দুর্গের আশ্রয়ে যুদ্ধ
শ্রীকৃষ্ণভাবনামুতের অনুশীলন মায়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করার মততা। যৌন কামনা হল মায়ার সবচেয়ে শক্তিশালী বন্ধন। যে-সমস্ত জীব শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে গিয়ে এই জড় জগৎকে কেবলই ভােগ করতে চায়, তারাই যৌন আকাঙ্ক্ষার দ্বারা মােহিত হয়।
তাই কোনও ব্যক্তি যদি জড় জগতের বন্ধন অতিক্রম করতে চান, তবে তাকে অবশ্যই তার যৌন কামনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সমগ্র । বৈদিক সভ্যতার মূল পরিকল্পনাই হল এই যৌন কামনাকে দমন করা।
বৈদিক সমাজে সেজন্য চারটি আশ্রম ব্যবস্থার প্রচলন ছিল-১) ব্রহ্মচর্য, (২) গার্হস্থ্য, (৩) বানপ্রস্থ এবং (৪) সন্ন্যাস। এই চারটি। আশ্রমের মধ্যে ব্রহ্মচর্য, বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস—এই তিনটি আশ্রমেই যৌনজীবন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র গৃহস্থদের ক্ষেত্রেই পরমাণু পরিমাণ। যৌনজীবনের অনুমােদন দেওয়া হয়েছে এবং তাও শুধুমাত্র কৃষ্ণভক্ত। সন্তান উৎপাদন করার জন্যই ভােগের জন্য নয়।
এর অর্থ এই যে, যৌনজীবনকে সর্বত্রই নিরুৎসাহিত এবং নিন্দা করা হচ্ছে। কারণ সেটাই আমাদের জীবনে অশেষ দুঃখের ভিত্তি এবং আমাদের জড় বন্ধন আর চুরাশি লক্ষ যােনি ভ্রমণের মূল কারণ, এবং সেটাই আমাদের অনন্ত কোটিবার জন্ম, মৃত্যু, জরা এবং ব্যাধির হেতু।
এই জড় জগতে যুবক-যুবতীদের মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মে যৌন কামনা থাকা খুবই স্বাভাবিক, কিন্তু যুক্তিবুদ্ধি এবং সুগভীর দিব্যজ্ঞানের
সাহায্যে, শ্রীকৃষ্ণের কৃপাশক্তিতে শক্তিমান হয়ে সেই যৌন আবেগকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সকলকেই করতে হবে। সমাজের সকল স্তরে, সকল যুগে, সকল আশ্রম এবং সকল বর্ণের প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই এই কথা প্রযােজ্য।
তবে একটা কথা সব সময়ে মনে রাখতে হবে যে, কোনও ব্রহ্মচারী যদি অনুভব করে যে, এই বিষয়ে তার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বা চলে যাচ্ছে, অর্থাৎ সে যদি উপস্থবেগ ধারণ করতে একেবারেই অক্ষম হয়ে পড়ে, তখন তাকে অবশ্যই গৃহস্থ-আশ্রম বরণ করতে হবে। এমনকি, কোনও যুবক যদি ১৬/১৭ বছর বয়সেও তেমন অক্ষমতা বােধ করে, তা হলে তাকেও গৃহস্থ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত হতে হবে।
যে-সৈনিক, সম্মুখসমরে পরাজিত, তাকে অবশ্যই দুর্গের আশ্রয় নিয়ে যুদ্ধ করতে হবে। এই কথা শুধু ব্রহ্মচারীর ক্ষেত্রেই প্রযােজ্য। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে শত্রুর কাছে বশ্যতা স্বীকার করা চলবে না।
ব্রহ্মচারী, বানপ্রস্থী এবং সন্ন্যাসীরা মায়ার বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে নিযুক্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ব্রহ্মচারীরাই গৃহস্থ-আশ্রম বরণ করে বিবাহিতা পত্নীরূপ দুর্গকে আশ্রয় করে মায়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারেন। বানপ্রত্নী কিংবা সন্ন্যাসী কখনােই গৃহস্থ আশ্রমে ফিরে যেতে পারেন না। আর যারাই অবৈধ যৌনসঙ্গে লিপ্ত হচ্ছে, তারাই পলাতক এবং পরাজিত। কোনও পরিস্থিতিতে এই পলায়নী মনােবৃত্তিকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।
গর্গমুনি নামে শ্রীল প্রভুপাদের এক শিষ্য প্রভুপাদকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, যৌন সংযমের ক্ষেত্রে সম্মুখসমর তার পক্ষে খুবই কঠিন বলে মনে হচ্ছে। শ্রীল প্রভুপাদ তৎক্ষণাৎ তার বিবাহের ব্যবস্থা করে দেন। তিনি এখন সস্ত্রীক বেশ আনন্দের সঙ্গেই কৃষ্ণভাবনামৃতের প্রচার করে চলেছেন।
আদর্শ গৃহস্থ জীবন থেকে সংগ্রহীতর্
কোন মন্তব্য নেই