শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্যদেব
শ্রীচৈতন্যাবতার সম্বন্ধে শাস্ত্রে নির্দেশ
অথর্ববেদীয় শ্রীশ্রীচৈতন্য উপনিষদে বলা হয়েছে- ‘হে ভগবন্ ! এই জগতে আমার শ্রেয় কি, বলুন’- পিপ্পলাদ এই প্রশ্ন লয়ে স্বীয় পিতা ব্রহ্মার নিকট উপস্থিত হলেন। ব্রহ্মা বললেন- তুমি দীর্ঘকাল তপস্যা ও ব্রহ্মচর্যে রত হয়ে মনকে নির্জিত কর। পিপ্পলাদ সেই অনুসারে শুদ্ধচিত্ত হয়ে পুনঃ পিতা ব্রহ্মার নিকট এসে বললেন- ‘ভগবন্ ! কলিযুগেন পাপাচ্ছন্ন প্রজাগণ কি প্রকারে মুক্ত হবে ?’ ‘কলিযুগের উপাস্য দেবতা কে এবং ভজন মন্ত্রই বা কি - বলুন।’
ব্রহ্মা বললেন- এই পরম নিগূঢ় তত্ত্ব তোমাকে বলব। সকলের আত্মস্বরূপ, মহাপুরুষ, পরমাত্মস্বরূপ, মহাযোগী, ত্রিগুণাতীত; বিশুদ্ধ সত্ত্বময়, দ্বিভূজ শ্যামসুন্দর স্বয়ং জাহ্নবী তটস্থ গোলোকাখ্য নবদ্বীপ ধামে গৌরসুন্দররূপে অবতীর্ণ হয়ে জগতে ভক্তি প্রকাশ করবেন। এই বিষয়ে এই শ্লোকসমূহ কথিত আছে।
একো দেবঃ সর্বরূপী মহাত্মা গৌরো রক্তশ্যামল শ্বেতরূপ।
চৈতন্যাত্মা ন বৈ চৈতন্যশক্তির্ভক্তাকারো ভক্তিদো ভক্তিবেদ্যঃ॥
অর্থাৎ একমাত্র পরম দেবতা সর্বরূপী মহাপুরুষ গৌরচন্দ্র অন্য যুগত্রয়ে শ্বেত, রক্ত, শ্যামল রূপ ধারন করেন।
নমো বেদান্ত বেদ্যায় কৃষ্ণায় পরমাত্মনে।
সর্ব চৈতন্যরূপায় চৈতন্যায় নমো নমঃ ॥
অর্থাৎ সেই বেদান্তবেদ্য শ্রীকৃষ্ণ, পরমাত্মা, সর্বচৈতন্য স্বরূপ শ্রীচৈতন্যদেবকে পুনঃ পুনঃ নমস্কার।
বেদান্তবেদ্যং পুরুষং পুরাণং চৈতন্যাত্মনং বিশ্বযোনিং মহান্তম্ ।
তমেব বিদিত্বাহতিমৃত্যুমেতি নান্যঃ পন্থা বিদ্যতেহয়নায় ॥
অর্থাৎ বেদান্তবেদ্য, পুরাণপুরুষ, চৈতন্যবিগ্রহ, বিশ্বকারণ, মহান্ত স্বরূপ একমাত্র শ্রীচৈতন্যদেবকে জানিলে মৃত্যুর অতীত হওয়া যায়। মায়া অতিক্রম করবার আর অন্য উপায় নেই।
স্বনাম-মূলমন্ত্রেন সর্ব হলদয়তি বিভুঃ।
দ্বে শক্তি পরমে তস্য হ্লাদিনী সম্বিদেব চ ॥ ইতি॥
অর্থাৎ পরমেশ্বর তিনি স্বীয় নাম-মূলমন্ত্রের দ্বারা সকলকে আনন্দ দান করেন। তাঁর দুটি পরমা শক্তি- হ্লাদিনী অর্থাৎ আনন্দ স্বরূপিনী শক্তি, সম্বিৎ অর্থাৎ জ্ঞান স্বরূপিনী শক্তি।
“স এব মূলমন্ত্রং জপতি হরিরিতি কৃষ্ণ ইতি রাম ইতি ॥”
অর্থাৎ তিনি স্বয়ংই হরি-কৃষ্ণ-রাম অর্থাৎ
‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে,
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে’ - এই মূলমন্ত্র কীর্তন করে থাকেন।
হরতি হৃদয়গ্রন্থি বাসনারূপমিতি হরিঃ।
কৃষ্ণ স্মরণে তচ্চ ণস্তদুভয়মেলনমিতি কৃষ্ণ ॥
রময়তি সর্বমিতি রাম আনন্দ ন্বরূপঃ।
অত্র শ্লোকে ভবতি ॥ মন্ত্রো গুহ্যঃ পরমো ভক্তিবেদ্য ॥
অর্থাৎ যিনি জীবের বাসনারূপ হৃদয়গ্রন্থি হরণ করেন তিনি - ‘হরি’। কৃষ্ ধাতু স্মরণার্থক, তার উত্তর নিবৃত্তি-বাচক ‘ ণ ’ প্রত্যয়, - এই উভয়ের মিলনে কৃষ্ণ শব্দ ; যাঁর স্মরণে অশেষ দুঃখ নিবৃত্তি হয়, তিনি - ‘ কৃষ্ণ’। যিনি সকলকে আনন্দ দান করেন, সেই আনন্দস্বরূপই ‘রাম’। এই স্থানে এইরূপ শ্লোক আছে। এই মহামন্ত্রই সর্বসার, সর্বশ্রেষ্ঠ ও ভক্তিবেদ্য।
নামান্যষ্টাবষ্ট চ শোভনানি,
তানি নিত্যং যে জপন্তি ধীরাস্তে বৈ
মায়ামতি তরন্তি নান্যঃ।
পরমং মন্ত্রং পরমরহস্যং নিত্যমাবর্তয়তি ॥
অর্থাৎ এই আট আট ষোল নাম পরম সুন্দর ; যাঁরা সেই নাম নিত্য কীর্তন করেন, সেই সকল ধীর ব্যক্তিই মায়া উতীর্ণ হতে পারেন, অপরে পারে না। নিত্যসিদ্ধ পুরুষগণও এই পরমসার মহামন্ত্র সর্বদা কীর্তন করে থাকেন।
চৈতন্য এব সঙ্কর্ষণো বাসুদেবঃ পরমেণ্ঠী রুদ্র শক্রো
বৃহস্পতিঃ সর্বেদেবাঃ সর্বাণি-ভূতানি স্থাবরানি চরানি
চ যৎকিঞ্চিৎ সদসৎ কারণং সর্বম্ । তদত্র শ্লোকাঃ ॥
অর্থাৎ শ্রীচৈতন্যদেবই সঙ্কর্ষণ, বাসুদেব; তা হতে ব্রহ্মা, রুদ্র, ইন্দ্র, বৃহস্পতি, সকল দেবতা, চরাচর সকল জীব, নিত্যানিত্য সকল বস্তু। তিনি সর্বকারণ-কারণ। অতএব এই সম্বন্ধে এই সকল শ্লোক প্রসিদ্ধ।
যৎকিঞ্চিদসদ্ভুঙ্তে ক্ষরং তৎকার্যমুচ্যতে।
সৎকারণং পরং জীবস্তবক্ষরমিতিীরিতম্ ॥
ক্ষরাক্ষরাভ্যাং পরমঃ স এব পুরুষোত্তমঃ ॥
চৈতন্যাখ্যং পরং তত্ত্বং সর্বকারণকারণম্ ॥
অর্থাৎ যা কিছু অনিত্য কার্যরূপী ও ভোগ্য, তা অর্থাৎ এই জগৎ ক্ষর বলিয়া কথিত হয়। জীব সৎ অর্থাৎ নিত্য, কারণবস্তু ক্ষর অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবং অক্ষর বলিয়া কথিত। যিনি ক্ষর ও অক্ষর উভয় বস্তু হতেও শ্রেষ্ঠ, তিনিই পুরুষোত্তম। সেই সর্বকারণের কারণ পরতত্ত্বেরই নাম - শ্রীচৈতন্যদেব।
মহান্ প্রভুর্বৈ পুরুষঃ সত্ত্বস্যৈব প্রবর্তক।
সুনির্মলামিমং শান্তিমীশানো জ্যোতিরব্যয় ॥
(শ্বেতা শ্বঃ ৩/১২)
অর্থাৎ সেই পুরুষ মহান্ প্রভু অর্থাৎ স্বামী। তিনিই বুদ্ধিবৃত্তির প্রবর্তক। তাঁর কৃপাতেই সুনির্মল অর্থাৎ সর্বদোষ বিবর্জিত শান্তি প্রাপ্ত হওয়া যায়। তিনি জ্যোতির্ময় অর্থাৎ মূর্তিমান হয়েও অব্যয়; সাধারণ মূর্ত পদার্থের ন্যায় তাঁর ক্ষয়োদয় নেই।
যদা পশ্যঃ পশ্যতে রু´বর্ণং কর্তারমীশং পুরুষং ব্রহ্মযোনম্ ।
তদা বিদ্বান পুণ্যপাপে বিধূয় নিরঞ্জনঃ পরমং সাম্যমুপৈতি ॥
(মুন্ডক ৩/৩)
অর্থাৎ যে কালে হেমবর্ণ-বিগ্রহ হিরণ্যগর্ভ জগতকর্তাকে দেখিতে পান, তখন পরাবিদ্যা লাভ হওয়ার ফলে অপরা লৌকিকী বুদ্ধি প্রসূতা পাপপুণ্য-ধারনা সম্যগ্ রূপে ধৌত করে নির্মল ও সমতা লাভ করেন। এই শ্রুত্যুক্ত রু´বর্ণ পুরুষই পুরটসুন্দরদ্যূতি শ্রীগৗরসুন্দর।
অথর্বাস্য তৃতীয়কান্ডে ব্রহ্মবিভাগানন্তরম্ -
ইতোহহং কৃতসন্ন্যাসোহবতাষ্যিামি
সগুণো নির্বেদো নিষ্কামো ভূগীর্বাণন্তীস্থোহলকানন্দয়াঃ
কলৌ চতুঃ সহস্রাব্দোপরিপঞ্চসহস্রাভ্যন্তরে গৌরবর্ণো
দীর্ঘাঙ্গঃ সর্বলক্ষণযুক্ত ঈশ্বর প্রার্থিতো নিজরসাস্বাদো
ভক্তরূপো মিশ্যাখ্যোবিদিত যোগোহস্যমিতি ॥
অর্থাৎ অথর্ববেদশাখার অন্তর্গত উপনিষদের তৃতীয় প্রকরণে ব্রহ্মবিভাগ নিরূপণের পরে কথিত আছে - “আমি স্বয়ং ভগবান মহাবিষ্ণুর অবতার অদ্বৈতাচার্য কর্তৃক প্রার্থিত হয়ে কলির প্রথম সন্ধ্যায় চারিসহস্র বৎসরের পর পঞ্চম সহস্র বৎসরের মধ্যে এই গোলোক ধাম হতে পৃথিবীস্থ নবদ্বীপ-মায়াপুর ধামে গঙ্গার তীরে গৌরবর্ণ, চারিহাত পরিমিত আয়তদেহ, মহাপুরুষের বত্রিশ লক্ষণযুক্ত, মিশ্র পদবীধারী ব্রহ্মণরূপে অবতীর্ণ হইব। তখন মহাভাগবতের সকল সদ্গুণে ভূষিত, বৈরাগ্যযুক্ত, নিষ্কিঞ্চন, শুদ্ধভক্তিযোগ-তত্ত্বজ্ঞ, নিজ-কৃষ্ণ-প্রেমানন্দ রসাস্বাদক সন্ন্যাসী ভক্তরূপ হইব।”
তথাহি অথর্ববেদে পুরুষ বোধন্যাং-
সপ্তমে গৌরবর্ণ বিষ্ণোরিত্যনেন স্বশক্ত্যা চৈক্যমেত্য।
প্রান্তে প্রাতরবতীর্য্য সহ স্বৈ স্বমনুশিক্ষয়তি ॥
অর্থাৎ অথর্ববেদে পুরুষ বোধনীতে - “সপ্ম অর্থাৎ বৈবস্বত মন্বন্তরে গৌরবর্ণ ভগবান (গৌরহরি) নিজ হ্লাদিনী শক্তির (শ্রীরাধার) সহিত এক হয়ে (রাধাকৃষ্ণ মিলিত তনু গৌরসুন্দর) কলিযুগের প্রথম সন্ধ্যায় স্বীয় পার্ষদসহ অবতীর্ণ হয়ে নিজগণকে হরে কৃষ্ণাদি নাম শিক্ষা দেন।
শ্রীমদ্ভাগবত প্রমাণ ঃ-
ধ্যেয়ং সদা পরিভবঘœভীষ্টদোহং
তীর্থাস্পদং শিববিরিঞ্চিনুতং শরণ্যম্ ।
র্ভৃত্যার্তিহং প্রণতপাল ভবাব্ধিপোতং
বন্দে মহাপুরুষ তে চরণারবিন্দম্ ॥
(ভাঃ ১১/৫/৩৩)
অর্থাৎ প্রণত পালক, হে মহাপুরুষ (মহাভাগবত লীলা অভিনয়কারী মহাজন), আপনিই একমাত্র নিত্য ধেয় বস্তু, আপনিই জীবের মোহবিনাশক, আপনিই বাহ্ছাকল্পতরু, নিখিল ভক্তের আশ্রয়, শিব-বিরিঞ্চির (সদাশিবরূপ শ্রীঅদৈতাচার্য ও ব্রহ্ম হরিদাস ঠাকুরের) বন্দ্য, আপনিই সর্বশরণ, নামাপরাধাদি ভক্ত আর্তি হরণকারী এবং ভবসমুদ্র পার হওয়ার একমাত্র নৌকাস্বরূপ। আমি আপনার পাদপদ্ম বন্দনা করি।
(মহারাজ নিমির প্রতি শ্রীকরভাজন)
ত্যক্তা সুদুস্ত্যজসুরেপ্সিতরাজ্যলক্ষ্মীং
ধর্মিষ্ঠ আর্যবচসা যদগাদরণ্যম্ ।
মায়ামৃগং দয়িতয়েপ্সিতমন্বধাবদ্-
বন্দে মহাপুরুষ তে চরণারবিন্দম্ ॥
(ভাঃ ১১/৫/৩৪)
অর্থাৎ হে মহাপুরুষ, আপনি প্রনাপেক্ষাও দুস্ত্যজা স্বরাজ্যলক্ষ্মী (আপনার অবিচ্ছেদ্য অভিন্ন শক্তি), যাঁর কৃপাকটাক্ষ দেবগণের বাঞ্ছিত, সেই মহালক্ষ্মীকে (বিষ্ণুপ্রিয়াকে) পরিত্যাগ করে কোনও ব্রাহ্মণের শাপে তাঁর বাক্য রক্ষার্থে সন্ন্যাস লীলা প্রদর্শন, আবার বাহিরে আচার্যরূপ মর্যাদা বা বৈধীভক্তি পালনরূপ ধর্মাচরণ করেছেন এবং মায়ামৃগ অর্থাৎ মায়ার অনুসরণকারী (অন্যাভিলাষী, ভোগী, ত্যাগী, কুতার্কিক পাষন্ড, অধম পড়–য়া প্রভৃতি) সংসারবিষ্ট জনসমূহের প্রতি মহাকরুনা প্রদর্শন অভিলাষে নিজচরণস্পর্শ প্রদান দ্বারা ভগবদ্ভক্তি বিতরণের জন্য (ভারতের সর্বত্র) গমন করে সেই ভবার্ণব-নিমগ্ন জনগণকে কৃষ্ণপ্রেমসিন্ধুতে নিমজ্জিত করেছেন, আমি আপনার চরণারবিন্দ বন্দনা করি।
মহারাজ নিমির প্রতি শ্রীকরভাজন
কৃষ্ণবর্ণং ত্বিষাকৃষ্ণং সাঙ্গোপাঙ্গাস্ত্রপার্ষদম্ ।
যজ্ঞৈ সঙ্কীর্তনপ্রায়ৈর্যজন্তি হি সুমেধসঃ ॥
(ভাঃ ১১/৫/৩২)
এই কলিযুগে সুমেধা-সম্পন্ন অবিরাম কৃষ্ণ-কীর্তনকারী ভগবানের অবতারকে আরাধনা করার জন্য সংকীর্তন যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন। যদিও তাঁর গায়ের বর্ণ অ-কৃষ্ণ, তবুও তিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। তিনি তাঁর সঙ্গী, সেবক, অস্ত্র এবং অন্তরঙ্গ পার্ষদে পরিবৃত।
মহারাজ নিমির প্রতি শ্রীকরভাজন
ইত্থং নৃতির্যগৃষিদেবঝষাবতারৈ-
র্লোকান্ বিভায়সি হংসি জগৎপ্রতীপান্ ।
ধর্মং মহাপুরুষ পাসি যুগানুবৃত্তং
ছন্নঃ কলৌ যদভবস্ত্রিযুগোহথ স ত্বম্ ॥
(ভাঃ ৭/৯/৩৮)
এভাবেই, হে ভগবান ! আপনি মানুষরূপে, পশুরূপে, ঋষিরূপে, দেবতারূপে, মৎস্য অথবা কূর্মরূপে বিভিন্ন অবতার গ্রহণ করেন এবং এভাবেই অসুরদের হত্যা করে সমস্ত সৃষ্টির বিভিন্ন গ্রহলোকসমূহ পালন করেন। যুগ অনুসারে, হে ভগবান ! আপনি ধর্মকে রক্ষা করেন। তবে কলিযুগে আপনি আপনার ভগবত্তা আবৃত করে অবতীর্ণ হোন, আর এই জন্য আপনি ত্রিযুগ (অর্থাৎ, ভগবান যিনি তিন যুগে প্রকাশিত) নামে পরিচিত।
ভগবান নৃসিংহদেবের প্রতি প্রহ্লাদ মহারাজ
মহাভারত প্রমাণঃ-
সুবর্ণবর্ণো হেমাঙ্গো বরাঙ্গশ্চন্দনাঙ্গদী।
সন্ন্যাসকৃচ্ছমঃ শান্তো নিষ্ঠাশান্তিপরায়ণঃ ॥
(মহাভারত দানপর্ব ১৪৯ অঃ)
মহাপ্রভু গৌরসুন্দরের গায়ের রঙ সেনার মতো। প্রকৃতপক্ষে, তাঁর সুললিত সমগ্র দেহটি কাঁচা সোনার মতো। তাঁর সমস্ত দেহ চন্দন-চর্চিত। তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করবেন এবং খুব আত্ম-সংযমশীল হবেন। মায়াবাদী সন্ন্যাসীদের সঙ্গে তাঁর পার্থক্য এই যে, তিনি ভক্তিমূলক সেবায় নিষ্ঠাপারায়ণ এবং সংকীর্তন আন্দোলন প্রচার করবেস।
পুরাণ প্রমাণঃ-
অহমেব ক্বচিদ্ ব্রহ্মন্ সন্ন্যাসাশ্রমমাশ্রিতঃ।
হরিভক্তিং গ্রাহয়ামি কলৌ পাপহতান্নরান্ ॥
(উপপুরাণ বচন)
হে ব্রহ্মন্ ! কোন বিশেষ কলিযুগে আমি সন্ন্যাস আশ্রম গ্রহণ পূর্বক পাপহত মানব সকলকে হরিভক্তি প্রদান করিব।
অহমেব দ্বিজশ্রেষ্ঠ নিত্যং প্রচ্ছন্নবিগ্রহঃ।
ভগবদ্ভক্তরূপেন লোকান রক্ষামি সর্বদা ॥
(আদি পুরাণ)
হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ ! আমার এই প্রচ্ছন্নবিগ্রহ নিত্য। আমিই নিজরূপ গোপনপূর্বক ভগবদ্ভক্তরূপে লোকসমূহে ধর্ম স্থাপন করে তাদেরকে সর্বদা রক্ষা করি।
পুণ্যক্ষেত্রে নবদ্বীপে ভবিষ্যামি শচীসূত ।
(কৃষ্ণযামলে)
অথবাহং ধরাধামে ভূত্বা মদ্ভক্তরূপধৃক্।
মায়ায়াং চ ভবিষ্যামি শচীসূত ঃ ॥
(ব্রহ্মযামলে)
য এব ভগবান কৃষ্ণো রাধিকা প্রাণবল্লভঃ ।
সৃণ্টাদৌ য জগন্নাথো গৌর আসীন্মহেশ্বরী ॥
কোন মন্তব্য নেই