অপরাধোত্থ অনর্থ


   


অপরাধোত্থ অনর্থ বলতে এখানে নাম অপরাধ থেকে জাত অনর্থকেই বুঝতে হবে। মন্দিরে পালকি করে বা পাদুকাসহ প্রবেশাদি সেবা অপরাধকে নির্দেশ করা হয় না। আচার্যগণ নির্ণয় করেছেন যে, ভগবানের নাম কীর্তনের দ্বারা, স্তোত্রাদি পাঠের দ্বারা ও নিরন্তর ভগবদ্ সেবার দ্বারা প্রতিদিন জাত সেবা অপরাধের উপশম হয়ে থাকে। এই সমস্ত কার্যে নিরন্তর নিযুক্ত থাকলে সেবা আদি অপরাধের অঙ্কুরীভাব বা আবির্ভাব ঘটে না। কিন্তু যেহেতু নামবলে ও স্তোত্রাদি পাঠের দ্বারা সেবা অপরাধ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সুতরাং তার সুযোগ নিয়ে কেউ যদি সেবা অপরাধ করতে থাকে তাহলে তা নাম অপরাধে পরিণত হবে এবং সেই অনর্থ তার গতিকে রোধ করবে।


           “নাম্নো বলাদ্ যস্য হি পাপবুদ্ধিরিতি”

  এই ভাবে নাম বলে পাপা কর্ম করায় তা নামাপরাধ।


এই শ্লোকে যে ‘নাম’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা ভক্তির সমস্ত অঙ্গের প্রতিনিধিত্ব করে, যার দ্বারা অনর্থ বিনাশ হয়ে থাকে। দিব্য নাম হচ্ছে ভক্তির মূল অঙ্গ।



ভক্ত্যুত্থ অনর্থঃ

   ভক্ত্যুত্থ অনর্থ অর্থাৎ ভক্তি থেকে জাত অনর্থ। যেভাবে মূল শাখা থেকে উপশাখার সৃষ্টি হয়, ঠিক সেভাবেই ভক্তিরূপ মূল শাখা থেকে ধন, লাভ, পূজা, প্রতিষ্ঠাদি উপশাখার আবির্ভাব হয় বা মুখ্য গাছের সাথে বহু আগাছা বাড়তে থাকে। সেই রূপ ভক্তি লতার সাথে সাথে ধন, লাভ, পূজা, প্রতিষ্ঠাদির বহু আগাছার আবির্ভাব হয়। এই আগাছাগুলি দ্রুত বাড়তে থাকে এবং তাদের প্রভাব ভক্তের হৃদয়কে আচ্ছন্ন করে। মূল ভক্তি লতার বৃদ্ধিকে স্তব্ধ করে রাখে।


অনর্থের প্রতীক ঃ

* পুতনা বধ - ভূক্তি মুক্তির শিক্ষক কপটগুরু। ভূক্তি মুক্তি প্রিয় কপট সাধুগণও পুতনা তত্ত্ব। শুদ্ধ ভক্তের প্রতি কৃপা করে বালকৃষ্ণ স্বীয় নবোদিত ভাবকে রক্ষা করার জন্য পুতনা বধ করেন।


* শকটাসুর বধ - প্রাক্তন ও আধুনিক অসৎ সংস্কার, জাড্য ও অভিমানজনিত ভারবাহিত্ব। বালকৃষ্ণ ভাব শকট ভঞ্জন পূর্বক সেই অনর্থকে দূর করেন।


* তৃণাবর্ত বধ - বৃথা পান্ডিত্য অভিমান, তজ্জনিত কুতর্ক, শুষ্ক যুক্তি বা  শুষ্ক ন্যায়াদি ও তৎপ্রিয় লোক সঙ্গই তুণাবর্ত। পাষন্ড মত সমূহ এতেই থাকে। বালকৃষ্ণভাব সাধকের দৈন্যে কৃপাবিষ্ট হয়ে সেই তৃণাবর্তকে মেরে ভজনের কন্টক দূর করেন।    

                                                                                    

* যমলার্জুন ভঞ্জন - শ্রী মদ হতে আভিজত্যি দোষে যে অভিমান হয়, তাতে ভূতহিংসা, স্ত্রীসঙ্গ ও আসব পান জনিত মত্ততা উৎপন্ন হয়ে জিহ্বা লাম্পট্য এবং নির্দয়তা প্রযুক্ত ভূতহিংসা ও নিলর্জতাদি দোষ হয়। কৃষ্ণ কৃপা করে যমলার্জুন ভঙ্গ করে সে দোষ দূর করে থাকেন।


* বৎসাসুর নাশ - বাল বুদ্ধি জনিত লোভ হতে যে দুষ্ক্রিয়া ও পরবুদ্ধি বশবর্তীতা হয়, তাহাই বৎসাসুর নামক অনর্থ। কৃষ্ণ কৃপা করে তা দূর করেন।


* বকাসুর বধ - কুটীনটিী ধূর্ততা ও শাঠ্য হতে মিথ্যা ব্যাবহারই বকাসুর। তাকে নাশ না করলে শুদ্ধ কৃষ্ণ ভক্তি হয় না।


* অঘাসুর বধ - ভূতহিংসা দ্বেষজনিত পরদ্রোহরূপ পাপবুদ্ধি দূরীকরণ। ইহা একটি নামাপরাধ।


* ব্রহ্ম মোহ - কর্ম জ্ঞানাদি চর্চা সন্দেহবাদ ও ঐশ্বর্য বুদ্ধিতে মাধুর্যের অবমাননা।


* ধেনুকাসুর বধ - স্থূল বুদ্ধি, সৎ জ্ঞানাভাব, মূঢ়তাজনিত তত্ত্বান্ধতা বা স্বরূপ জ্ঞান বিরোধ, ইহার দূরীকরণ।


* কালীয় দমন - অভিমান, খলতা, পর অপকারিতা, ক্রুরতা ও জীবে দয়া শূন্যতা, ইহার দূরীকরণ। 


* দাবাগ্নি নাশ - পরস্পরবাদ, সম্প্রদায় বিদ্বেষ, অন্য দেবাদির বিদ্বেষ ও যুদ্ধ ইত্যাদি সংঘর্ষই দাবানল, ইহার দূরীকরণ।


*প্রলম্ব বধ - স্ত্রী লাম্পট্য, লাভ, পূজা ও প্রতিষ্ঠাশার দূরীকরণ।


*দাবানল পান - নাস্তিকাদির দ্বারা ধর্ম ও অধার্মিকের দ্বারা উপদ্রবের দূরীকরণ।


* যাজ্ঞিক বিপ্রের ব্যবহার - কৃষ্ণের প্রতি বর্ণাশ্রম অভিমান জনিত ঔদাসিন্য বা কর্ম জড়তা।


*ইন্দ্র পূজা নিবারণ - বহু ঈশ্বর বুদ্ধি ত্যাগ ও অহংগ্রহোপসনার দূরীকরণ।


* বরুণ হতে নন্দোদ্ধার - বারুনী উত্যাদি আসবের সেবায় ভজনানন্দ বৃদ্ধি পায় - এই বুদ্ধির দূরীকরণ।


* সর্প কবল হতে নন্দোমোচন - মায়াবাদ আদি জনিত ভক্তি তত্ত্বের উদ্ধার ও মায়াবাদির সঙ্গ ত্যাগ। 


* শঙ্খচূড় বধ - প্রতিষ্ঠাশা ও স্ত্রীসঙ্গ স্পৃহা বর্জন।


* অরিষ্টাসুর বধ - ছলধর্মাদির অভিমানে ভক্তিকে অবহেলা করণ; ইহার ধ্বংস।


* কেশী বধ - আমি বড় ভক্ত ও আচার্য - এই অভিমান, ঐশ্বর্য বুদ্ধি ও পার্থিব অহঙ্কার - উহার বর্জন। 


* ব্যোমাসুর বধ - চৌরাদি ও কপট ভক্তের সঙ্গ ত্যাগ।


কোন মন্তব্য নেই

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.