গৃহস্থ জীবনের সমস্যা
কাম-বাসনা চরিতার্থ করার জন্য নারী পুরুষের সংযােগ অত্যাবশ্যক। আর এই তাৎক্ষণিক সংযােগ থেকে জন্ম নিচ্ছে অজস্র সমস্যা। ব্রহ্মলােক থেকে শুরু করে নিম্নতম লােক পর্যন্ত সর্বত্রই, সমস্ত শ্রেণীর জীব এই ব্যাপারে কম-বেশি একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। মূর্খ মানুষেরা প্রতি মুহূর্তে এই সংযােগের ভয়াবহ পরিণতি লক্ষ্য করছে। কিন্তু তবুও তা বর্জন করার জন্য পর্যাপ্ত বুদ্ধি তাদের। একেবারেই জাগ্রত হয় না। একেই বলা হয় পশ্যন্নপি ন পশ্যতি । (ভাঃ ২/১/s) অর্থাৎ দেখেও দেখে না।
দেখেও, যে দেখে না, তাকেই বলা হয় জড়বাদী। সত্যিকারের জড়বাদী বা অসুর জানে কোন্টা পাপ, কোল্টা মন্দ। কিন্তু তবুও সে পাপ না করে থাকতে পারে না। দৃষ্টান্তস্বরূপ, ধৃতরাষ্ট্র জানতেন, তিনি। পাপ করছেন। তিনি জানতেন, শ্রীকৃষ্ণ হলেন ভগবান এবং তার সন্তুষ্টিবিধান করা প্রতিটি জীবের কর্তব্য। একবার তিনি শ্রীকৃষ্ণের কাছে | তা স্বীকারও করেছিলেন। কিন্তু তবুও কার্যক্ষেত্রে তিনি তা অনুসরণ করতে পারেননি। কাম, ক্রোধ, লােভ—এই সমস্ত রিপুগুলি এতই প্রবল যে, কোনাে জ্ঞানী ব্যক্তিও এদের দমন করতে ব্যর্থ হয়ে পড়ে। | সে জ্ঞানী হলেও অভক্ত। একমাত্র শুদ্ধ ভক্তই কামের বেগ সম্পূর্ণ সহ্য করতে পারেন। না হলে প্রতি মুহুর্তে কামের ভয়াবহ কুফল লক্ষ্য করলেও, পশ্যন্নপি ন পশ্যতি (ভা : ২/১/৪)—দেখেও না দেখার মতাে তা কেবল ভােগই করে যেতে হবে। অর্থাৎ আমরা জড়বাদীর | স্তরেই থেকে যাব।
এই কুফল সম্বন্ধে সচেতন হওয়ার জন্যই বৈদিক শিক্ষা-ব্যবস্থায় বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত কঠোর ব্রহ্মচর্য শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল। ছেলেদের ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত এমন এক পরিবেশে রাখা হত, যেখানে স্ত্রী-সঙ্গের কোনাে সুযোেগই থাকত না। এইভাবে ব্রহ্মচর্য পালনের মাধ্যমে ছাত্ররা তার সুফল সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করত এবং কাম উপভােগের ভয়াবহ পরিণতি সম্বন্ধে সচেতন হত। তাই সত্যিকারের ব্রহ্মচারীর পক্ষেই যথার্থ গৃহস্থ হওয়া সম্ভব।
আদর্শ গৃহস্থ জীবন থেকে সংগ্রহীতর্
কোন মন্তব্য নেই