুদ্ধিরিয়ং হ্যপার্থা।

যদ্ যস্য জন্ম নিধনং স্থিতিরীক্ষণং চ

তদ্‌ বৈতদেব বসুকালবদষ্টিতর্বোঃ ॥ ৩১ ॥

অনুবাদঃ হে ভগবান, হে পরমেশ্বর, সমগ্র জড় সৃষ্টির কারণ আপনি, এবং এই জড় সৃষ্টি আপনারই শক্তির পরিণাম। যদিও সমগ্র জড় জগৎ আপনার থেকেই প্রকাশিত তবুও আপনি তা থেকে ভিন্ন। 'আমার এবং তোমার ধারণা তা অবশ্যই মিথ্যা মায়া, কারণ প্রতিটি বস্তুই আপনার থেকে উদ্ভূত হওয়ার ফলে আপনার থেকে ভিন্ন নয়। বস্তুতপক্ষে জড় জগৎ আপনার থেকে অভিন্ন, এবং তার বিনাশও আপনারই দ্বারা সাধিত হয়। আপনার সঙ্গে আপনার সৃষ্টির সম্পর্ক বীজ এবং বৃক্ষ, অথবা সূক্ষ্ম কারণ এবং স্কুল প্রকাশের মতো।

 

নাস্যেদমাত্মনি জগদ বিলয়াসুমধ্যে

শেষেত্মনা নিজসুখানুভবো নিরীহঃ ।

যোগেন মীলিতদ্‌গাত্মনিপীতনিদ্র-

স্তর্ষে স্থিতো ন তু তমো ন গুণাংশ্চ যুক্ষে ॥৩২

 

অনুবাদঃ হে পরমেশ্বর ভগবান, আপনি প্রলয়ের পর আপনার সৃজনী শক্তিকে আপনার মধ্যে রাখেন এবং তখন মনে হয় যেন আপনি অর্ধ-নিমীলিত নেত্রে নিদ্রামগ্ন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আপনি সাধারণ মানুষের মতো নিদ্রা যান না, কারণ আপনি সর্বদাই জড় সৃষ্টির অতীত। তুরীয় অবস্থায় আপনি চিন্ময় আনন্দ অনুভব করেন। কারণোদকশায়ী বিষ্ণুরূপে আপনি এইভাবে জড়া প্রকৃতিকে স্পর্শ না করে আপনার চিন্ময় স্থিতিতে অবস্থান করেন। আপনাকে নিদ্রিত বলে মনে হলেও, এই নিদ্রা অবিদ্যাজনিত নিদ্রা থেকে ভিন্ন।

 

তস্যৈব তে বপুরিদং নিজকালশক্ত্যা

সঞ্চোদিতপ্রকৃতিধর্মণ আত্মগূঢ়ম্ ।

অন্তসানস্তশয়নাদ বিরমসমাধে-

নাভেরভূৎ স্বকণিকাৰ্টৰন্মহাব্জম্ ৷৷ ৩৩ ৷৷

অনুবাদঃ এই বিশাল জড় জগৎ আপনারই শরীর। আপনার কাল শক্তির দ্বারা প্রকৃতি ক্ষোভিত হয়, এবং তার ফলে প্রকৃতির তিনটি গুণ প্রকাশিত হয়। আপনি তখন অনন্তশেষের শয্যা থেকে জেগে ওঠেন এবং আপনার নাভি থেকে একটি চিন্ময় বীজ উৎপন্ন হয়। এই বীজ থেকে বিশাল ব্রহ্মাণ্ড প্রকাশকারী পদ্ম উদ্ভূত হয়, ঠিক যেমন একটি ক্ষুদ্র বীজ থেকে এক বিশাল বটবৃক্ষের জন্ম হয়।

 

তৎসম্ভবঃ কবিরতোন্যদপশ্যমান-

স্ত্বাং বীজমাত্মনি ততং স বহির্বিচিন্ত্য ।

নাবিন্দদব্দশতমপ্সু নিমজ্জমানো

জাতেঙ্কুরেকথমুহোপলভেতবীজম্৷৷৩৪

অনুবাদঃ সেই মহাপদ্ম থেকে উৎপন্ন ব্রহ্মা সেই পদ্ম ছাড়া অন্য কিছু দেখতে পাননি। তাই, আপনাকে বাইরে অবস্থিত বলে মনে করে, ব্রহ্মা সেই জলে নিমগ্ন হয়ে শতবর্ষব্যাপী সেই পদ্মের উৎসের অন্বেষণ করেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি আপনাকে খুঁজে পাননি, কারণ বীজ যখন অঙ্কুরিত হয়, তখন আর সেই বীজ দেখা যায় না।

 

 

 

স ত্বাত্মযোনিরতিবিস্মিত আশ্রিতোহব্জং

কালেন তীব্রতপসা পরিশুদ্ধভাবঃ ।

ত্বামাত্মনীশ ভুবি গন্ধমিবাতিসূক্ষ্মং

ভূতেন্দ্রিয়াশয়ময়ে বিততং দদর্শ ॥ ৩৫ ॥

 

অনুবাদঃ সেই আত্মযোনি ব্রহ্মা অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে সেই পদ্মকে আশ্রয় করে বহু শত বৎসর কঠোর তপস্যা করার ফলে পবিত্র হয়ে সর্বকারণের পরম কারণস্বরূপ ভগবানকে দর্শন করেছিলেন। পৃথিবীতে যেমন গন্ধ অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ব্যাপ্ত থাকে, তেমনই তাঁর নিজের শরীরে এবং ইন্দ্রিয়ে তিনি ভগবানকে ব্যাপ্ত দেখেছিলেন।

 

এবংসহস্রবদনাঘিশিরঃকরোরু-

নাসাদ্যকর্ণনয়নাভরণায়ুধাঢ্যম্ ।

মায়াময়ং সদুপলক্ষিতসন্নিবেশং

দৃষ্ট্বা মহাপুরুষমাপ মুদং বিরিঞ্চঃ ৷৷ ৩৬ ৷৷

অনুবাদঃ ব্রহ্মা তখন সহস্র সহস্র বদন, চরণ, মস্তক, হস্ত, ঊরু, নাসিকা, কর্ণ ও নয়ন সমন্বিত আপনাকে দেখেছিলেন। আপনি সুন্দর অলঙ্কার এবং অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত ছিলেন। পাতাললোকে বিস্তৃত পদ সমন্বিত, চিন্ময় লক্ষণযুক্ত আপনার বিষ্ণুরূপ দর্শন করে ব্রহ্মা দিব্য আনন্দ লাভ করেছিলেন।

 

তস্মৈ ভবান হয়শিরস্তনুবং হি বিভ্রদ্‌

বেদদ্রুহাবতিবলৌ মধুকৈটভাখ্যৌ ৷

হত্বানয়চ্ছুতিগণাংশ্চ রজস্তমশ্চ

সত্ত্বং তব প্রিয়তমাং তনুমামনন্তি ৷৷ ৩৭ ৷৷

অনুবাদঃ হে ভগবান, আপনি হয়গ্রীবরূপে আবির্ভূত হয়ে রজ এবং তমোগুণের প্রতীক মধু এবং কৈটভ নামক অসুরদের সংহার করে ব্রহ্মাকে বৈদিক জ্ঞান প্রদান করেছিলেন। সেই কারণে সমস্ত ঋষিরা আপনার রূপকে জড়াতীত শুদ্ধ সত্ত্বময় বলে বর্ণনা করেন।

 

ইত্থং নৃতির্যগৃষিদেবঝষাবতারৈ-

লোকান্ বিভাবয়সি হংসি জগৎপ্রতীপান্ ।

ধর্মং মহাপুরুষ পাসি যুগানুবৃত্তং

ছন্নঃ কলৌ যদভবস্ত্রিযুগোথসত্বম্৷৷৩৮॥

অনুবাদঃ হে ভগবান্, এইভাবে আপনি নর, পশু, ঋষি, দেবতা, মৎস্য অথবা কূর্মরূপে অবতরণ করে সমগ্র জগৎ পালন করেন এবং অসুরদের সংহার করেন। হে ভগবান, আপনি যুগ অনুসারে ধর্মকে রক্ষা করেন। কিন্তু কলিযুগে আপনি আপনার ভগবত্তা প্রকাশ করেন না, তাই আপনাকে ত্রিযুগ বলা হয়।

 

নৈতন্মনস্তব কথাসু বিকুণ্ঠনাথ

সম্প্রীয়তে দুরিতদুষ্টমসাধু তীব্রম্ ।

কামাতুরং হর্ষশোকভয়ৈষণার্তং

তস্মিন্ কথং তব গতিং বিমৃশামি দীনঃ৷৷ ৩৯ ৷৷

অনুবাদঃ হে বৈকুণ্ঠনাথ, আমার পাপপূর্ণ কামাতুর মন হর্ষ, শোক, ভয় এবং ধন লাভের বাসনায় পূর্ণ। তার ফলে তা অত্যন্ত কলুষিত এবং আপনার কথায় প্রীতি লাভ করে না। সুতরাং দীন এবং পতিত আমি কিভাবে আপনার তত্ত্ব আলোচনা করতে সক্ষম হব?

 

জিহ্বৈকতোচ্যুতবিকৰ্ষতিমাবিতৃপ্তা

শিশ্লোন্যতত্ত্বগুদরংশ্রবণংকুতশ্চিৎ ।

ঘ্রাণোন্যতশ্চপলদৃক্ক্বচকর্মশক্তি-

বহঃ সপত্ন্য ইব গেহপতিং লুনস্তি ৷৷ ৪০

অনুবাদঃ হে অচ্যুত, আমার অবস্থা বহু সপত্নীর স্বামীর মতো, যারা তাকে তাদের নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। জিহ্বা সুস্বাদু আহারের প্রতি, উপস্থ সুন্দরী রমণীর প্রতি, ত্বক কোমল বস্তুর প্রতি, উদর ভোজনের প্রতি, এবং কর্ণ গ্রাম্য সঙ্গীতের প্রতি, নাক ঘ্রাণের প্রতি, চঞ্চল দৃষ্টি ইন্দ্রিয় তৃপ্তিদায়ক সুন্দর দৃশ্যের প্রতি, এবং কর্মেন্দ্রিয় বিভিন্ন কর্মের প্রতি আমাকে আকর্ষণ করছে। এইভাবে বিভিন্ন দিকে আকৃষ্ট হয়ে আমি বিনাশ প্রাপ্ত হচ্ছি।

 

এবং স্বকর্মপতিতং ভববৈতরণ্যা-

মন্যোন্যজন্মমরণাশনভীতভীতম্ ॥

পশ্যঞ্জনং স্বপরবিগ্রহবৈরমৈত্রং

হস্তেতি পারচর পীপৃহি মূঢ়মদ্য ৷৷ ৪১ ৷৷

অনুবাদঃ হে ভগবান, আপনি সর্বদাই মৃত্যুনদীর অপর পারে চিন্ময়ভাবে অবস্থিত, কিন্তু আমরা আমাদের পাপকর্মের ফলে সেই নদীর এই পারে দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করছি। প্রকৃতপক্ষে আমরা এই নদীতে পতিত হয়ে বার বার জন্ম-মৃত্যুর যন্ত্রণা ভোগ করছি এবং অত্যন্ত ঘৃণ্য বস্তুসমূহ আহার করছি। দয়া করে আপনি আমাদেরপ্রতি দৃষ্টিপাত করুনকেবল আমার প্রতিই নয়, অন্য যারা কষ্টভোগ করছে তাদের প্রতিওএবং আপনার অহৈতুকী কৃপা ও অনুকম্পার প্রভাবে আমাদের উদ্ধার করুন এবং পালন করুন।

 

কো ন্বত্র তেখিলগুরোভগবন্প্রয়াস

উত্তারণেস্যভবসম্ভবলোপহেতোঃ।

মূঢ়েষুবৈমহদনুগ্রহআর্দ্রবন্ধো

কিং তেন তে প্রিয়জনাননুসেবতাং নঃ॥৪২৷

অনুবাদঃ হে পরমেশ্বর ভগবান, হে সমগ্র জগতের আদি গুরু, আপনি সারা জগতের সমস্ত কার্যের পরিচালক, অতএব আপনার পক্ষে আপনার সেবায় যুক্ত অধঃপতিত জীবদের উদ্ধার করা এমন কি পরিশ্রম? আপনি সমস্ত আর্তদের বন্ধু, এবং মহতের কর্তব্য হচ্ছে মূর্খদের প্রতি কৃপা প্রদর্শন করা। তাই আমি মনে করি যে, আপনার সেবায় যুক্ত আমাদের মতো ব্যক্তিদের প্রতি আপনি আপনার অহৈতুকী কৃপা প্রদর্শন করবেন।

 

নৈবোদ্বিজে পর দুরত্যয়বৈতরণ্যা

স্ত্বদ্বীর্যগায়নমহামৃতমগ্নচিত্তঃ ।

শোচে ততো বিমুখচেতস ইন্দ্রিয়ার্থ-

মায়াসুখায় ভরমুদ্বহতো বিমূঢ়ান্ ৷৷ ৪৩ ৷৷

অনুবাদঃ হে সর্বোত্তম, আপনার গুণগান এবং কার্যকলাপের চিন্তায় সম্পূর্ণরূপে মগ্ন থাকার ফলে আমি সংসার ভয়ে ভীত নই। আমার একমাত্র চিন্তা কেবল সেই সমস্ত মূর্খ এবং দুষ্কৃতকারীদের জন্য, যারা জড় সুখ ভোগের জন্য এবং তাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিপালনের জন্য বিশাল পরিকল্পনা করে।

 

প্রায়েণ দেব মুনয়ঃ স্ববিমুক্তিকামা

মৌনং চরস্তি বিজনে ন পরার্থনিষ্ঠাঃ ।

নৈতান্ বিহায় কৃপণান্ বিমুমুক্ষ একো

নান্যং ত্বদস্য শরণং ভ্রমতোনুপশ্যে॥৪৪॥

অনুবাদঃ হে ভগবান নৃসিংহদেব, মুনিরা কেবল তাদের নিজেদের মুক্তির জন্য আগ্রহী। তারা বড় বড় নগর এবং শহর পরিত্যাগপূর্বক মৌন ব্রত অবলম্বন করে ধ্যান করার জন্য হিমালয়ে অথবা অরণ্যে গমন করেন। তারা অন্যদের উদ্ধারের জন্য আগ্রহী নন। কিন্তু আমি, এই সমস্ত মূর্খদের ফেলে রেখে নিজের মুক্তি কামনা করি না। আমি জানি যে কৃষ্ণভক্তি ব্যতীত, এবং আপনার শ্রীপাদপদ্মের শরণ গ্রহণ ব্যতীত কেউই কখনও সুখী হতে পারে না। তাই আমি তাদের আপনার শ্রীপাদপদ্মের আশ্রয়ে নিয়ে আসতে চাই।

 

যন্মৈথুনাদি গৃহমেধিসুখং হি তুচ্ছং

কণ্ডুয়নেন করয়োরিব দুঃখদুঃখম্ ৷

তৃপ্যন্তি নেহ কৃপণা বহুদুঃখভাজঃ

কণ্ডুতিবন্মনসিজং বিষহেত ধীরঃ ॥ ৪৫ ॥

অনুবাদঃ চুলকানির উপশমের জন্য দুই হাতের ঘর্ষণের সঙ্গে মৈথুনের তুলনা করা হয়। গৃহমেধী বা আধ্যাত্মিক জ্ঞানরহিত তথাকথিত গৃহস্থেরা মনে করে যে, এই চুলকানিটিই সর্বশ্রেষ্ঠ সুখ, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা হচ্ছে সমস্ত দুঃখের উৎস। কৃপণ অথবা মূর্খেরা, যারা ব্রাহ্মণের ঠিক বিপরীত, বার বার ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের ফলেও তারা কখনও তৃপ্ত হয় না। কিন্তু যাঁরা ধীর, তারা এই চুলকানি সহ্য করেন এবং তার ফলে তাদের মূঢ়দের মতো দুঃখভোগ করতে হয় না।

মৌনব্রতশ্ৰুততপোধ্যয়নস্বধর্ম-

ব্যাখ্যারহোজপসমাধয় আপবর্গ্যাঃ ।

প্রায়ঃ পরং পুরুষ তে ত্বজিতেন্দ্রিয়াণাং

বার্তা ভবস্তুত ন বাত্র তু দাম্ভিকানাম্ ৷৪৬

অনুবাদঃ হে পরমেশ্বর ভগবান, মুক্তির মার্গে দশটি উপায়মৌন, ব্রত, বৈদিক জ্ঞান আহরণ, তপস্যা, বৈদিক শাস্ত্র অধ্যয়ন, বর্ণাশ্রম ধর্ম আচরণ, ধর্ম শাস্ত্রের ব্যাখ্যা, নির্জন স্থানে বাস, মন্ত্র জপ এবং সমাধি। মুক্তির এই সমস্ত উপায়গুলি অজিতেন্দ্রিয় ব্যক্তিদের পেশাদারি অভ্যাস এবং জীবিকা। যেহেতু এই ধরনের মানুষেরা অত্যন্ত দাস্তিক, তাই এই উপায়গুলি সফল নাও হতে পারে।

 

রূপে ইমে সদসতী তব বেদসৃষ্টে

বীজাঙ্কুরাবিব ন চান্যদরূপকস্য ।

যুক্তাঃ সমক্ষমুভয়ত্র বিচক্ষন্তে ত্বাং

যোগেন বহ্নিমিব দারুষু নান্যতঃ স্যাৎ ॥৪৭॥

অনুবাদঃ প্রামাণিক বৈদিক জ্ঞানের দ্বারা দেখা যায় যে, জড় জগতে কার্য এবং কারণের রূপ ভগবানেরই রূপ, কারণ জড় জগৎ তারই শক্তি। কার্য এবং কারণ উভয়ই

ভগবানের শক্তি ব্যতীত অন্য কিছু নয়। তাই, হে ভগবান, জ্ঞানী ব্যক্তি যেমন কার্য এবং কারণের বিচার করে দেখতে পান কিভাবে কাঠের মধ্যে অগ্নি ব্যাপ্ত, তেমনই ভগবানের প্রেমময়ী সেবায় যুক্ত ভক্তও হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন যে, আপনিই কার্য এবং কারণ।

 

ত্বং বায়ুরগ্লিরবনির্বিয়দম্বুমাত্রাঃ

প্রাণেন্দ্রিয়াণি হৃদয়ং চিদনুগ্রহশ্চ ।

সর্বং ত্বমেব সগুণো বিগুণশ্চ ভূমন্

নান্যত্ ত্বদস্ত্যপি মনোবচসা নিরুক্তম্ ॥ ৪৮ ॥

অনুবাদঃ হে পরমেশ্বর ভগবান, আপনি বায়ু, পৃথিবী, আণ্ডন, আকাশ, জল, তন্মাত্র প্রাণবায়ু, পঞ্চেন্দ্রিয়, মন, চেতনা এবং অহঙ্কার। বস্তুতপক্ষে, সূক্ষ্ম এবং স্থূল, সব কিছুই আপনি। মন এবং বাক্যের দ্বারা প্রকাশিত কোন বস্তুই আপনার থেকে ভিন্ন নয়।

 

নৈতে গুণা ন গুণিনো মহদাদয়ো যে

সর্বে মনঃপ্রভৃতয়ঃ সহদেবমর্ত্যাঃ ।

আদ্যস্তবস্তু উরুগায় বিদন্তি হি ত্বা-

মেবং বিমশ্য সুধিয়ো বিরমন্তি শব্দাৎ ॥ ৪৯ ॥

অনুবাদঃ জড়া প্রকৃতির তিন গুণ (সত্ত্ব, রজ এবং তমোগুণ), এই তিন গুণের অধিষ্ঠাত্ব দেবতাগণ, পঞ্চ স্থূল তত্ত্ব, মন, দেবতা, মানুষ, কেউই আপনাকে জানতে পারে না, কারণ তারা সকলেই জন্ম-মৃত্যুর অধীন। সেই কথা বিবেচনা করে, প্রকৃত জ্ঞানবান ব্যক্তিরা ভগবদ্ভুক্তির পন্থা অবলম্বন করেন। এই প্রকার জ্ঞানবান ব্যক্তিরা বেদ অধ্যয়ন থেকে বিরত হয়ে ভগবদ্ভক্তিতে যুক্ত হন।

 

তৎ তেঽর্হত্তমনমঃস্তুতিকর্মপূজাঃ

কর্মস্মৃতিশ্চরণয়োঃশ্রবণংকথায়াম্॥

সংসেবয়াত্বয়ি বিনেতি ষড়ঙ্গয়া কিং

ভক্তিং জনঃ পরমহংসগতৌ লভেত ॥ ৫॥

অনুবাদঃ অতএব, হে পূজ্যতম ভগবান, আপনাকে আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি, কারণ স্তব, কর্মফল অর্পণ, পূজা, কর্ম-সমর্পণ, চরণযুগল স্মরণ এবং লীলা শ্রবণএই ষড়ঙ্গ সেবা ব্যতীত কে পরমহংসগণের প্রাপ্য আপনার প্রতি ভক্তি লাভ করতে পারে?

 

শ্রীনারদ উবাচ

এতাবদ্বর্ণিতগুণো ভক্ত্যা ভক্তেন নিৰ্গুণঃ ।

প্রহ্লাদং প্ৰণতং প্রীতো যতমন্যুরভাষত ॥ ৫১ ॥

অনুবাদঃ দেবর্ষি নারদ বললেনএইভাবে ভক্ত প্রহ্লাদ মহারাজের অপ্রাকৃত প্রার্থনা শ্রবণ করে ভগবান নৃসিংহদেব তাঁর ক্রোধ সম্বরণ করেছিলেন, এবং তাঁর শ্রীপাদপদ্মে প্রণত প্রহ্লাদের প্রতি অত্যন্ত প্রসন্ন হয়ে তাঁকে বলেছিলেন।

শ্রীভগবানুবাচ

প্রহ্লাদ ভদ্র ভদ্রং তে প্রীতোহংতেসুরোত্তম।

বরংবৃণীষ্বাভিমতংকামপূরোস্মাহংনৃণাম্॥৫২॥

অনুবাদঃ পরমেশ্বর ভগবান বললেন-হে ভদ্র প্রহ্লাদ, তোমার মঙ্গল হোক। হে অসুরোত্তম, তোমার প্রতি আমি অত্যন্ত প্রসন্ন হয়েছি। আমি সমস্ত মানুষের বাসনা পূর্ণ করি, সুতরাং তুমি আমার কাছে তোমার অভীষ্ট বর প্রার্থনা কর।

  

মামপ্রীণত আয়ুষ্মন্ দর্শনং দুর্লভং হি মে ৷

দৃষ্ট্বা মাং ন পুনর্জন্তুরাত্মানং তপ্তমহতি ॥ ৫৩ ॥

অনুবাদঃ হে প্রহ্লাদ, তুমি দীর্ঘজীবী হও। আমাকে প্রসন্ন না করে কেউই আমাকে জানতে পারে না বা উপলব্ধি করতে পারে না, কিন্তু যে আমাকে দর্শন করেছে অথবা আমাকে প্রসন্ন করেছে, তাকে আর তার নিজের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য শোর করতে হয় না।

 

প্রীণন্তি হাথ মাং ধীরাঃ সর্বভাবেন সাধবঃ ।

শ্রেয়স্কামা মহাভাগ সর্বাসামাশিষাং পতিম্ ॥ ৫৪ ॥

 

অনুবাদঃ হে প্ৰহ্লাদ, তুমি মহা ভাগ্যবান। যাঁরা অত্যন্ত জ্ঞানী এবং উন্নত, তারা সর্বতোভাবে আমার প্রসন্নতা বিধানের চেষ্টা করেন, কারণ আমিই সকলের সমস্ত বাসনা পূর্ণ করতে পারি।

  

 

শ্রীনারদ উবাচ

এবং প্রলোভ্যমানোহপি বরৈলোকপ্রলোভনৈঃ ।

একাস্তিত্বাদ ভগবতি নৈচ্ছৎ তানসুরোত্তমঃ ॥ ৫৫ ॥

অনুবাদঃ নারদ মুনি বললেনপ্রহ্লাদ মহারাজ ছিলেন অসুরকুলের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। অসুরেরা সর্বদা জড় সুখের বাসনা করে। কিন্তু ভগবান যদিও এই জগতের সমস্ত সুখ ভোগ করার বর প্রদান করে তাঁকে প্রলোভিত করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শুদ্ধ কৃষ্ণভক্ত হওয়ার ফলে প্রহ্লাদ মহারাজ তার ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের জন্য কোন কিছুই গ্রহণ করতে চাননি।

কোন মন্তব্য নেই

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.