অসত্তৃষ্ণা চার প্রকারঃ

    



 ক) ঐহিক বিষয়ে এষণাঃ - এই জগতে তৃপ্তিকর ইন্দ্রিয় ভোগ্য বিষয়ের প্রতি বাসনা বা অন্বেষণ অর্থাৎ পার্থিব সুখভোগের প্রতি বাসনা। কর্মী বা ভোগী মানুষ মনে করে বৃদ্ধাবস্থা এলে ধর্ম-কর্ম পালন করব। এখন গৃহ ধর্মে থেকে সুখ ভোগ করি। এই সকল মানুষ জড় আনন্দকে অমৃতের ন্যায় জ্ঞান করে। পার্থিব জড় সুখ সম্পদ-মান-সম্মানকেই বিষয়ভোগী লোক জীবনের একমাত্র কর্তব্য বলে মনে করে।এই সকল লোক ধনজনাদির মিথ্যা রসে প্রমত্ত। কৃষ্ণ বহির্মুখ মানুষ লৌকিক দেবতার পূজা করে জড়াত্মক সুখ সম্পদ প্রাপ্ত হয়ে লোক সমাজে প্রভাব বিস্তার করে। এই প্রকার ঐহিক ভোগ বাসনা ভক্তি পথের অনর্থ স্বরূপ।


      খ) পারত্রিক বিষয়ে অশুভ এষণাঃ - স্বর্গলোকে ইন্দ্রিয় তর্পনের বাসনা অর্থাৎ পরকালের সুখভোগ বাসনা। পরকালে নিজের সুখভোগের বাসনায় যাগ-যজ্ঞ-দানাদি নানা প্রকার পুণ্য কর্ম করে মায়াবদ্ধ জীব স্বর্গে বা বিভিন্ন ভোগ লোকে গিয়ে ভোগ্য বস্তু লাভ করে আনন্দ উপভোগ করবে, এই জন্য বিভিন্ন লৌকিক দেবতার পূজা করে। ফলে পরকালে সুখভোগের বাসনা প্রাবল্যে জীব শ্রীকৃষ্ণ ভজনের কথা ভুলে যায়। পুণ্যকর্ম আদি-অন্ত্য উভয়ই কৃষ্ণভক্তির প্রতিকুল। জীব অজ্ঞান অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকায় ইন্দ্রিয় ভোগে প্রবৃত্ত হয়, এমনকি পরকালেও ভোগলোকে প্রাপ্তি কামনা করে। এই অজ্ঞতা রূপ তমোধর্ম ভক্তি পথে অনর্থ স্বরূপ।


      গ) যোগ বিভূতি বাঞ্ছাঃ - যোগ সিদ্ধি অপ্রাপ্তির বাসনা। যিনি ভক্তিযোগ অনুশীলনে ইচ্ছুক তার কাছে অণিমা, লঘিমা, মহিমা, বসিতা, কামবসায়িতা ইত্যাদি যোগ বিভূতি কন্টক তুল্য বিঘ্ন স্বরূপ। কেননা এই যোগবিভূতি বৃথাই জন্ম জন্ম কাল হরণ করে থাকে। হটযোগ, রাজযোগ, অষ্টাদশ যোগসিদ্ধি ইত্যাদি ইতর যোগ সমূহ জীবের কালক্ষয়ের জ্ঞাপক মাত্র। কৃষ্ণভক্ত এইগুলি ভক্তি পথের বিঘ্ন মনে করে পরিত্যাগ করে। আত্মেন্দ্রিয় কুযোগীগণ কৃষ্ণেন্দ্রিয় প্রীতিবাঞ্ছা বুঝতে পারে না। তারা ক্ষণভঙ্গুর জড় সিদ্ধির জন্য অহঙ্কারে প্রবৃত্ত হয়। ইহলোকে তপস্যা ও মন্ত্রের বলে যে জড় সিদ্ধি লাভ হয় তা ভক্তি অনুশীলনের অনর্থ স্বরূপ।


ঘ) মোক্ষ কামনাঃ - মুক্তি বা ব্রহ্মসাযুজ্য লাভের বাসনা। শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে বলেছেন -

      “মাক্ষবাঞ্ছা কৈতব প্রধান।

        যাহা হৈতে কৃষ্ণভক্তি হয় অন্তর্ধান ॥”

জীবের মোক্ষবাসনা হলো বড় আত্মবঞ্চনা। মোক্ষ বাসনা হতে কৃষ্ণভক্তি চিরতরে অন্তর্ধান হয়। বৈদিক কর্মকান্ডের ফলস্বরূপ স্বর্গাদি ভোগলোক লাভ হলেও, ভোগান্তে মানব জন্ম লাভ করে শ্রীকৃষ্ণভক্তি অনুশীলনের সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু মোক্ষ প্রাপ্তিতে আন্তন্তিকা নিবৃত্তি হয় বলে আর পুনর্জন্মের সম্ভাবনা থাকে না। সুতরাং কৃষ্ণভক্তি অনুশীলনেরও আর সম্ভাবনা থাকে না, চিরতরে তা দূরীভূত হয়ে থাকে। এই জন্য মোক্ষ বাসনাকে কৈতব বলা হয়েছে। কৃষ্ণভক্তি লাভের পথে মোক্ষ প্রধান অনর্থ। 


কোন মন্তব্য নেই

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.