অভক্তদের পরিবেশে কৃষ্ণভাবনা
গৃহস্থদের পক্ষে সব সময় মন্দিরে বসবাস করা সম্ভব হয় না। যদি এমন হয় যে, কোনও কৃষ্ণভক্ত গৃহস্থকে এমন এক পরিবেশে থাকতে হল, যেখানে প্রায় সবাই অভক্ত, সেক্ষেত্রে গৃহস্থ ভক্তদের হতাশ হওয়া উচিত নয়। একজন যথার্থ কৃষ্ণভক্ত নরকেও সুন্দরভাবে মানিয়ে চলতে পারেন। যিনি পূর্ণরূপে কৃষ্ণভাবনাময়, বাইরের কোনও পরিস্থিতিই তাকে প্রভাবিত করতে পারে না। কারণ তিনি সর্ব অবস্থাতেই চিন্ময় স্তরে অবস্থান করেন।
শ্রীল প্রভুপাদ, যখন গৃহস্থ আশ্রমে ছিলেন, তখন তার পরিবার। পরিজন কৃষ্ণভাবনার অনুকুল ছিল না। তিনি যেহেতু ওষুধের ব্যবসা করতেন, তাই সব সময়েই তাকে এখানে-সেখানে যাতায়াত করতে হত এবং বহু বিষয়ী মানুষের সঙ্গ করতে হত। বাইরের বিচারে তাকে একজন ঘাের ব্যবসায়ীর মতােই ব্যস্ত থাকতে হত। কিন্তু তার চেতনা ছিল সম্পূর্ণরূপে কৃষ্ণভাবনাময় ভাগবতে বলা হয়েছে ।
নারায়ণপরা সর্বে ন কুতশ্চন বিভ্যতি।
স্বৰ্গাপবর্গরকেপি তুল্যার্থ দর্শিনঃ। (ভাঃ ৬/১৭/২৮)
একজন নারায়ণপরায়ণ ব্যক্তি কোথাও ভয় পান না। স্বর্গ, অপবর্গ, কিংবা নরকপ্রাপ্তি—সর্ব অবস্থাতেই তিনি সমদর্শী। কারণ তার চেতনা সম্পূর্ণরূপে শুদ্ধ। তাই জড় জগতের কোনাে গুণই তার চেতনাকে প্রভাবিত করতে পারে না। শ্রীল ভক্তিবিনােদ ঠাকুর গেয়েছেন
গৃহে থাক, বনে থাক,
সদা হরি বলে ডাক
(গীতাবলী)
এখানে 'গৃহে থাক’ বলতে সাধারণত গৃহস্থদের কথাই বােঝানাে হয়েছে। গৃহস্থ ভক্তরা গৃহে অবস্থান করলেও, তাদের চেতনাকে সর্বদাই | বৈকুণ্ঠ চেতনায় রূপান্তরিত করতে হবে। চেতনা যদি বৈকুণ্ঠ বা বৃন্দাবন হয়ে ওঠে, তখন নরও বৈকুণ্ঠ বা বৃন্দাবন। স্থান নয়, তৎপর। সেবাবৃত্তিই শুদ্ধ ভক্তের তৃপ্তির উৎস।
সুতরাং মন্দিরবাসী ব্রহ্মচারী বা সন্ন্যাসী ছাড়া শুদ্ধ কৃষ্ণভক্ত হওয়া অসম্ভব—এই ধারণা ত্যাগ করতে হবে। বরং মন্দিরবাসী হয়েও, ব্রহ্মচারী বা সন্ন্যাসীর পােশাক পরেও একজন নারকীয় জীবন যাপন করতে পারে। তাই প্রতিটি গৃহস্থকেই জোর দিতে হবে ভাব বা চেতনার উপর। তা হলেই ভাবগ্রাহী জনার্দন সন্তুষ্ট হবেন।
আদর্শ গৃহস্থ জীবন থেকে সংগ্রহীতর্
কোন মন্তব্য নেই