বৈকুন্ঠ লোক প্রাপ্তির জন্য আমার যে লালসা জন্মাল
শ্রীগোপকুমার বললেন-হে ব্রাহ্মণ ! বৈকুন্ঠ লোক প্রাপ্তির জন্য আমার যে লালসা জন্মাল, সেই মহালালসা রূপ চিন্তাসাগরের তরঙ্গ আমাকে অতিশয় নৃত্য করাচ্ছে। আমি কিভাবে তা প্রাপ্ত হতে পারি কৃপা পূর্বক আমাকে বলুন ।
শ্রীমহাদেব বললেন হে বৈষ্ণব । তোমার ন্যায় আমিও পার্বতীর সহিত সেই বৈকুন্ঠলোকে সর্বদা বাস করার ইচ্ছা করি। এই বৈকুণ্ঠ বাসের জন্য মুক্তগণও প্রার্থনা করেন, যার মধ্যে ভৃগু-আদি ব্রহ্মারপুত্র, স্বয়ং ব্রহ্মা এবং আমিও সাধনা করছি, কিন্তু সেই বৈকুন্ঠলোক কি অতি দুর্লভ ? বিচার করে দেথা যাক।
যে জীব (মানুষ) নিস্কাম বিশুদ্ধ স্বধর্মে পরানিষ্ঠা প্রাপ্ত হন তাঁর প্রতি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের যেরূপ কৃপা হয়, তার শতগুণ কৃপা হলে সেই জীব (মানুষ) ব্রহ্মত্ব লাভ করে। আবার তার (ব্রহ্মত্ব লাভের) চেয়ে শতগুণ কৃপা লাভ করলে সেই জীব আমার অর্থাৎ শিবত্ব প্রাপ্ত হন। আবার আমার প্রতি ভগবানের যে অনুগ্রহ তার চেয়ে শতগুণ কৃপা বেশি হলে তবেই বৈকুন্ঠ লোকে গমন করা যায়।
অর্থাৎ ব্রহ্মার ব্রহ্মলোক, শিবের মহেশ ধাম হতে বৈকুন্ঠবাসিগণের মাহাত্ম্য অধিক।
তোমার এই স্থানে থেকে যে কৃষ্ণ দর্শনের লালসা হয়েছে তা কেবল সদগুরুর কৃপায় সম্ভবপর হয়েছে। গৌরদশে জয়ন্ত নামক একজন উত্তম মাথুরব্রাহ্মণ গঙ্গাতীরে জন্মগ্রহণ করেছেন। তনি কৃষ্ণের অবতার এবং তোমার গুরু। তুমি যদি বৈকুন্ঠ বাস ইচ্ছাকর তবে তোমার মন্ত্রজপাদি সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করে প্রেমের সহিত নবধা ভক্তির আচরণ কর।
সেই নবধা ভক্তির বোধক ভাগবতাদি শ্রাস্ত্র অনুশীলন কর, আর তাতে নিত্য ভগবানের লীলা কথা প্রেমের সহিত শ্রবণ কর।
সেই নবধা ভক্তির যে কোন একটি, কর্ম- জ্ঞানাদি সকল সাধন অপেক্ষা শ্রেষ্ট বলে জেনো। যদিও এর একটি ভক্তাঙ্গ নিষ্টার সহিত পালন করলে শ্রীকৃষ্ণ পাদপদ্মে প্রেম লাভ হয়। তথাপি বৈকুন্ঠ প্রাপ্তির বিরোধী কামরূপ হৃদরোগ পরিহারের নিমিত্তে প্রেমের সহিত নবধা ভক্তির অনুষ্ঠান করা উচিত।
নবধা ভক্তি যে যে স্থানে আচরিত হয় সেই সেই স্থানই বৈকুন্ঠ এবং সেই সেই স্থানেই প্রভু বৈকুন্ঠ নাথ বাস করেন, তথাপি সেই সেই স্থানে সাক্ষাৎভাবে যেহেতু সর্বদা বৈকুন্ঠ লোকের ন্যায় ভগবান দৃষ্ট হ’ন না, সেজন্যই ভক্তগণ ভক্তির মাধ্যমে বৈকুন্ঠ লোকে গমনের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।
জেনে রেখো ভক্তি কোন নিজ ইন্দ্রিয়, মন ও শরীরের চেষ্টাসাধ্য কোন বিষয় নয়।
কৃষ্ণের প্রীতি সাধনে নিত্য, সত্য ও নিবিড় আনন্দস্বরূপ যে ভক্তি হচ্ছে তা ত্রিগুণাতীত।
সেই ভক্তি ভক্তের আনন্দ বিধানের জন্য সৎ-চিৎ-আনন্দস্বরূপে শুদ্ধ জীবতত্ত্বে প্রকাশমান হয়ে বহুরূপ ক্রীড়া করে থাকে ।
অন্য কর্মের ন্যায় ভক্তিকে কর্ম বলে মনে করা উচিত নয়। কদাচিত প্রসঙ্গ ক্রমে ভক্তি যে কর্ম বলে জল্পিত হয় তা বাহ্যদৃষ্টিতে মাত্র তত্ত্বত নয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে বৈকুন্ঠের অপ্রাকৃত দেহকেও পাঞ্চভৌতিক দেহের ন্যায় ‘দেহ’ শব্দে অভিহিত করা হল, তদ্রুপ ভক্তি কর্ম হতে ভিন্ন হলেও বাহ্যদৃষ্টিতে কর্ম বলে আরোপিত হয়।
ভক্ত
বৈকুন্ঠ বা অন্য যে
কোন স্থানেই বাস করুণ না কেন, শুদ্ধভক্তি
নিজের সৎ চিৎ আনন্দ
স্বরূপরুপে ভক্তের দেহ, ইন্দ্রিয় ও আত্মাকে স্বয়ংই
সংযোজিত করে। অর্থাৎ ভক্তির স্ফুর্তি হলে পাঞ্চভৌতিক দেহ ধারীগণের মধ্যেও সতত সৎ চিৎ আনন্দ
স্বরূপতা পর্যবষিত হয় ফলে তা
দৃশ্যমান অবলোকন হয়। যেস্থানে
প্রীতির সহিত ভক্তের ভক্তির
অনুশীলন হয় সে স্থানই
বৈকুন্ঠ।
কোন মন্তব্য নেই