হরিবাসরে শ্রাদ্ধ নিষিদ্ধ


পদ্মপুরাণে উত্তরখ-ে উক্ত আছে যে, মাতা-পিতার মৃতাহে একাদশীর উপস্থিতিতে পরদিন দ্বাদশীতে শ্রাদ্ধ করা উচিত; উপবাস দিনে শ্রাদ্ধ কখনও কর্ত্তব্য নহে, কারণ দেবগণ বা পিতৃগণ নিন্দিত অন্ন ভোজন করেন না (হঃ ভঃ বিঃ ১২/৭০)। 


                               যে কুর্ব্বন্তি মহীপাল শ্রাদ্ধং ত্বেকাদশীদিনে।

                                ত্রয়ন্তে নরকং যান্তি দাতা ভোক্তা পরেতকঃ ॥ (ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ)


অধিকন্তু একাদশী দিনে শ্রাদ্ধ করিলে দাতা, ভোক্তা ও প্রেত তিনজনেই নরকগামী হইয়া থাকে।


একাদশী-ব্রতপালনের বিধি

একাদশীর পূর্ব্বদিন অর্থাৎ দশমীর প্রাতে শয্যাত্যাগ করিয়া দন্তধাবন ও তৈল ব্যতীত ¯œান করিয়া বিষ্ণুপূজন পূর্ব্বক শ্রীহরির ধ্যান করিতে করিতে মধ্যাহ্নে একবার মাত্র ভোজন করিবে। আমিষ (আমিষাশীর পক্ষে), লবণ, শাকাদি পরিত্যাগ কর্ত্তব্য।


মৎস্য, মসূর, ছোলা, শাক, শীম, মধু, কোদো, নারী-সম্ভাষণ, দ্বি-ভোজন, পরান্নগ্রহণ, কাংসপাত্রে ভোজন, লাউ, নিম, জামির, তাম্বুল (পান), বেগুনাদি ভক্ষণ, অত্যন্ত ভোজন ও জলপান নিষিদ্ধ। দশমীর নিয়মের অনুরূপ দ্বাদশীতেও পালনীয়। সম্যক্ ফলপ্রাপ্তির ইচ্ছা থাকিলে দশমীতে রাত্রিভোজন কর্ত্তব্য নহে। ঐ দিন অপরাহ্নে পুনরায় দন্তধাবন করিবে। পরে সন্ধ্যায় শ্রীহরিমন্দিরে গমন করিয়া পরমপদ শ্রীহরিকে ধ্যান করত এই মন্ত্র পাঠ করিবে-                   


“এতদ্গৃহীতং গোবিন্দ ময়া ত্বৎপুরতো ব্রতম্।  

সিদ্ধিং গচ্ছতু নির্ব্বিঘ্নং তব পাদানুকম্পয়া ॥

অতি-চঞ্চল-চিত্তোহ্নহং লোব-মোহময়ো নরঃ।

শক্নেম্যেতদ্ ব্রতং কর্ত্তু কিং তবানুগ্রহমৃতে ॥”


অর্থাৎ,‘হে গোবিন্দ, আমি আপনার সাক্ষাতে এই একাদশী-ব্রত গ্রহণ করিতেছি। আপনার কৃপায় তাহা যেন নির্ব্বিঘ্নে সিদ্ধ হয়। আমি অতি ছঞ্চলচিত্ত ও লোভ-মোহযুক্ত প্রাণী, আপনার কৃপা-ভিন্ন এই ব্রতপালনে সমর্থ হইব না।”

-এই বলিয়া শ্রীহরির চরণপদ্মে পুষ্পাঞ্জলি দিয়া দ-বৎ প্রণাম করিবে এবং কুশশয্যায় শয়ন করিয়া রাত্রি যাপন করিবে। প্রাতে শয্যাত্যাগ করিয়া আর দন্তধাবন করিতে হইবে না, কবল দ্বাদশবার জলদ্বারা কুলি করিয়া মুখশুদ্ধি করিবে এবং স্নানান্তে বিষ্ণুপূজাদি করিবে। পরনিন্দা, পরচর্চ্চা, জুয়াখেলা, শয়ন, তাম্বুলচর্ব্বন, মিথ্যাবাক্য, পাপী-সম্ভাষণ, ক্রোধ- এসমস্ত বর্জ্জন করিবে। সমস্ত দিবস শ্রীহরিনাম ও হরিকথা কীর্ত্তন অবশ্য কর্ত্তব্য। বৈষ্ণব গোষ্ঠীসঙ্গে শ্রীমদ্ভাগবত, মহাভারত, রামায়ণাদি পাঠসহকারে রাত্রিযাপন করিবে। প্রভাতে প্রাতঃকৃত্য সমাপনান্তে দুগ্ধদ্বারা শ্রীহরিকে স্নান করাইবে। পরে দ্বাদশী-মধ্যে পারণ করিতে হইবে। সামর্থ্য থাকিলে বৈষ্ণব ও অতিথিসেবা করাইয়া নির্দ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পারণ বিধেয়। 


কোন মন্তব্য নেই

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.