অর্চনের সংজ্ঞা ও লক্ষ্য
শ্রীমদ্ভাগবতের মধ্যে প্রহ্লাদ মহারাজের উক্তি অনুসারে নবধা ভক্তি অনুশীলনের একটি অঙ্গরূপে অর্চাবিগ্রহের মাধ্যমে বিধিবদ্ধ আরাধনার উল্লেখ রয়েছে। শ্রীল রূপ গােস্বামী। ‘অর্চন’ প্রসঙ্গে বিশেষ সংজ্ঞা প্রদান করে ভক্তিরসামৃতসিন্ধু (১/২/১৩৭) গ্রন্থে লিখেছেন—
শুদ্ধিন্যাসাদি পূর্বাঙ্গ কর্মর্নির্বাহপূর্বকম্ ।
অৰ্চনং তৃপচারাণাং স্যান্মন্ত্রেণােপপাদন ॥
ভূতশুদ্ধি ও ন্যাসাদি রূপ পূর্বাঙ্গ কর্মাদি অর্থাৎ প্রারম্ভিক শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়াদি সমাপনান্তে মন্ত্রোচ্চারণসহ উপচারাদি অর্থাৎ পূজার উপকরণসমূহ অর্পণের নাম অৰ্চন।
শ্রীল রূপ গােস্বামী প্রদত্ত অর্জনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বিগ্রহ অর্জনের মধ্যে বিবিধ প্রকার ক্রিয়াকলাপ থাকে যেগুলির মধ্যে কতকগুলি নিতান্তই নিয়মতান্ত্রিক কিংবা “শাস্ত্রবিধি অনুসারী। কিন্তু মানুষ যদি বিগ্রহ অর্চনের লক্ষ্য মনের মধ্যে সুপরিস্ফুট রাখতে পারে, তা হলে অর্চনের বিভিন্ন অঙ্গগুলির বিবিধ নিয়মতান্ত্রিক বিধিবিধানসমূহ যথার্থ উদ্দেশ্য সাধনে।
সক্ষম হয়, যে-উদ্দেশ্যটি হল পরম পুরুষােত্তম ভগবানের প্রীতিসাধন। যদি আমরা অর্চনের অর্থ উপলব্ধি করতে পারি—যা হল, পরমেশ্বর ভগবানের সেবায় নিয়মনিষ্ঠ ও বিধিবদ্ধভাবে শ্রদ্ধাভক্তি ও প্রীতি নিবেদন—তা হলে তখনই শুদ্ধিকরণের জন্য নির্ধারিত পদ্ধতি-প্রক্রিয়াদি পরমােৎসাহে পালনের মাধ্যমে, অৰ্চনের বিভিন্ন উপচার-উপকরণাদি স্থাপনের মাধ্যমে এবং পূজা আরাধনা নিবেদনের মাধ্যমে, আমরা শ্রদ্ধা সহকারে অর্চন পদ্ধতি পালন করতে পারি। তখনই আমরা পূজা অর্চনের যে লক্ষ্য—ভগবৎ-প্রেম অর্জন—সেই লক্ষ্যে উপনীত হতে পারি।
শ্রীল রূপ গােস্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে, শ্রীল প্রভুপাদ তার রচনাবলী এবং তার শিষ্যসমূহের কাছে ব্যক্তিগত উপদেশ নির্দেশাদির মাধ্যমেও অর্চন পদ্ধতির পূর্ণাঙ্গ পরামর্শ দিয়ে গেছেন। ভক্তগণ যেভাবে বিগ্রহ অর্চনা অনুসরণ করবে বলে তিনি অভিলাষ করেছিলেন, সেই বিষয়েও তিনি বহু বিশদ পরামর্শ দিয়ে গেছেন। ভগবদ্ভক্তির প্রারম্ভিক বিধিবিধানে ভক্তরা যাতে দৃঢ়প্রত্যয় হতে পারেন, সেই বিষয়ে তাদের সাহায্যের উদ্দেশ্যেই এই সব বিশদ বিধিবিধান। এইগুলি সম্পর্কে পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে
মতব্যঃ সততং বিষ্ণুবিস্মর্তব্যো ন জাতচিৎ।
সবে বিধিনিষেধাঃ স্যুরেয়ােরেবকিরাঃ ॥
ভগবান বিষ্ণু (অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ) স্মরণ সতত করা আবশ্যক এবং কদাচ তার বিস্মৃতি
অনুচিত। শাস্ত্রে উল্লিখিত সর্ববিধ বিধিবিধান ও অনুশাসনাদি এই দুটি নীতির - দাসরূপে বিবেচিত হবে।
পঞ্চরাত্র প্রদীপ থেকে সংগ্রহীতর্
কোন মন্তব্য নেই