যথার্থ গৃহাশ্রমী কখনও উপেক্ষিত নন
শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভুর ধারায় অধিকাংশ ভক্তই গৃহস্থ। মহাপ্রভুর সমসাময়িক ভক্তবৃন্দ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত গৃহস্থ বৈষ্ণবের সংখ্যাই বেশি। স্বয়ং মহাপ্রভু এবং নিত্যানন্দ প্রভুও জীবশিক্ষার জন্য। গৃহস্থ আশ্রমের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। বৈষ্ণব আচার্যদের মধ্যে। অনেকেই ছিলেন গৃহস্থ। স্বয়ং শ্রীল ভক্তিবিনােদ ঠাকুর এবং শ্রীমদ ভক্তিবেদান্ত স্বামী শ্রীল প্রভুপাদও বহু বছর গৃহস্থ আশ্রমে অবস্থান করেই কৃষ্ণসেবায় নিযুক্ত ছিলেন।
শ্ৰীমন্মহাপ্রভু এবং তার অন্তরঙ্গ পার্ষদেরা ভালভাবেই জানতেন যে, এই অধঃপতিত কলিযুগে গৃহস্থ আশ্রমের সমাদরই হবে সবচেয়ে বেশি। তাই আদর্শ গৃহস্থ আশ্রমের ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত স্থাপিত না হলে বেশির ভাগ মানুষ গৃহস্থ আশ্রমের নামে গৃহমেধী জীবন যাপন করবেন। তাই শুধুমাত্র আদর্শ দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্যই মহাপ্রভু এবং তার অন্তরঙ্গ পার্ষদেরা গৃহস্থ আশ্রম বরণ করেছিলেন। সুতরাং গৃহস্থেরা বৈষ্ণব সমাজে উপেক্ষিত নন।
অনেকে প্রশ্ন করেন, শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর তার গৌড়ীয় মঠে গৃহস্থদের 'আশ্রয় দেননি, কিন্তু ইসকনে গৃহস্থরা একেবারে মন্দিরের মধ্যেই আশ্রয় পেয়ে যাচ্ছেন, সেটা অশাস্ত্রীয় কি না?
সাধারণত ভুল বােঝাবুঝি থেকেই এই ধরনের প্রশ্ন জাগে। শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের আদেশেই শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ বৈষ্ণব ধর্মাদর্শ প্রচার করেন সারা বিশ্বে। তার এই বিশ্বব্যাপী প্রচারের ফলেই গড়ে ওঠে বিশ্ব বৈষ্ণব সমাজ (Society)। মঠ যখন সমাজে পরিণত হল, তখন স্বাভাবিকভাবেই বৈদিক সমাজবিধি অনুসারে চার বর্ণ এবং চার আশ্রমের সমস্ত অনুগামীরাই তার অন্তর্ভুক্ত হালন।
স্বয়ং মহাপ্রভুর সময়েও গড়ে উঠেছিল এক বিপুল বৈষ্ণব সমাজ। শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত এবং শ্রীচৈতন্য ভাগবতাদি গ্রন্থসমূহ তৎকালীন গৃহস্থ বৈষ্ণবদের কাহিনীতে পরিপূর্ণ এবং তাদের প্রত্যেকের গৃহই ছিল এক-একটি কৃষ্ণমন্দির।
নিন্দুকেরা চিরকালই নিন্দা করবে। শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর যখন প্রথম গাড়িতে চড়ে প্রচার করেন, তখন অনেকেই তার নিন্দা করেছিল—তার আগে কোনাে বৈষ্ণব নাকি গাড়িতে চড়তেন না। শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের আগে কোনাে গৃহস্থ মন্দিরে আশ্রয় পাননি বলেই যে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘে তাদের আশ্রয়দান অশাস্ত্রীয়—এই সিদ্ধান্ত নিতান্তই ঈর্যাপ্রসূত। শুদ্ধ গৃহস্থ বৈষ্ণবদের প্রতি এই ঈর্ষা নিঃসন্দেহে অপরাধমূলক।
আদর্শ গৃহস্থ জীবন থেকে সংগ্রহীতর্
কোন মন্তব্য নেই