পরমেশ্বর ভগবান তার বিভিন্ন শক্তির মাধ্যমে নিরন্তর তার অপ্রাকৃত লীলা বিলাসে যুক্ত

 



পরমেশ্বর ভগবান তার বিভিন্ন শক্তির মাধ্যমে নিরন্তর তার অপ্রাকৃত লীলা বিলাসে যুক্ত ভগবানের কৃপাতেই কেবল ব্রহ্মার মতো ভক্ত অথবা পরম্পরা ধারায় যুক্ত কোন শুদ্ধভক্ত তা হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন।

 

জ্ঞানং পরম গুহং মে যদবিজ্ঞানসমন্বিতং।

সরহস্যনং তদঙ্গং গৃহাণ গদিতং ময়া।।

 

শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মাকে বলছেন- শান্ত্রে আমার সম্বন্ধে যে জ্ঞান বর্ণিত হয়েছে তা অত্যন্ত গোপনীয়, ভক্তি যত্ন সহকারে অনুশীলন না করলে তা কখনো উপলদ্ধি হবে না। তাই ভক্তির যে অঙ্গসমূহ আমি বিশ্লেষন করছি তা তুমি পরম যত্ন সহকারে গ্রহণ কর।

 

ব্রহ্মাকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চারটি শ্লোকের মাধ্যমে ভাগবতমের জ্ঞান প্রদান করেছিলেন যাকে চর্তুশ্লোকী ভাগবত বলা হয়। এই জগতে ব্রহ্মা হচ্ছেন ভগবানের শ্রেষ্ঠ ভক্ত। শ্রীমদ্ভাগবদের জ্ঞান উপলদ্ধির জন্য ব্রহ্মার মতো ব্যক্তির এই চারটি শ্লোকই যযেষ্ট শুধু আমাদের মতো না বোঝা মুর্খদের জন্যই ১৮০০০ (আঠার হাজার) শ্লোক

 

শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্মামী প্রভুপাদের তাৎপর্যে তো বৈদিক শাস্ত্রের অসংখ্য শ্লোকেরই উল্লেখ রয়েছে কিন্তু এত শ্লোক পড়েও আমাদের চৌর্যবৃত্তি অসৎ ভাবনা দূরিভূত হয় না। কেন হয় না ?

 পারমার্থিক বিষয়ে আমাদের জিজ্ঞাসু না হওয়ায় কি এর মূল কারণ ?

 ভগবানের প্রতি ব্রহ্মার কিন্তু পারমর্থিক বিষয়ক প্রশ্ন ছিল। তিনি ভগবানকেই জিজ্ঞাসা করছিলেন-

জড় চিন্ময় উভয় স্তরে হে ভগবান, আপনার রূপ কি একই রকম ?

 হে ভগবান, আপনার যে বিভিন্ন শক্তি তা কিভাবে ক্রিয়া করে ?

 আপনার সেই বিভিন্ন শক্তিতে আপনি কিভাবে লীলা বিলাস করেন ?

 ব্রহ্মা হিসাবে আমার কর্তব্য কর্ম কি ? কিভাবে আমি তা সম্পাদন করব ?

 

ভগবানকে জানার জন্য ভগবানের অহৈতুকী কৃপা প্রয়োজন, এই অহৈতুকি কৃপা দ্বারা ব্রহ্মার মতো কোন শুদ্ধভক্তের হৃদয়ে ভগবান প্রকাশিত হয়ে বৈদিক জ্ঞান সঞ্চার করেন। কৃপাপূর্বক তাই ব্রহ্মাকে ভগবান বলছেন-

আমার চিন্ময় অস্তিত্ব, বর্ণ, গুণাবলী এবং কার্যকলাপ বাস্তব উপলদ্ধির ভিত্তিতে তোমার হৃদয়ে প্রকাশিত হোক।

 

ভগবান আরও বলছেন-

 

অহমেবাসমেবাগ্রে নান্যদ যৎ সদসৎপরম্।

পশ্চাদহং যোহবশিষ্যেত সোহস্ম্যহম।।

 

হে ব্রহ্মা সৃষ্টির পূর্বে পরমেশ্বর ভগবান রূপে একমাত্র আমিই ছিলাম, তখন আমি ছাড়া আর কেউ ছিল না। সৃষ্টির পরেও একমাত্র আমিই বর্তমান আছি, এবং প্রলয়ের পরও একমাত্র আমিই বর্তমান থাকব।

 

এই শ্লোকে অহম শব্দটি তিনবার উল্লেখ রয়েছে, যা দ্বারা ভগবান যে একজন সবিশেষ ব্যক্তি তা প্রকাশ পায়।

একমাত্র পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণই অতীত, বর্তমান ভবিষ্যতে ছিল, আছে থাকবে এর ভিত্তিতে ভগবানের নিত্যতাও প্রকাশ পায়।

 

তিনি বলছেন-আমি বৈকুন্ঠে যেমন ভগবান রূপে, জগতে সকলের হৃদয়ে পরমাত্মা রূপে, নির্দিষ্ট প্রয়োজনে মৎস্য, কুর্ম, বরাহ, বামনাদি বিভিন্ন অবতার রূপে বিরাজ করছি তেমনি সৃষ্টির কার্য (সৎ) কারণ (অসৎ) সকল কিছুই হচ্ছি আমি। সমস্ত সৃষ্টির একমাত্র আমি হচ্ছি শক্তিমান এই জগত আমার শক্তি থেকে সৃষ্ট বিধায় তা হচ্ছে আমার জড় রূপ।

 

শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর বলছেন ভগবানের সাথে আমরা সহ সমগ্র সৃষ্ট জীবের এই যে সম্বন্ধ তা হচ্ছে অচিন্ত্য ভেদাবেদ তত্ত্ব।

 

শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী এই চতুঃশ্লোকী ভাগবত সম্পর্কে বলছেন-

 

ভাগবতের সন্বন্ধ, অভিধেয়, প্রয়োজন।

চুতুঃশ্লোকীতে প্রকট তার করিয়াছে লক্ষণ।।

 

তত্ত্বজ্ঞানের ভিত্তিতে ভগবানের সাথে জীবের যে সম্বন্ধ তা চুতঃশ্লোকী ভগবতের প্রথম শ্লোকে ব্যখ্যা করা হয়েছে। এই সম্বন্ধজ্ঞানের সঠিক উপলদ্ধি না হওয়ার কারণেই কি আমাদের কৃষ্ণ ব্যতীত অন্য বিষয়ে তৃষ্ণা জাগে ?

 

কলিযুগ নামামৃতের যুগ হলেও বর্তমান কলিযুগে এই অসৎতৃষ্ণার মাত্রা আরও প্রকট হয়েছে এজন্য ব্রহ্মা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিকট হতে প্রাপ্ত সেই উপলদ্ধকৃত জ্ঞান হরিদাস ঠাকুর রূপে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণরূপী শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নিকট ব্যক্ত করে আমাদেরকে বুঝাচ্ছেন=

 

সমন্ধতত্ত্বের জ্ঞান যাবৎ না হয়।

তাবৎ সে নামাভাস জীবের আশ্রয়।।

 

সম্বন্ধ জ্ঞান সঠিক না হলে জীবের কখনো অসৎতৃষ্ণা দুরিভূত হবে না। আর এই অসৎতৃষ্ণা নিয়ে কখনো শুদ্ধ হরিনাম হয় না, যা হয় তা নামাভাস।

 

অসৎতৃষ্ণাযুক্ত গুরুকে তখনো সদগুরু বলা যায় না, সকল জীবই যে চিৎস্বরূপ উপলদ্ধি তাদের অসৎতৃষ্ণা হৃদয় দৌবর্ল্য অপরাধের ফলে ভগবানএই সম্বন্ধ জ্ঞান অনর্থরূপী মেঘ দ্বারা আচ্ছাদন করে রাখে।

 

অসৎতৃষ্ণা, হৃদয় দৌর্বল্য অপরাধ।

অনর্থ সব মেঘরূপে করে বাধ।।

 

কৃষ্ণানন্দ বিধান ছাড়া অন্য তৃষ্ণা দুরিভূত করতে সদগুরুর অধীনে নাম ভজনই একমাত্র আশ্রয়। আর যখন ভজনে নৈপুন্য আসবে তখনই একমাত্র কৃষ্ণদাস উপলদ্ধিতে অনর্থ রূপী মেঘ দুরিভূত হবে।

 

সাধক যদ্যাপি পায় সদগুরুর আশ্রয়।

ভজন নৈপুন্য মেঘ আদি দূর হয়।।

 

সুপ্রিয় গৌরভক্তবৃন্দ সদগুরুর অধীনে হরিনাম আশ্রয় না করার কারণেই কি জীব কৃষ্ণদাস তা জেনেও, কৃষ্ণের সর্বেশ্বরতা জেনেও বকধার্মিক তথাকথিত ক্ষমতালোভী, দখল বাণিজ্যবৃত্ত অবলম্বন দ্বারা গুরুবাদ প্রচারকারীরা তাদের অসৎতৃষ্ণা দুরিভূত করতে সমর্থ হচ্ছেন না ?

 

এরফলেই কি তারাআমি’ ‘আমারবুদ্ধিতে নিজ গুরু ভিন্ন অন্য গুরুদেব গুরুভাইদের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের নাম প্রচারে প্রতিবন্ধকতাসহ বিঘ্ন সৃষ্টি করেন ?

কোন মন্তব্য নেই

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.