একাদশী তিথিতে ব্রতোপবাস অবশ্য কর্ত্তব্য



পরম পবিত্রা এই তিথিতে ব্রতোপবাস সকল মানবের জন্য অবশ্য করণীয়। 

রটন্তীত পুরাণানি ভূয়োভূয়ো বরাননে।

ন ভোক্তব্যং ন ভোক্তব্যং সংপ্রাপ্তে হরিবাসরে ॥

“সমগ্র শাস্ত্রে ভূয়োভূয় ইহাই ঘোষিত হইয়াছে যে, হরিবাসর সমাগত হইলে কখনও কাহারও ভোজন করা উচিত নহে”- (পদ্ম পুরাণ)। কারণ -

 যানি কানি চ পাপানি ব্রহ্মহত্যাসমানি চ।

অন্নমাশ্রিত্য তিষ্ঠন্তি সংপ্রাপ্তে হরিবাসরে ॥

“উক্ত তিথি সমুপস্থিত হইলে ব্রহ্মহত্যাদি যাবৎ পাপ অন্নকে আশ্রয় করিয়া থাকে। সুতরাং হরিবাসরে ভোজন করিলে পাপ ভক্ষণই সার হয়”-(শ্রীনারদীয় পুরাণ)।


মাতৃহা পিতৃহা চৈব ভ্রাতৃহা গুরুহা তথা।

একাদশ্যান্ত যো ভূঙ্ক্তে বিষ্ণুলোকাচ্চ্যূতো ভবেৎ ॥   

     

“উক্ত দিনে আহার করিলে মাতৃঘাতী, পিতৃঘাতী, ভ্রাতৃঘাতী ও গুরুহন্তা-পাপীরূপে পরিগণিত হইতে হয় এবং বিষ্ণুলোক হইতে সে চিরকালই বিচ্যূত হইয়া থাকে”-(স্কন্ধ পুরাণ)।

 ব্রহ্মহত্যাদি পাপানাং কথঞ্চিন্নিস্কৃতির্ভবেৎ।

একাদশ্যান্তু যো ভূঙ্ক্তে নিস্কৃতিনাস্তি কুত্রচিৎ ॥

“ব্রহ্মহত্যাদি পাপসকল হইতে নিস্কৃতি-লাভ বরং সম্ভব, কিন্তু একাদশীতে ভোজন করিলে কোন অবস্থাতেই নিস্কৃতি নাই”-(বৃহন্নারদীয় পুরাণ)।

কেহ কেহ আবার মনে করিয়া থাকেন, নিজে একাদশীতে উপবাস করিয়া পুত্র-পরিজন কিংবা অতিথির সন্তোষ বিধানের জন্য তাহাদিগকে অন্নাদি ভোজন করিতে দিলে ক্ষতি নাই। কিন্তু পদ্ম পুরাণে দেবী পার্ব্বতীর প্রতি শিবঠাকুরের উক্তিতে দেখা যায় যে-

                         ভুক্সক্ষব ভুক্সেক্ষবতি যো ব্রƒয়াৎ সংপ্রাপ্তে হরিবাসরে।

                         গোব্রাহ্মণস্ত্রিয়শ্চাপি জহীহি বদতি ক্বচিৎ।

                         মদ্যং পিবেতি যে ব্রƒয়াৎ তেষামেব অধোগতি ॥

  “শ্রীহরিবাসরে পুত্র-পরিজন-বন্ধু-অতিথি প্রভৃতিকে আহারের জন্য বলা আর তাহাদিগকে গোবধ, বিপ্রহত্যা, স্ত্রীবধ ও সুরা পান করিবার জন্য অনুরোধ করা- একই কথা। ইহাদের সকলের সমান অধোগতি হইয়া থাকে”।

                         সপুত্রশ্চ সভার্য্যাশ্চ স্বজনৈর্ভক্তি-সংযুতঃ।

                         একাদশ্যামুপবসেৎ পক্ষয়োরুভয়োরপি ॥

বরং “উক্তদিনে পুত্র, ভার্য্যা এবং স্বজনগণের সহিত ভক্তি-সহকারে উপবাসীই থাকাই সকলের কর্ত্তব্য”(বিষ্ণুধর্ম্মোত্তর)।


শ্রীমন্মহাপ্রভু শচীমাতাকে বলিয়াছেন-

                           “একদিন মাতৃপদে করিয়া প্রণাম।

                            প্রভু কহে, মাতা মোরে দেহ এক দান ॥

                            মাতা বলে তাই দিব, তুমি যা মাগিবে।

                            প্রভু বলে,- একাদশীতে অন্ন না খাইবে ॥

                            শচী কহে,  না খাইব, ভালই কহিলা।

                            সেই হইতে একাদশী করিতে লাগিলা ॥”

                                                                 ( চৈঃ চঃ আদি ১৫/৮-১০)

স্বয়ং ভগবান শ্রীগৌরসুন্দর যখন তাঁহার নিজ জননীকে শ্রীএকাদশী-ব্রত পালনে বাধ্য করাইয়াছিলেন, তখন মরণশীল মানব আমাদের আর কি কথা, অতএব স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই এই ব্রতোপবাস করা অবশ্যই কর্ত্তব্য।

দেবপুরাধিপতি মহাভাগবত রুক্মাঙ্গদ রাজা তাঁহার হস্তীশালার সর্বপ্রধান হস্তীপৃষ্ঠে আরোহণ করিয়া ঢক্কা বাজাইতে বাজাইতে তাঁহার রাজ্য মধ্যে সর্বত্র এইরূপ ঘোষনা করিতেন-

                          অষ্টাবর্ষোহ্নধিকো মর্ত্ত্যােহ্যশীতি নৈব পুর্য্যতে।  

                          যো ভুঙ্তে মামকে রাষ্ট্রে বিষ্ণোরহনি পাপকৃত ॥

                          স মে বধ্যশ্চ নির্বাস্যো দেশতঃ কালতশ্চ মে।

                          এতস্মাৎ কারণাদ্বিপ্রা একাদশ্যামুপোষণম্ ।

                          কুর্য্যান্নরো বা নারী বা পক্ষয়োরুভয়োরপি ॥-শ্রীনারদীয় পুরাণ ।

অর্থাৎ যাহার বয়স ৮ বর্ষের অধিক অথবা ৮০ বর্ষের কম, এরূপ কোন ব্যক্তি যদি আমার রাজ্য মধ্যে একাদশীর দিন অন্নভক্ষণ করে, তবে তাহাকে বধ করা হইবে, অথবা রাজ্য হইতে নির্বাসিত করা হইবে। সুতরাং কি স্ত্রী, কি পুরুষ, সকলেই শুক্ল ও কৃষ্ণ এই পক্ষের একাদশীতে উপবাস করিবে।


উপরিলিখিত রাজার সংক্ষিপ্ত বিবরণ কৌতুহলাক্রান্ত ব্যক্তির কৌতুহল নিবৃত্তির জন্য ও জগদ্বাসীর হৃদয়ে ভক্তি-ভাব উৎপাদনের জন্য তাহা নিম্নো উদ্ধৃত হইতেছে-

প্রাচীনকালে কৌশিক নগরে রুক্মাঙ্গদ নামে এক সার্বভৌম রাজা ছিলেন। তিনি ভগবদ্ভক্তি পরায়ণ এবং বিশেষতঃ একাদশী-ব্রত পালনে বিশেষ মনোযোগী ছিলেন। ঢক্কা বাদ্যে তিনি সমস্ত রাজ্যে ঘোষণা করিতেন,-‘আজ একাদশী তিথি। ৮ বৎসরের ঊর্দ্ধে ও ৮০ বৎসর বয়স্ক পর্য্যন্ত যে ব্যক্তি আমার রাজ্যে অন্ন ভোজন করিবে, তাহাকে বধ অথবা রাজ্য হইতে নির্ব্বাসিত করা হইবে। অন্যের কি কথা, আমার নিজ আত্মীয় মধ্যেও এই আজ্ঞা জারী থাকিবে। পিতা, মাতা, পত্নী, পুত্র, মিত্র সকলকেই এই ব্রত পালন করিতে হইবে, অন্যথায় কঠোর দ-। একাদশী দিনে গঙ্গাস্নান ও শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণকে দান করিতে হয়।’ রাজার আদেশে রাজ্যবাসী সকলেই একাদশী-ব্রত পালন করিয়া বৈকুন্ঠে যাইতে লাগিল। ধর্ম্মরাজ যম একেবারে কর্ম্মশূন্য হইলেন এবং হিসাব রক্ষক চিত্রগুপ্ত লেখাপড়ার কার্য্য হইতে অবসর প্রাপ্ত হইলেন।


একদিন দেবর্ষি নারদ যমপুরীতে উপস্থিত হইয়া যমরাজের সমস্ত দুঃখের কাহিনী শ্রবণ করিলেন। তদনন্তর যমরাজ ও চিত্রগুপ্ত দেবর্ষির সহিত সত্যলোকে গমন করিয়া ব্রহ্মার নিকট সকল বৃত্তান্ত জ্ঞাপন করিলেন। ব্রহ্মা যমরাজের সম্মান-রক্ষার জন্য কিছুক্ষণ চিন্তা করিলেন, তৎপরে এক পরমা সুন্দরী নারীমূর্ত্তি সৃষ্টি করিলেন। ইহার নাম মোহিনী। তিনি বলিলেন,-“তুমি মন্দার পর্ব্বতে গিয়া রুক্মাঙ্গদ রাজাকে সত্বর মোহিত কর।”


মোহিনী  ব্রহ্মাকে প্রণাম করিয়া তিন মুহূর্ত্তে মন্দার পর্ব্বত-শিখরে উপস্থিত হইল। সেখানে বসিয়া অপূর্ব্ব গান্ধার রাগ গাহিতে লাগিল। উহার গানে আকৃষ্ট হইয়া দেব, দৈত্য ও অন্যান্য সকল প্রাণীই তথায় আসিতে আরম্ভ করিল।

এদিকে রাজা রুক্মাঙ্গদ স্বীয় উপযুক্ত পিতৃভক্ত পুত্র ধর্ম্মাঙ্গদকে রাজ্যের ভার ন্যস্ত করিয়া মৃগ-শিকারে 

চলিলেন। মৃগয়ার ছলে প্রজার কন্টক-স্বরূপ প্রণীকে বধ এবং হিংসা ও লুন্ঠনকারী ব্যক্তি হইতে 

প্রজাকে রক্ষা করাই তাঁহার উদ্দেশ্য ছিল। অতঃএব রাজা অশ্বারোহণে একশত আট যোজন অতিক্রমপূর্ব্বক বামদেব মুনির আশ্রমে উপনীত হইলেন। মুনির নিকট জানিতে পারিলেন যে, তিনি পূর্ব্বজন্মে শূদ্র ছিলেন এবং তাঁহার দুষ্টা ভার্য্যা ছিল, যাহার ফলে দারিদ্র-দশা ভোগ করিতে হইয়াছে। ঐ জন্মে একাদশী-ব্রত পালনের জন্য বর্ত্তমানে এই সমস্ত বৈভব প্রাপ্তি হইয়াছে।


অনন্তর রাজা বামদেব মুনির অনুমতি গ্রহণ করিয়া মন্দার পর্ব্বত অভিমুখে যাত্রা করিলেন। যথাসময়ে মন্দার পর্ব্বতে পৌঁছিয়া দেখিতে পাইলেন,-অদ্ভুত এক সঙ্গীতের ধ্বনিতে আকৃষ্ট হইয়া পশু-পক্ষীগণ একদিকে ছুটিতেছে। রাজাও কৌতুহল-বশতঃ  ক্ষণকাল মধ্যে যথাস্থানে উপস্থিত হইয়া তপ্তকাঞ্চন-বর্ণা পরমা সুন্দরী নারী মোহনীকে দর্শন করিলেন। তাঁহার রূপে মুগ্ধ হইয়া তাহাকে পত্নীরূপে গ্রহণ করিতে ইচ্ছা জানাইলে মোহিনী বলিল-“আমি ব্রহ্মার কন্যা, আপনার কীর্ত্তি শ্রবণ করিয়া আপনাকে পতিরূপে প্রাপ্ত হইবার জন্য সঙ্গীত দ্বারা শঙ্করের উপাসনা করিতেছিলাম। তিনি সদ্যই ফলদান করিলেন।” রাজা মোহিনীর হস্তে হস্ত রাখিয়া শপথ করিলেন,-“মোহিনী ! তুমি যাহা অভিলাষ করিবে, আমি তাহাই পূরণ করিব।” এই বলিয়া রাজা তাহার সহিত রাজধানী অভিমুখে যাত্রা করিলেন।


গৃহে প্রত্যাবর্ত্তন করিয়া মোহিনী-সহিত বিলাসে ৮ বৎসর গত হইল। আরও এক বৎসর অতীত হওয়ার পর মঙ্গলময় কার্ত্তিক মাস আসিয়া উপস্থিত হইতে দেখিয়া রাজা মোহিনীকে বলিলেন,-“মোহিনী ! আমি তোমার সহিত বিলাসে বহুদিন অতিবাহিত করিয়াছি। এবার তোমার মোহ ত্যাগ করিয়া কার্ত্তিক-ব্রত পালন করিতে ইচ্ছা করি। তুমি অনুমতি দাও।”


রাজা এতদিন নিজসুখ-বিলাসে মত্ত থাকিলেও কদাপি একাদশী-ব্রত পালনে অবহেলা করেন নাই। রাজার বাক্য শ্রবণ করিয়া মোহিনী উত্তর করিল,-“মহারাজ, আপনাকে পরিত্যাগ করিয়া আমি ক্ষণকালও থাকিতে পারি না, অতএব ব্রতের পরিবর্ত্তে ব্রাহ্মণগণকে ভোজন-দ্রব্যাদি দান করুন এবং আপনার জ্যেষ্ঠপত্নী সন্ধ্যাবলীই কার্ত্তিক ব্রত পালন করুন।”


এই প্রকার কথোপকথন-কালে পুত্র ধর্ম্মাঙ্গদের একাদশী-দিনের ঢক্কাবাদ্য রাজার কর্ণ গোচর হইল। পিতা অবসর-প্রাপ্ত হওয়ায় ধর্ম্মাঙ্গদ পিতৃসিংহাসনে আরোহণ করিয়াছেন। আগামী কল্য একাদশী তিথি; তাই বাদ্য দ্বারা প্রজাগণকে স্মরণ করাইয়া দিতেছেন। তাহা শ্রবণ করিয়া রাজা মোহিনীকে বলিলেন,-“মোহিনী ! আজ আমি সংযম থাকিব। তোমার আজ্ঞায় কার্ত্তিক-ব্রত পালনে সন্ধ্যাবলীকে নিযুক্ত করিয়াছি, কিন্তু একাদশী-ব্রত আমি নিজে করিব। তুমিও আমার সহিত সংযতভাবে এই ব্রত পালন কর।”


মোহিনী রাজবাক্য শ্রবণ করিয়া বলিল,-“রাজন্ ! একাদশী ব্রত পালন অবশ্য কর্ত্তব্য, কিন্তু আপনি আমার নিকট মহুয়াবনে শপথ করিয়া বলিয়াছেন,-আমি যাা বলিব, তাহা আপনি অবশ্য পালন করিবেন।


রাজা বলিলেন,-“তোমার চিত্তে যে-ইচ্ছা জন্মিবে, আমি তাহাই পূর্ণ করিব।” উত্তরে মোহিনী বলিলেন,-“তাহা হইলে আমার ইচ্ছা, আপনি একাদশী না করিয়া ভোজন করুন। যদি আমার কথা রক্ষা না করেন, তবে প্রতজ্ঞা-ভঙ্গজনিত পাপে ঘোর নরকে পতিত হইবেন।”


রাজা পুনরায় বলিলেন,-“ কল্যাণি ! আমার ব্রতভঙ্গ করিও না। ইহার পরিবর্ত্তে তুমি যাহা ইচ্ছা করিবে, তাহাই প্রদান করিব। একাদশীতে কোন প্রাণী অন্নভোজন করিবে না- ইহা আমি নিজেই প্রচার করিয়া কিরূপে তাহার বিপরীত আচরণ করিব ? যদি ইন্দ্রের তেজ ক্ষীণ হয়, সমুদ্র শুষ্ক হইয়া যায়, অগ্নি তাহার উষ্ণতা ত্যাগ করে তথাপি রাজা রু´াঙ্গদ একাদশী-ব্রত ভঙ্গ করিবে না।”


রাজার বাক্য শ্রবণে মোহিনী ক্রোধে জ্বলিয়া উঠিল এবং বলিল,-“রাজন ! আমার বাক্য স্বীকার না করিলে তুমি ধর্ম্মভ্রষ্ট হইবে, আমি পিতৃস্থানে চলিয়া যাইব।” এই বলিয়া মোহিনী গমনোদ্যত হইল। সেই সময়ে ধর্ম্মাঙ্গদ আসিয়া তাহার গতি রুদ্ধ করিল এবং মাতা মোহিনীর নিকট সমস্ত বৃত্তান্ত শ্রবণ করিল। তৎপরে পিতার চরণে উপস্থিত হইয়া মাতা মোহিনীর মনোবাসনা পূর্ণ করিতে প্রার্থনা করিল। পিতা পুত্রের প্রার্থনা-বাক্যে উত্তেজিত হইয়া বলিলেন,- “মোহিনী মরিয়া যায় অথবা চলিয়া যায়, তথাপি একাদশী ব্রত হইতে বিরত হইব না।”


ধর্ম্মাঙ্গদ নিজমাতা সন্ধ্যাবলীকে আহ্বান করিয়া মোহিনীকে সান্ত¦না দিবার জন্য অনুরোধ করিলেন। সন্ধ্যাবলীর শত অনুরোধেও মোহিনীর মন দ্রবীভূত হইল না। সে বলিল-“রাজা যদি একাদশীতে ভোজন না করেন, তবে তাহার পরিবর্ত্তে নিজ পুত্রের মস্তক ছেদন করিয়া আমাকে প্রদান করুন।” মোহনীর বাক্য শ্রবণ করিবামাত্র সন্ধ্যাবলী শিহরিয়া উঠিলেন, পরে রাজাকে বলিলেন,-“মহারাজ ! ধর্ম্মহানি অপেক্ষা পুত্রের প্রাণনাশ করাই শ্রেয়ঃ। পিতা অপেক্ষা মাতার ¯স্নেহ শতগুণ অধিক। কিন্তু মাতা হইয়াও স্বামীর প্রতিজ্ঞা-ভঙ্গে ধর্ম্মহানির আশঙ্কায় ও সত্য পালনের জন্য পুত্রের মমতা জলাঞ্জলি দিতেছি। আপনি ¯স্নেহ-মমতা ত্যাগপূর্ব্বক পুত্রকে বধ করুন।” সেই সময় রাজপুত্র ধর্ম্মশীল ধর্ম্মাঙ্গদ মোহিনীর সম্মুখে দ-ায়মান হইয়া বলিলেন,-“ভামিনি ! তুমি আমার বধরূপ বর গ্রহণ কর” বলিয়া একটি তীক্ষè তরবারি রাজহস্তে প্রদান করিয়া বলিলেন,-“পিতঃ ! আপনি বিলম্ব করিবেন না, মোহিনীর নিকট যে প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, তাহা পূরণ করুন। আপনার হিতের জন্য আমার মৃত্যুই শ্রেয়ঃ।”


তখন মোহিনী পুনরায়  বলিল,-“একাদশীতে ভোজন কর, পুত্র বধ করিতে হইবে না, অন্যথায় পুত্র বধ করিতে হইবে।”


সেই সময় সহসা ভগবান বিষ্ণু অলক্ষিতভাবে আকাশে আবির্ভূত হইলেন। রাজা সানন্দে ভগবানের উদ্দেশ্যে প্রণাম করিয়া তরবারি লইলেন, পুত্রও হর্ষভরে ভূতলে মস্তক স্থাপন করিলেন। রাজা তরবারি উত্তোলন করিলে পর্ব্বত সহিত সমগ্র পৃথিবী কম্পিত হইয়া উঠিল, সমুদ্রে জোয়ার আসিল, 

ধরণীতে উল্কাপাত হইতে লাগিল। তাহা দেখিয়া মোহিনী মূর্চ্ছিত হইয়া পড়িল। সে-মুহূর্ত্তে ভগবান শ্রীহরি স্বহস্তে তরবারি ধারণ করিয়া কহিলেন,-“রাজন ! আমি তোমার প্রতি বিশেষ প্রসন্ন হইয়ছি। তুমি স্ত্রী-পুত্র সহ বৈকুণ্ঠধামে চল”- এই বলিয়া তিনি রাজাকে স্পর্শ করিলেন ও তৎক্ষণাৎ সকলের সম্মুখ হইতে অদৃশ্য হইয়া গেলেন।


অহো ! একাদশী-ব্রত পালনের কিপ্রকার অপূর্ব্ব মহিমা ! ইহাতে শিক্ষণীয় বিষয় এই যে, মানব-জীবনে যে কোন পরিস্থিতির উদ্ভব হউক না কেন, কি বালক, কি বৃদ্ধ, কি স্ত্রী-পুরুষ, সকলেরই জন্য শুক্ল ও কৃষ্ণ উভয় পক্ষীয় একাদশী-ব্রতোপবাস পালন করা কর্ত্তব্য।


কোন মন্তব্য নেই

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.