শুদ্ধা একাদশীতেই ব্রতোপবাস কর্ত্তব্য
“একাদশী সম্পূর্ণা ও বিদ্ধা-এই দুই প্রকার। বিদ্ধাও- পূর্ব্ববিদ্ধ ও পরবিদ্ধা ভেদে দ্বিবিধা। তন্মধ্যে পূর্ব্ববিদ্ধা অর্থাৎ দশমী-মিশ্রিতা একাদশী পরিত্যাজ্যা” (হরিভক্তি বিলাস ১২/১৯৯)।
একাদশীমুপবসেদ্দাদশী অথবা পুনঃ।
বিমিশ্রাং বাপি কুর্ব্বীত ন ধশম্যা যুতা ক্বচিৎ ॥(সৌরধর্ম্মোত্তর)
“সম্পূর্ণা এবং বিশেষতঃ পরবিদ্ধা (অর্থাৎ দ্বাদশীযুক্তা) একাদশী শুদ্ধা বলিয়া উপবাস যোগ্য, কিন্তু দশমীযুক্তা একাদশীতে কখনও উপবাস করিতে নাই”।
ভবিষ্য পুরাণে কণ¦মুনির উক্তিতে পাওয়া যায়-
অরুণোদয়বেলায়াং দশমী সংযুতা যদি।
অত্রোপাষ্যা দ্বাদশী স্যাৎ ত্রয়োদশ্যাস্ত পারণম্ ॥
“অরুণোদয়-কালে অর্থাৎ সূর্য্যােদয়ের পূর্ব্বে দুই মুহূর্ত্ত বা চারি দ-কাল-মধ্যে(১ ঘন্টা ৩৬ মিনিট) যদি দশমীর গন্ধমাত্রও থাকে, তাহা হইলে উক্ত একাদশী পূর্ব্ববিদ্ধা দোষে দুষ্টা হওয়ায় উহাকে সযতেœ বর্জ্জন করিতে হইবে” (ভবিষ্য পুরাণ)। দ্বাদশী মিশ্রিতা একাদশী কিন্তু সর্ব্বদাই গ্রহণীয়-“দ্বাদশীমিশ্রিতা গ্রাহ্যা সর্ব্বত্রৈকাদশী তিথিঃ” (পদ্ম পুরাণ)। নারদ পুরাণে বর্নিত আছে,-যে কালে বহুবাক্য বিরোধজন্য সন্দেহ উপস্থিত হয়, সে-কালে দ্বাদশীতে উপবাস পূর্ব্বক ত্রয়োদশীতে পারণ করা কর্ত্তব্য।
দ্বাদশী দশমীযুক্তা যত্র মাস্ত্রে প্রতিষ্ঠিতা।
ন তৎশাস্ত্রমহং মন্যে যদি ব্রহ্মা বদেৎ ॥ (হঃ ভঃ বিঃ ১২/২৭৮)
কিন্তু “ যে শাস্ত্রে দশমীবিদ্ধ একাদশী পালনের কথা আছে, তাহা স্বয়ং ব্রহ্মার উক্তি হইলেও তাহা শাস্ত্র রূপে গণ্য নহে”।
পদ্মপুরাণে হিরণ্যাক্ষ-বধ প্রসঙ্গে কথিত আছে যে, দৈত্যগণের বধ দুষ্কর দেখিয়া ব্রহ্মা শ্রীহরিকে উহার কারণ জিজ্ঞাসা করিলে ভগবান বলিলেন,-‘শুক্রাচার্য্ররে মায়ায় মোহিত হইয়া বিপ্রগণ দশমীবিদ্ধা আমার একাদশী ব্রত করিতেছেন।
বাসরং দশমীবিদ্ধং দৈত্যানাং পুষ্টিবর্দ্ধনম্।
মদীয়ং নাস্তি সন্দেহঃ সত্যং সত্যং পিতামহঃ॥ (পদ্ম পুরাণ)
হে পিতামহ, আমি সত্য সত্য করিয়া বলিতেছি, দশমীবিদ্ধা একাদশী দৈত্যগণের পুষ্টিবর্দ্ধিনী- ইহাতে কোন সন্দেহ নাই।
বিদ্ধাব্রতের দ্বারা পুষ্ট হইয়াই হিরণ্যাক্ষ ইন্দ্রকে পরাজিত করিয়া দেবরাজ্য হরণ করিয়াছে। সুতরাং ‘হে মার্ক- ! তুমি আমার আজ্ঞায় ভূলোকে গমন কর এবং দশমীবেধ-বিষয়ে শুক্রার্য্যরে মায়া নাশ কর।’ শ্রীবিষ্ণুর আদেশে মুনিবর নৈমিষারণ্যে আসিয়া উপস্তিত হইলেন এবং তাঁহার নিকট ঋষিগণ সম্পূর্ণ বৃত্তান্ত জানিতে পারিয়া অথ্যন্ত বিস্মিত হইলেন। মুনিবর মহাভাগবত মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন ও সর্ব্ব আশ্রমে গিয়া সকলকে তাহা জানাইলেন। তদবধি বিপ্রগণ ও জনগণ শুক্রাচার্য্য-বাক্যসমূহ ত্যাগ করিয়া দশমীবিদ্ধা একাদশী ব্রত বর্জ্জন করিয়াছিলেন (হঃ ভঃ বিঃ ১২/২৫৭-২৬৬)।
ব্রহ্মপুরাণে ধৃতরাষ্ট্রের প্রতি মৈত্রেয়মুনির উক্তিতে দেখা যায়, পূর্ব্বে ভার্য্যাসহ তিনি দশমী সংযুক্তা একাদশীতে ব্রতোপবাস পালন করায় তাঁহার শত পুত্রদিগের বিনাশ ঘটিয়াছির। স্কন্দ পুরাণে স্পষ্ট উক্ত আছে যে,-
যে শংসন্তি দিনং বিষ্ণোর্দশমীবেধদুষিতম্।
জ্ঞেয়াস্তে পাপপুরুষাঃ শুক্রমায়া-বিমোহিতাঃ ॥ (স্কন্দ পুরাণ)
“যাহারা দশমী দ্বারা দুষিত হরিবাসরে উপবাস করাবার জন্য উপদেশ করে, সেই সকল পাপপুরুষ নিশ্চয় শুক্র-মায়ায় মোহিত হইয়াছে জানিতে হইবে।” উক্ত পুরাণেই উমা-মাহেশ্বর সংবাদে দেখা যায়, যাহারা দশমীবিদ্ধা একাদশীর অনুষ্ঠান করে, তাহারা নিশ্চয় নরকবাসেরই ইচ্ছা করে।

কোন মন্তব্য নেই