যুদ্ধ জয়ের কৌশল
কোনাে ব্রহ্মচারী যখন যৌন জীবনের প্রতি প্রবল আসক্তি বােধ। করে, তখন সেই সমস্যার সমাধান কি? সম্মুখ সমরে পরাজয়ের ভয়ে আতঙ্কিত যে সৈনিক, তার কর্তব্য কি? কোনও পরিস্থিতিতেই বৈষ্ণব আচার্যগণ অবৈধ যৌনজীবনকে অনুমােদন করেননি। তা হলে সেই দুর্বল ব্রহ্মচারীর সেই সমস্যার সমাধান কেমন করে হবে?
এই প্রশ্নের দুটি উত্তর হতে পারে—(১) যেহেতু সে দুর্বল, তাকে প্রথমেই চেষ্টা করতে হবে বল সঞ্চয় করার। অবিরাম, আকুল প্রাণে, নিরপরাধে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ এবং কীর্তন করলে বল সঞ্চয় হবে। শুদ্ধভাবে শ্রবণ কীর্তনাদি নববিধা ভক্তির অনুশীলন করলে বল সঞ্চয় হবে। শুদ্ধ বৈষ্ণবদের সেবার মাধ্যমে সন্তুষ্ট করতে পারলে প্রভূত বল সঞ্চয় হবে। আকুল প্রাণে মদনমােহন শ্রীকৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা করতে হবে, “হে মদনমােহন, হে শ্ৰীকৃষ্ণ, দুর্বলতাবশত আমি জঘন্য যৌনজীবনের প্রতি আসক্ত হচ্ছি। যদিও আমি যথাসাধ্য এই আসক্তির কবল থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি, আমার আধ্যাত্মিক শক্তির অভাববশত আমি ব্যর্থ হচ্ছি। হে কৃপাসিন্ধু, কৃপা করে তুমি আমাকে অতিরিক্ত চিন্ময় শক্তি দাও। হে বলরাম, আমাকে কৃপা করে পরামার্থিক বল দাও, যেন আমি আর ব্যর্থ না হই।”
মদনমােহন শ্রীকৃষ্ণ যদি তার কৃপাশক্তির গন্ধমাত্রও দান করেন, মদনকে নিয়ন্ত্রণ করা তখন কল্পনাতীতভাবে সহজ হয়ে যাবে। তবে তার জন্য অনন্তপ্রকারে, অনন্তভাৰে আকুল প্রার্থনা আমাদের করেই যেতে হবে। আর শুদ্ধ ভক্তদের কাছ থেকে যথাসম্ভব কৃষ্ণকথা শ্রবণ করতে হবে। শুদ্ধ ভক্তদের লেখা গ্রন্থ পড়তে হবে। শ্রীল প্রভুপাদের রচিত গ্রন্থাবলী, বিশেষ করে তার রচিত কৃষ্ণগ্ৰছে গােপীদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলার বর্ণনা পুনঃ পুনঃ পড়তে হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে শুদ্ধ বৈষ্ণবদের সেবা করার প্রতি। বৈষ্ণবসেবা এবং কৃষ্ণসেবায় এমনভাবে ব্যস্ত থাকতে হলে, মায়া যাতে আক্রমণ করার এক নিমেষ সুযােগ না পায়।
(২) তাতেও যদি কাজ না হয়, তা হলে বুঝতে হবে, হৃদয়ের ময়লা ইস্পাতের মতাে শক্ত হয়ে গেছে। বৈষ্ণব অপরাধ, ধাম অপরাধ, নাম। অপরাধ-সব অপরাধই পাহাড়ের মতাে সঞ্চিত হয়ে আছে। আরও সঞ্চিত হচ্ছে। সেই অবস্থায় পূর্বোক্ত প্রার্থনা ও শ্রবণ-কীর্তনাদি কৃষ্ণসেবা আরও তীব্রভাবে এবং নিরপরাধে চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই হবে। পাশাপাশি, সম্পূর্ণরূপে গৃহস্থ আশ্রমের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত হতে হবে।
আসলে যে ব্রহ্মচারী কখনই তার ব্রহ্মচর্য ব্রত ভঙ্গ করেনি, তার পক্ষে যৌনবাসনাকে উপেক্ষা করা অনেক সহজ। যে যত বেশি করে সংযম পালন করবে, সংযম করার ক্ষমতাও তার ততগুণ বাড়তে থাকবে। যে যত বেশি করে অসংযত হবে, তার সংযম করার ক্ষমতাও ততগুণ কমে যাবে। এই বিপদের কথা স্মরণে রেখে কঠোরভাবে সংযম করতে হবে।
যুবক-যুবতীদের অবাধ মেলামেশা, টেলিভিশন, ভিডিও, চলচ্চিত্র ও যৌন উদ্দীপক গ্রন্থাদি ব্রহ্মচর্য জীবনের চরম শত্রু। বর্তমান যুগে এইসব আবর্জনার প্রভাব সর্বত্র। যথাসম্ভব এই সবের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হল, ব্রহ্মচারী যদি স্বেচ্ছায় তার। যৌনবাসনাকে নিয়ন্ত্রণ না করে, তা হলে তার পতন অনিবার্য। পরিস্থিতি তাকে সাহায্য করবে না।
কি ব্রহ্মচারী, কি গৃহস্থ—যদি সে কৃষ্ণভাবনামৃতের অনুশীলনে যথেষ্ট শক্তি অর্জন করতে পারে, তা হলে যে-কোনাে পরিমাণ যৌন বেগই তাকে আর অস্থির করতে পারবে না। উপস্থবেগ যদি তাকে আক্রমণও করে আসবে এবং চলে যাবে। শুদ্ধ সেবার মাধ্যমে মদনমােহন আর বৈষ্ণবদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে মদন তথা কামদেব অবশ্যই পরাভূত হবে। এই হল যুদ্ধ জয়ের একমাত্র অব্যর্থ কৌশল।
আদর্শ গৃহস্থ জীবন থেকে সংগ্রহীতর্
কোন মন্তব্য নেই