পুরুষোত্তম মাস কেন হয়

 প্রাচীন জ্যোতিষ—গ্রন্থাবলিতে অধিক মাস সম্পর্কে অনেক তথ্য 

রয়েছে। আমরা যে গৌরাব্দ পঞ্জিকা ব্যবহার করি এটি সরাসরি 

চান্দ্রীয় বর্ষগণনা পদ্ধতির নয়, আসলে চান্দ্র ও সৌরবর্ষের 

একটি মিশ্রণ। এ বিষয়ে জানতে হলে প্রথমে সৌর ও 

চান্দ্রমাসের সম্পর্ক সম্বন্ধে জানতে হবে।




সৌর ও চান্দ্রমাস : ‘রাশি সংক্রমণাৎ সৌর’Ñ রাশিচক্রে যে 

বিন্দু হতে গ্রহসমূহের অবস্থান নির্ণয় করা হয়, তাকে আদিবিন্দু

বলে। গৃহীত স্থির আদিবিন্দু হতে ত্রিশ অংশ অন্তরে সূর্যকেন্দ্র 

আসলে তাকে সংক্রান্তি বলা হয়। এক সংক্রান্তি থেকে অপর 

সংক্রান্তি পর্যন্ত সৌরমাস গণনা করা হয়। গড়ে প্রতি 

সৌরমাসের দৈর্ঘ্য ৩০ দিন, ১০ ঘণ্টা, ৩০ মিনিট, ৪৬ 

সেকেন্ড। ১ সৌরবর্ষে মোট ৩৬৫.২৫৮৭ দিন। আবার, 

‘দর্শান্তশ্চান্দ্রমাসকঃ’Ñ কোনো সৌরমাসে যে অমাবস্যা হয়,

তার পরবর্তী দিন থেকে যে মুখ্য চান্দ্রমাস ধরা হয়, তার নাম 

ঐ সৌরমাসের নামে নামাঙ্কিত করা হয়। গড়ে প্রতি চান্দ্রমাস 

২৯ দিন, ১২ ঘণ্টা, ৪৪ মিনিট, ৩ সেকেন্ডে পূর্ণ হয়। চান্দ্র 

বছরে মোট ৩৬০টি তিথি থাকে।

লক্ষণীয় যে, প্রতি চান্দ্রমাস ও সৌরমাসের দৈর্ঘে্যর পার্থক্যের 

কারণে প্রতি মাসে ১৯ থেকে ২৬ ঘণ্টার (গড়ে ২৩ ঘণ্টা, ৩৭ 

মিনিট ও ২৮ সেকেন্ড) একটি ব্যবধান থেকে যায়। অর্থাৎ 

চান্দ্রবর্ষের ৩৬০টি তিথিতে সর্বমোট ৩৫৪.৩৬ সৌরদিন 

লাগে। ফলে প্রতি বছর চান্দ্র ও সৌরমাসের মধ্যে ১০ দিন, ২১ 

ঘণ্টা, ৩৫ মিনিটের পার্থক্য হয়। এই অতিরিক্ত ১০ দিন ২১ 

ঘণ্টা (২৯.৫৩*১০.৬৩) গড়ে ২.৭১ বছর বা ৩২.৫ মাসে 

সমন্বয় করা হয়। ৩২টি সৌরমাসের জন্য ৩৩টি চান্দ্রমাস। 

মোটকথা, চান্দ্র ও সৌর বর্ষের মধ্যে সমন্বয় রাখার জন্য তিনটি 

সৌর বছরের মধ্যে একটি অতিরিক্ত মাস সমন্বয় করতে হয়। 

সাধারণত, প্রতি ১৯ বছরে ৭টি অধিমাস পরে। এটি নির্ভর 

করে গ্রহসঞ্চারের সময়ের ওপর ভিত্তি করে। কখনো সেটি ২৮ 

মাস, কখনো ৩১, ৩২, ৩৩ বা ৩৫ মাস হতে পারে। এজন্য 

মহাভারতে পাঁচ বছরে দুটি অতিরিক্ত মাসের কথা বলা হয়েছে।

কেননা প্রতি তিনবছর পর পর এমনটি সময় আসে যখন সূর্যের 

একটি রাশিতে ভ্রমণের সময়ে বা একটি সৌরমাসে দুটি অমাবস্যা 

বা তিনটি প্রতিপদ চলে আসে। প্রথম প্রতিপদের পর থেকে অধিক 

মাস শুরু হয়। দ্বিতীয় অমাবস্যা পরবতীর্ প্রতিপদ থেকে প্রকৃত

সৌরমাস হিসাব করা হয়। অধিক মাসে সৌর সংক্রান্তি হয় না। 

অধিক মাসকে সৌরবছরের কোনো মাসের সাথে সংযুক্ত করে 

নামকরণ করা হয়। যে চান্দ্র মাসে সূর্য একটি রাশি থেকে অন্য 

রাশিতে গমন করে না, বরং মাসজুড়ে একটি নির্দিষ্ট রাশিতেই 

অবস্থান করে, তাহলে সেই মাসটির নাম পরবর্তী মাসের নাম 

অনুসারে হয় এবং এর সাথে ‘অধিক’ শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়। 

কার্তিক ও মাঘ মাসে কখনো অধিক মাস হয় না।



উদাহরণ হিসেবে, যদি কোনো মাসে সূর্য মেষ রাশিতে গমন না 

করে পূর্ববর্তী রাশিতেই স্থিত থাকে, তবে ওই মাসটির নাম হবে 

অধিক চৈত্র মাস। পরবর্তী মাসে সূর্য অন্য রাশিতে গমন করে, 

তাই সেই পরবর্তী মাসটি শুধু চৈত্র নামে পরিচিত হয়।

এই অধিমাস সংযোজন কৃত্রিম নয়, বরং স্বাভাবিক। উপরন্তু 

বৈদিক শাস্ত্রের অভ্রান্ততার একটি নিদর্শন। অতিরিক্ত মাসের 

সমন্বয় না করা হতো তবে কী হতো? তখন আমরা বিভিন্ন ঋতুতে 

পালনীয় ভগবানের ব্রত—উৎসবাদি উদ্যাপন করতে পারতাম না। 

তখন বৈশাখ মাসের গ্রীষ্মের দাবদাহের সময় পালিত চন্দনযাত্রা 

মহোৎসব কখনো কখনো চলে যেত মাঘ মাসের হাড় কাঁপানো 

শীতের সময়। এই গরমিল দূর করার লক্ষ্যেই অধিমাসের 

সংযোজন।

কোন মন্তব্য নেই

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.