পুরুষোত্তম-মাস-মাহাত্ম্য - শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর



     ‘স্মার্ত ’ও ‘পরমার্থ’ ভেদে বৈদিক আর্য শাস্ত্র দুইভাগে বিভক্ত। যাঁহারা স্মার্ত-বিভাগে অধিকারী, তাঁহারা স্বভাবতঃ ‘পরমার্থ’ শাস্ত্রে রুচিপ্রাপ্ত ন’ন। নিজ নিজ রুচি অনুসারেই মানবের বিচার, সিদ্ধান্ত, ক্রিয়া ও জীবনের উদ্দেশ্য গঠিত হয়। স্মার্তগণ নিজ নিজ রুচি সম্মত শাস্ত্রে অধিকতর বিশ্বাস করেন। পারমার্থিক শাস্ত্রে তাঁহাদের সেরূপ অধিকার না থাকায় সেরূপ আস্থাও প্রকাশ করেন না। এরূপ বিভাগের কর্তা-বিধাতা। সুতরাং ইহাতে জগৎ পিতার একটি গূঢ় উদ্দেশ্য আছে, সন্দেহ নাই। আমরা যতদূর জানিতে পারিয়াছি, সে উদ্দেশ্য এই- স্বীয় স্বীয় অধিকারে স্থিত থাকিতে পারিলেই জীবের ক্রমোন্নতি হয়। অধিকারচ্যূত হইলেই পতন হয়। মানবগণ স্বীয় স্বীয় কর্মানুসারে কর্মাধিকার ও ভক্তাধিকারবশে দ্বিবিধ অধিকার লাভ করিয়া থাকেন। যে পর্যন্ত মানবের কর্মাধিকার থাকে, সে পর্যন্ত তাঁহার স্মার্ত-পথই শ্রেয়ঃ। কর্মাধিকার অতিক্রম করতঃ যখন তিনি ভক্তি-অধিকারে প্রবেশ করেন, তখন তাঁহার পারমার্থিক পথে স্বভাবতঃ রুচি জন্মে। এতন্নিবন্ধন বিধাতা স্মার্ত-পরমার্ত-ভেদে বিবিধ শাস্ত্র করিয়াছেন।


        স্মার্ত-শাস্ত্র মানবগণকে সর্বদা কর্মাধিকারে নিষ্ঠা লাভ করাইবার চেষ্টায় অনেক প্রকার বিধি-বিধান করিয়াছেন। এমন কি, সেই সকল বিধি-বিধানে বিশেষ নিষ্ঠা দিবার জন্য পরমার্থ শাস্ত্রের প্রতি অনেক স্থানে ঔদাসীন্য প্রকাশ করিয়াছেন। বস্তুতঃ শাস্ত্র এক হইলেও লোকের নিকট ইহার দুই প্রকার ভাব। অধিকার নিষ্ঠা ব্যতীত জীবগণের মঙ্গল হয় না। তাই শাস্ত্র, স্মার্ত-পরমার্থ ভেদে দ্বিবিধ বলিয়া প্রতীত।


       বৎসরকে দ্বাদশভাগে বিভাগ করিয়া, দ্বাদশ মাসে স্মার্ত শাস্ত্রে সর্ব সৎকর্ম নিরূপণ করিয়াছেন। বর্ণাশ্রমগত সমস্ত কর্মই যখন দ্বাদশমাসে বিভক্ত হইল, তখন অধিমাস কর্মহীন মাস হইয়া গেল। অধিমাসে কোন সৎকর্ম নাই। চান্দ্রমাস ও সৌর মাসের মিল রাখিবার জন্য ৩২ মাসে একটি করিয়া মাস বাদ দিতে হয়।* সেই মাসটির নাম অধিমাস। স্মার্তগণ অধিমাসকে মলমাস বলিয়া পরিত্যাগ করিয়াছেন। মলিম্লুচ (চোর), মলিন মাস ইত্যাদি নাম দিয়া অধিমাসকে ঘৃনিত বলিয়া ব্যাখ্যা করিয়াছেন।


         এদিকে পরমারাধ্য পরমার্থ-শাস্ত্র অধিমাসকে পরমার্থ কার্যে সর্বোপরি শ্রেষ্ঠ বলিয়া প্রকাশ করেন। জীবন অনিত্য। জীবনের কোন অংশইত বৃথা যাপন করা উচিত নয়। সর্বদা সর্বক্ষণ হরিভজনে থাকাই জীবের কর্তব্য। সুতরাং প্রত্যেক তৃতীয় বৎসরে যে অধিমাস হয়, তাহাও হরিভজনের উপযোগী হউক-হইাই পরমার্থ শাস্ত্রের নিগূঢ় চেষ্টা। আবার যখন কর্মীগণ ঐ মাসকে সমস্ত সৎকর্মশূন্য বলিয়া জানিলেন, তখন সর্বজীবের উদ্ধারের জন্য পরমার্থ-শাস্ত্র সেই কালকে ভজনের বিশেষ উপযোগী বলিয়া নির্ধারিত করিলেন। পরমার্থ-শাস্ত্র বলেন যে, হে জীব! কেন অধিমাসে হরিভজনে আলস্য কর ? এই মাস শ্রীমদ্গোলোকনাথ কর্তৃক সর্বোপরি স্থাপিত হইয়াছে। এমন কি, কার্তিক, মাঘ ও বৈশাখাদি মহাপুণ্য মাস অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ। এই মাসে বিশেষ ভজন-বিধির সহিত শ্রীরাধাকৃষ্ণার্চন কর, সমস্ত লাভ হইবে।

        নারদীয় পুরাণে অধিমাসের মাহাত্ম্য একত্রিংশ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে। দ্বাদশ মাসের আধিপত্য ও আপনার অপমান বিচার করিয়া অধিমাস বহুকষ্টে বৈকুন্ঠে গমন করতঃ নিজ দুঃখ শ্রীনারায়ণকে জানাইয়াছিলেন। বৈকুন্ঠপতি কৃপা করিয়া অধিমাসকে সঙ্গে লইয়া গোলোকে শ্রীকৃষ্ণের নিকটে উপস্থিত হইলেন। শ্রীকৃষ্ণ মলমাসের আর্তি শ্রবণ করতঃ দয়ার্দ্র হইয়া বলিলেন-

                        

                     অহমেতৈর্যথা লোকে প্রথিতঃ পুরুষোত্তমঃ।

                         তথায়ামপি লোকেষু প্রথিতঃ পুরুষোত্তমঃ ॥

                         অস্মৈ সমর্পিতাঃ সর্বে যে যে গুণা ময়ি সংস্থিতাঃ।

                মৎসাদৃশ্যমুপাগম্য মাসানামধিপো ভবেৎ ॥

                         জগৎপূজ্যো জগদ্বন্দ্যো মাসোহয়ং তু ভবিষ্যতি।

                         সর্বে মাসাঃ সকামাশ্চ নিষ্কামোহয়ং ময়া কৃতঃ ॥

                        অকামঃ সর্বকামো বা যোহধিমাসং প্রপূজয়েৎ।

                        কর্মাণি ভস্মসাৎ কৃত্বা মামেবৈষ্যতাসংশয়ম্ ॥

                        কদাচিন্ময়ম ভক্তানামপরাধেতি গণ্যতে।

                        পুরুষোত্তম-ভক্তানাং নাপরাধঃ কদাচন ॥

                        য এতস্মিন্মহামূঢ়া জগদানাদিবর্জিতাঃ।

                        সৎকর্ম-¯স্নানরহিতা দেব-তীর্থ-দ্বিজ-দ্বিষঃ ॥

                       জায়ন্তে দুর্ভগা দুষ্টাঃ পর-ভাগ্যোপজীবিনঃ।

                       ন কদাচিৎ সুখং তেষাং স্বপ্নেহপি শশশৃঙ্গবৎ ॥

                       যেনাহমর্চিতো ভক্ত্যা মাসোহস্মিন্ পুরুষোত্তম।

                       ধন পুত্র-সুখং ভুংক্তা পশ্চাদ্ গোলোকবাসভাক্ ॥

ইহার অর্থ এই যে, - হে রমাপতি ! আমি যেরূপ এই জগতে পুরুষোত্তম বলিয়া বিখ্যাত, এই অধিমাসও লোকে পুরুষোত্তম বলিযা বিখ্যাত হইবে। আমাতে যে সমস্ত গুণ আছে, সেই সমস্তই এই মাসে অর্পিত হইল। আমার সদৃশ হইয়া এই অধিমাস অন্য সকল মাসের অধিপতি হইল। এই মাস জগৎপূজ্য ও জগদ্বন্দ্য। অন্য সকল মাস সকাম। এই মাসটি নিষ্কাম। যিনি অকাম হইয়া বা সর্বকাম হইয়া এই মাসের পূজা করেন, তিনি সকল কর্ম ভস্মসাৎ করিয়া আমাকে প্রাপ্ত হ’ন। আমার ভক্তদিগের কদাচিৎ অপরাধ হয়, এই পুরুষোত্তম মাসের ভক্তগণের কখনই অপরাধ হইবে না। যে সকল মহামূঢ় এই অধিমাসে জপদানাদি বর্জিত, সৎকর্ম ¯œানাদি রহিত এবং দেব, তীর্থ ও দ্বিজগণের প্রতি বিদ্বেষ করে, সেই সকল দূর্ভাগা পরভাগ্যোপজীবি হইয়া স্বপ্নেও কিছুমাত্র সুখ পায় না। এই পুরুষোত্তম মাসে যিনি আমাকে ভক্তিপূর্বক অর্চনা করেন, তিনি ধন পুত্রাদি সুখ ভোগ করিয়া অবশেষে গোলোকবাসী হ’ন।


    পুরুষোত্তম মাসের মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে অনেকগুলি পৌরাণিক প্রসঙ্গ কথিত হইয়াছে। দ্রৌপদী পূর্বজন্মে মেধা ঋষির কন্যা ছিলেন। দুর্বাসা প্রোক্ত ‘পুরুষোত্তম মাহাত্ম্য’ শুনিয়াও তিনি ঐ মাসকে অবহেলা করেন, তাহাতে সে জন্মে কষ্ট ও দ্রৌপদী জন্মে পঞ্চপতির অধীন হ’ন। শ্রীকৃষ্ণের উপদেশে পান্ডবগণ দ্রৌপদীর সহিত পুরুষোত্তম মাস ব্রত আচরণ করিয়া সমস্ত বনবাস দুঃখের পার প্রাপ্ত হন।

        যথা-

                        এবং সর্বেষু তীর্থেষু ভ্রমন্তঃ পান্ড-ুনন্দনাঃ।

                        পুরুষোত্তম-মাসাদ্য-ব্রতং চেরুবিধানতঃ ॥

                        তদন্তে রাজ্যমতুলমবাপুর্গত কন্টকম্ ।

                       পূর্ণে চতুর্দশে বর্ষে শ্রীকৃষ্ণ-কৃপয়া মুনে ॥

       

         দৃঢ়ধন্বা রাজার জন্ম-বৃত্তান্তে পুরুষোত্তম মাস মাহাত্ম্য বিশেষরূপে কথিত হইয়াছে। বাল্মীকিমুনি দৃঢ়ধন্বার প্রশ্নমতে যে ব্রত-প্রকরণ বলিয়াছিলেন, তাহা নারদ শ্রীনারায়ণ ঋষির নিকট বদরিকাশ্রমে শ্রবণ করেন। ধর্ম-শাস্ত্রে যেরূপ ব্রাহ্মণের আহ্নিক-বিধি নিরূপিত আছে, তদ্রƒপ ব্রাহ্ম-মুহূর্ত হইতে পুরুষোত্তম-সেবকের কর্তব্য বিধান করিয়াছেন। শ্রীপুরুষোত্তম মাসে স্থান-বিধানে বলিয়াছেন-

                       সমুদ্রগা-নদী ¯স্নানমুত্তমং পরিকীর্তিতম্ ।

                       বাপী-কূপ-তড়াগেষু মধ্যমং কথিতং বুধৈঃ।

                       গৃহে ¯স্নানং তু সামান্যং গৃহস্থস্য প্রকীর্তিতম্ ॥

শ্রীপুরুষোত্তম ব্রতী ¯স্নান করিয়া-

                       সপবিত্রেণ হস্তেন কুর্যাদাচমন-ক্রিয়াম্ ।

                       আচম্য তিলকং কুর্যাদ গোপী-চন্দন-মৃৎস্নয়া ॥

                       উর্ধ্বপুন্ড্রমৃজুং সৌম্যং দন্ডাকারং প্রকল্পয়েৎ।

                      শঙ্খ-চক্রাদিকং ধার্য গোপীচন্দন-মৃৎস্নয়া ॥

শ্রীকৃষ্ণ পূজাই পুরুষোত্তম মাসে কর্তব্য, যথা-

                      পুরুষোত্তম-মাসস্য দৈবতং পুরুষোত্তমঃ।

                      তস্মাৎ সম্পূজয়েদ্ভক্ত্যা শ্রদ্ধয়া পুরুষোত্তমম্ ॥

বাল্মীকি কহিলেন- হে দৃঢ়ধন্বা ! পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণই পুরুষোত্তম মাসের অধিদেবতা। অতএব সেইমাসে প্রতিদিন ভক্তিশ্রদ্ধা পূর্বক পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণকে ষোড়শ উপচারে পূজা করিবে। যথা-

                    ষোড়শোপচারৈশ্চ পূজয়েৎ পুরুষোত্তমম্।

শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের যুগলোপাসনাই কর্তব্য, যথা-

                    আগচ্ছ দেব দেবেশ শ্রীকৃষ্ণ পুরুষোত্তম।

                    রাধয়া সহিতশ্চাত্র গৃহাণ-পূজনং মম ॥


এই শাস্ত্রে শ্রীপুরুষোত্তম-ব্রত সম্বন্ধে পূর্বে যে সমস্ত বিধি-নিয়ম লিখিত হইয়াছে, সে সমস্ত সর্ব বর্ণধর্ম পারায়ণ ধার্মিক লোকের পালনীয়। গ্রন্থ শেষে নৈমিষ-ক্ষেত্রে, শ্রীসূত গোস্বামী ঋষিগণকে এই বলিয়াছেন-

                  ভারতে জনুরাসাদ্য পুরুষোত্তমমূত্তমম্ ।

                  ন সেবন্তে ন শৃণ¦ন্তি গৃহাসক্তা নরাধমাঃ ॥

                  গতাগতং ভজন্তেহত্র দুর্ভগা জন্মজন্মনি।

                  পুত্র-মিত্র-কলত্রাপ্ত-বিয়োগাদ্দুঃখভাগিনঃ ॥

                 অস্মিন্মাসে দ্বিজশ্রেষ্ঠা নাসচ্ছাস্ত্রানুদাহরেৎ।

                 ন স্বপেৎপর-শয্যায়াং নালপেৎ বিতথং ক্বচিৎ ॥

                 পরাপবাদান্ন কথঞ্চিৎ কদাচন।

                 পরান্নঞ্চ ন ভুঞ্জীত ন কুর্বীত পরক্রিয়াম্ ॥

অর্থাৎ ভারতে জন্মলাভ করতঃ গৃহাসক্ত নরাধমগণ শ্রীপুরুষোত্তম ব্রতকথা শ্রবণ এবং ঐ ব্রত পালন করে না। দুর্ভাগাগণ জন্ম জন্ম মরণ-ভোগ করে এবং পুত্র-মিত্র-কলত্র ও নিজজনের বিয়োগ-জনিত দুঃখভোগী হয়। এই পুরুষোত্তম মাসে, হে দ্বিজবরগণ! বৃথা কাব্যালঙ্কারাদি অসৎ-শাস্ত্র আলোচনা করিবে না। পর শয্যায় শয়ন এবং অনিত্য বিষয়ালাপ করিবে না। পরনিন্দা বাক্যালাপ করিবে না। পরান্ন ভোজন ও পরকার্য করিবে না।

                 বিত্তশাঠ্যমকুর্বাণো দানং দদ্যাদ্দি¦জাতয়ে।

                 বিদ্যমানে ধনে শাঠ্যং কুর্বাণো রৌরবং ব্রজেৎ ॥

                 দিনে দিনে দ্বিজেন্দ্রায় দত্ত্বা ভোজনমুত্তমম্ ।

                 দিব স্যাষ্টমে ভাগে ব্রতী ভোজনমাচরেৎ ॥

                 ইন্দ্রদ্যুম্নঃ শতদুস্নো যৌবনাশ্বো ভগীরথঃ।

                 পুরুষোত্তমমারাধ্য যযুর্ভগবদন্তিকম্ ॥

                 তস্মাৎ সর্বপ্রযত্নেন সংসেব্য পুরুষোত্তমঃ ।

                 সর্ব সাধনতঃ শ্রেষ্ঠঃ সর্বার্থফলদায়কঃ ॥

                 গোবর্ধনধরং বন্দে গোপালং গোপরূপিণম্।

                 গোকুলোৎসবমীশানং গোবিন্দং গোপীকাপ্রিয়ম্ ॥

                 কৌ-িন্যেন পুরা প্রোক্তমিমং মন্ত্রং পুনঃ পুনঃ।

                জপন্মাসং নয়েদ্ভক্ত্যা পুরুষোত্তমমাপ্নুয়াৎ ॥

                ধ্যায়েন্নবঘনশ্যামং দ্বিভুজং মরলীধরম্ ।

                লসৎপীতপটং রম্যং সরাধং পুরুষোত্তমম্ ॥

                ধ্যায়ন্ ধ্যায়ন্ নয়েন্নাসং পূজয়ন্ পুরুষোত্তমম্ ।

                এবং যঃ কুরুতে ভক্ত্যা স্বাভীষ্টং সর্বমাপ্নুয়াৎ ॥

অর্থাৎ বিত্তশাঠ্য পরিত্যাগ পূর্বক ব্রাহ্মণদিগকে দান করিবে। ধন থাকিলে শাঠ্য করা রৌরব গমনের কারণ হয়। প্রতিদিন বৈষ্ণব ও ব্রাহ্মণদিগকে উত্তম ভোজন দিবে। ব্রতী নিজে দিবসের অষ্টমভাগে ভোজন করিবে। ইন্দ্রদ্যুম্ন, শতদুন্ম, যৌবনাশ্ব ও ভগীরথ পুরুষোত্তম আরাধনা করিয়া ভগবৎ সামীপ্য লাভ করিয়াছিলেন। সর্ব প্রকার যত্নর সহিত পুরুষোত্তম-সেবা করিবে। এই পুরুষোত্তম সেবা সকল সাধন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সর্বার্থফলদায়িকা। ‘গোবর্ধনধরং’ প্রভৃতি মন্ত্রটি পূর্বে কৌ-িন্য মুনি পুনঃ পুনঃ জপ করিয়াছিলেন। এই মন্ত্র ভক্তিপূর্বক শ্রীপুরুষোত্তম মাসে জপ করিয়া পুরুষোত্তম প্রাপ্ত হইবে। নবঘন দ্বিভূজ মুরলীধর পীতাম্বর শ্রীকৃষ্ণকে শ্রীরাধার সহিত নিয়ত ধ্যান করিতে করিতে পুরুষোত্তম-মাসকে যাপিত করিবে। যিনি ভক্তি পূর্বক এরূপ করেন, তিনি সকল অভীষ্ট লাভ করেন।


       পরমার্থী তিন প্রকার অর্থাৎ স্বনিষ্ঠ, পরনিষ্ঠিত ও নিরপেক্ষ। পুর্বোক্ত কার্যসকল স্বনিষ্ঠ পরমার্থীর পক্ষে বিধেয়। পরনিষ্ঠিত ভক্তম-লী স্বীয় স্বীয় আচার্য্য-নির্দিষ্ট ‘কার্তিক-মাস-ব্রত-পালন’ নিয়মানুসারে ‘পুরুষোত্তম-ব্রত’ পালন করিতে অধিকারী। নিরপেক্ষ ভক্তগণ ঐকান্তিকী প্রবৃত্তি দ্বারা ‘শ্রীভগবৎ-প্রসাদ-সেবন’ নিয়মের সহিত অহরহ সাধ্যানুসারে ‘শ্রীহরিনাম শ্রবণ কীর্তন’ দ্বারা সমস্ত পবিত্র মাসগুলি যাপন করিযা থাকেন। যথা শ্রীহরিভক্তিবিলাসে চরমোপদেশের বিষ্ণু-রহস্য বাক্য-

                     ইন্দ্রিয়ার্থেষ¦সক্তানাং সদৈব বিমলা মতিঃ।

                     পরিতোষয়তো বিষ্ণুং নোপবাস জিতাত্মনঃ ॥

অর্থাৎ যাঁহাদের মতি ভক্তিপূত হইয়া ইন্দ্রিয়ার্থে অনাসক্ত, তাঁদের মতি স্বভাবতঃ বিমলা, সুতরাং তাঁহারা জিতাত্মা, সর্ব সময়েই স্বাভাবিকী ভক্তি দ্বারা শ্রীকৃষ্ণকে পরিতোষ করেন। উপবাসাদি তাঁহাদের চিত্ত-শুদ্ধির কারণ হইতে পারে না।


অতএব শ্রীসনাতন গোস্বামী একান্তীদিগের সম্বন্ধে এই কথা বলিয়া গ্রন্থ সমাপ্ত করিয়াছেন-

                      এবমেকান্তিনাং প্রায়ঃ কীর্তনং স্মরণং প্রভোঃ।

                      কুর্বতাং পরমপ্রীত্যা কৃত্যমন্যন্ন রোচতে ॥

                      ভাবেন কেনচিৎ প্রেষ্ঠশ্রীমূর্তিরঙ্ঘ্রিসেবনে।

                      স্যাদিচ্ছৈষাং স্বমন্ত্রেণ স্বরসেনৈব তদ্বিধিঃ ॥

                      বিহিতিষে¦ নিতোষু প্রবর্তন্তে স্বয়ং হি তে।

                      ইত্যাদ্যেকান্তিনাং ভাতি মহাত্মাং লিখিতং হি তৎ ॥

অর্থাৎ একান্ত কৃষ্ণভক্তদিগের শ্রীকৃষ্ণ-স্মরণ ও শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনই অত্যন্ত প্রিয়। প্রায় তাঁহারা এই দুই অঙ্গ ব্যতীত আর কোন অঙ্গে ব্যস্ত হ’ন না। পরম প্রীতির সহিত উক্ত অঙ্গদ্বয় পালন করণে এতদূর আগ্রহ যে, অন্য কৃত্যসকল তাঁহাদের রুচি সংগ্রহ সংগ্রহ করিতে পারে না। শ্রীকৃষ্ণের অঙ্গিঘ্রসেবা কোন বিশেষভাবের সহিত করিতে তাঁহাদের ইচ্ছা প্রবলা হয়; সুতরাং কিছু স্বতন্ত্রতার সহিত এবং স্বীয় রসের অনুকূলভাবে কৃষ্ণাঙ্ঘ্রি সেবাই তাঁহাদের বিধি হয়। ঋষিগণ যে সকল বিধি-বিধান করিয়াছেন, তাহাতে একান্তী ভক্তদিগের বিধিবাধ্য ভাব নাই। স্বয়ং প্রবৃত্তি-ভাবই স্বভাবতঃ বর্তমান হয়। ইহাই একান্ত ভক্তদিগের মাহাত্ম্য।


        ভক্তগণ স্বনিষ্ঠ, পরনিষ্ঠিত ও একান্ত ভাবভেদে যথাধিকার শ্রীপুরুষোত্তম মাস পালন করিতে প্রবৃত্ত হইবেন। ভগবান ব্রজনাথ শ্রীকৃষ্ণ এই মাসের অধিপতি। সুতরাং অধিমাস ভক্তমাত্রেরই প্রিয়মাস, যেহেতু ঘটনাক্রমে ঐ মাসে কোন কর্মকা-ের পীড়ন আসিয়া ভক্তির ব্যাঘাত করিবে না।


গোবর্ধনধরং বন্দে গোপালং গোপরূপিণম্।

গোকুলোৎসবমীশানং গোবিন্দং গোপীকাপ্রিয়ম্ ॥    


গোবর্ধনধরং বন্দে গোপালং গোপরূপিণম্।

গোকুলোৎসবমীশানং গোবিন্দং গোপীকাপ্রিয়ম্ ॥   

                                                                                         গোবর্ধনধরং বন্দে গোপালং গোপরূপিণম্।

গোকুলোৎসবমীশানং গোবিন্দং গোপীকাপ্রিয়ম্ ॥ 

                                                                                         গোবর্ধনধরং বন্দে গোপালং গোপরূপিণম্।

গোকুলোৎসবমীশানং গোবিন্দং গোপীকাপ্রিয়ম্ ॥  

                                                                                          গোবর্ধনধরং বন্দে গোপালং গোপরূপিণম্।

গোকুলোৎসবমীশানং গোবিন্দং গোপীকাপ্রিয়ম্ ॥ 

                                                                                          গোবর্ধনধরং বন্দে গোপালং গোপরূপিণম্।

গোকুলোৎসবমীশানং গোবিন্দং গোপীকাপ্রিয়ম্ ॥


govardhanadharam vande  gopälam goparüpiëam
gokulotsavam éçänam govindam gopikäpriyam

 

govardhanadharam vande  gopälam goparüpiëam
gokulotsavam éçänam govindam gopikäpriyam

 

govardhanadharam vande  gopälam goparüpiëam
gokulotsavam éçänam govindam gopikäpriyam

 

govardhanadharam vande  gopälam goparüpiëam
gokulotsavam éçänam govindam gopikäpriyam

 

govardhanadharam vande  gopälam goparüpiëam
gokulotsavam éçänam govindam gopikäpriyam

 

govardhanadharam vande  gopälam goparüpiëam
gokulotsavam éçänam govindam gopikäpriyam


কোন মন্তব্য নেই

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.