জীবে দয়া পরম ধর্ম", জীবকে কেমনভাবে দয়া করা যায়? কোন্ দয়া সর্বশ্রেষ্ট?





❈❀━┉এই পৃথিবীতে মানুষ মায়াবদ্ধ হয়ে, ভগবানের সঙ্গে নিত্য সম্পর্কের কথা ভুলে গিয়ে মায়ার দাসত্ব করতে থাকে। ভগবানের স্মৃতি মানুষের মস্তিষ্ক থেকে যে বিলুপ্ত হয়ে যায় সে কথা স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন--

"সর্বস্ব চাহং হৃদি সন্নিবিষ্টো মত্তঃ স্মৃতির্জ্ঞানমপোহনং চ।"

  অর্থাৎ,"আমি সবার হৃদয়ে অবস্থিত এবং আমার থেকে সমস্ত জীবের স্মৃতি জ্ঞান উৎপন্ন হয়। আবার বিলুপ্ত হয়।"(গীতা-১৫/১৫)

 

❈❀━┉এই মায়াবদ্ধ জীবদের প্রকৃত দয়া কিভাবে করা সম্ভব? শাস্ত্রে বদ্ধ জীবেদের প্রতি তিন প্রকারে দয়া করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে--

()দেহ-সম্বন্ধীয় দয়া,

()মন-সম্বন্ধীয় দয়া,

()আত্মা-সম্বন্ধীয় দয়া।

 

❈❀━┉()দেহ-সম্বন্ধীয় দয়াঃ- আমাদের এই স্থূল দেহ-সম্বন্ধীয় দয়া বলতে বোঝায়-ক্ষুধার্ত জীবকে খাদ্য দান, পীডিত জীবকে ঔষধ দান, তৃষ্ণার্ত জীবকে জল দান, শীত পীড়িত জীবকে আচ্ছাদন দান ইত্যাদি।  যদিও আমাদের এই সমস্ত দান করা কর্তব্য তথাপিও এই দান সর্বশ্রেষ্ট নয়, কারণ এই সমস্ত দানে জীবের প্রকৃত কল্যাণ হয় না, ক্ষণস্থায়ী একটু সুখ প্রদান করা যায় মাত্র, চিরস্থায়ী সমাধান বা সুখ প্রদান করা যায় না। আবার এই দয়া দ্বারা  কিছু  পূণ্য লাভও করা যায়, তার ফলে ক্ষণস্থায়ী কিছু শুভ ফল অথবা স্বর্গলোকে কিছুকাল সুখে বাস হতে পারে, কিন্তু সেই সুখও অনিত্য। তাছাড়া পাপ পূণ্য দুটোই  ভব-বন্ধনের কারণ, জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আবদ্ধ থাকার মূল কারণ হল পাপ পূণ্য।

 

❈❀━┉()মন-সম্বন্ধীয় দানঃ- মন সম্বন্ধীয় দান বলতে বোঝায়, জড়-বিদ্যা যাকে বলা হয় অবিদ্যা দান করা, কোনও সংকটকালীন পরিস্থিতিতে কাউকে বুদ্ধি দান করা ইত্যাদি। কিন্তু এই দয়াও জীবের প্রকৃত কল্যাণ করতে পারে না। কারণ জড়-বিদ্যা, বুদ্ধি দান করলেও জীবকে এই জড় জগতের বন্ধনেই আবদ্ধ করে রাখে।

 

❈❀━┉আত্মা-সম্বন্ধীয় দয়াঃ-আত্মা-সম্বন্ধীয় দয়া বলতে জীবাত্মার প্রকৃত পরম মঙ্গলের উপায় প্রদর্শন করানো অর্থাৎ পরাবিদ্যা দান করা। বদ্ধ-জীবের অনন্তকালের  সমস্ত দুঃখ-কষ্ট, ত্রিতাপ-জ্বালা, উৎকট মায়া, সংসার-আসক্তি, সমস্ত পাপ-পূণ্যের বন্ধন, সমস্ত কর্তব্য, সমস্ত ঋণ থেকে মুক্তির উপায় হল একমাত্র "কৃষ্ণ-স্মৃতি জাগরিত করিয়ে, কৃষ্ণভক্তি প্রদান করা। সুতরাং জড়বুদ্ধিসম্পন্ন জীবকে জড়বিদ্যার আবরণ থেকে মুক্ত করে পরাবিদ্যা অর্থাৎ কৃষ্ণভক্তির জ্ঞান প্রদান করে সংসারক্লেশ থেকে উদ্ধার করাই হল আত্মা-সম্বন্ধীয় দয়া। এই আত্মা-সম্বন্ধীয় দয়াই হল জীবাত্মার প্রতি মহান দয়া এটিই সর্বশ্রেষ্ট দয়া।

•••••••┈┉━❀❈🙏🏻❈❀━┉┈•••••••

 

❈❀━┉┈কর্মকাণ্ডীয় ব্যক্তিরা জীবের পরম মঙ্গল বা নিত্য মঙ্গল সম্বন্ধে ততদূরে অন্বেষন করেন না, তাই তারা দেহ-সমন্ধীয় দয়াকেই বড়ই শুভ বলে মনে করেন।

   জ্ঞানকাণ্ডীয় ব্যক্তিরা মন-সম্বন্ধীয় অর্থায় জড়-বিদ্যা সম্বন্ধীয় দয়াকেই অধিক আদর করেন। কিন্তু জীবের প্রকৃত পরম মঙ্গলকারী শুদ্ধ কৃষ্ণভক্তগণ ভক্তির প্রচারের দ্বারা জীবের নিত্য মঙ্গল সাধনের জন্য অধিক যত্ন করেন। অনিত্য দুঃখময় জগৎ থেকে সচ্চিদানন্দময় পরম ধামে পৌঁছাবার সুযোগ করে দেওয়াই জীবের প্রতি সর্বশ্রেষ্ট দয়া।

 

❈❀━┉শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে--

 

  তব কথামৃতমং তপ্তজীবনং

      কবিভিরীড়িতং কল্মষাপহম্।

 শ্রবণমঙ্গলম্ শ্রীমদাততং

ভুবি গৃণন্তি যে ভূরিদা জনাঃ(ভাঃ১০/৩১/)

হে প্রভু,বহু জন্মের বহু সুকৃতিকারী মানুষেরা জগতে এসে,তোমার প্রেমতপ্ত ব্যক্তিদের জীবনস্বরূপ,কবিদের সঙ্গীত,কলুশনাশী,শ্রবণমঙ্গল,সর্বতাপক্লিষ্ট,সর্ব-ব্যাপক তোমার কথামৃত সারা জগৎজুড়ে প্রচার করেন।তাঁরাই সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা।

•••••••┈┉━❀❈🙏🏻❈❀━┉┈•••••••

          ভব-সমুদ্র পারের উপায়

•••••••┈┉━❀❈🙏🏻❈❀━┉┈•••••••

 ভব-সমুদ্র পারের একমাত্র উপায় হল-"কৃষ্ণকথা শ্রবণ।

 শ্রীমদ্ভাগবতেই কৃষ্ণকথা শ্রবণ মাহাত্ম্য বলা হয়েছে--

 

 পিবন্তি যে ভগবত আত্মনঃ সতাং

          কথামৃতং শ্রবণপুটেষু সম্ভূতম্।

     পুনন্তি তে বিষয়বিদূষিতাশয়ং

          ব্রজন্তি তচ্চরণসরোরুহান্তিকম্॥

 

 "যাঁরা ভক্তদের অত্যন্ত প্রিয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথামৃত শ্রবণপুটে পান করেন তাঁদের জড়বিষয়ভোগে দুষিত অন্তঃকরণ পবিত্র হয়ে যায় এবং ভগবানের শ্রীপাদপদ্মসমীপে  তাঁরা গমণ করেণ।"

 

আরও বলা হয়েছেঃ--

শৃণ্বতঃ শ্রদ্ধয়া নিত্যং গৃণতশ্চ স্বচেষ্টিতম্।

কালেন নাতিদীর্ঘেন ভগবান বিশতে হৃদি॥

 

"যাঁরা নিয়মিতভাবে শ্রদ্ধা সহকারে কৃষ্ণকথা শ্রবণ করেন,তাঁদের হৃদয়ে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অচিরেই প্রকাশিত হন।"

 

 শ্রীল পরীক্ষিত মহারাজ  শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণ করতে করতেই ভগবদ্ধামে উন্নীত হয়েছিলেন।কৃষ্ণকথা শ্রবণ করতে শ্রদ্ধা নেই বলেই তো ভবসংসারে জীব বদ্ধ হয়ে রয়েছে।অতএব হে ভক্তবৃন্দ আসুন আমরা সর্বদাই কৃষ্ণকথারূপ পবিত্র গঙ্গায় অবগাহন করে নিজেদের হৃদয়কে পবিত্র করে সময় কে সার্থক করে তুলি।

 

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥

কোন মন্তব্য নেই

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.