শ্রীমদ্ভগবত গীতার আলোকে কলুষতা দূরীভূত করার স্ব-প্রচেষ্টা
নববর্ষ ২০২২
এর অঙ্গীকার হতে পারে শ্রীমদ্ভগবত গীতার আলোকে কলুষতা দূরীভূত করার স্ব-প্রচেষ্টা গ্রহণই
দেবানাং শুদ্ধসত্ত্বানামৃষীণাং
চামলাত্মনাম্।
ভক্তিমুকুন্দচরণে
ন প্রায়োণোপজ্ঞায়তে
ভোগবাসনা
রহিত না হলে সত্ত্বগুণ সমপন্ন দেবতা, ঋষি বা অন্য যেকেউ সে যে গুণেই অবস্থান করুণ না
কেন কূলুষমুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণে শুদ্ধ ভক্তি
লাভ করতে সক্ষম হন না।
জড় জগতের
আসক্তি স্ত্রী-পুত্র, পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, দেহাত্মবুদ্ধিতে নিজ গুরু-শিষ্য
ইত্যাদি আসক্তি অর্থাৎ যাদের উদ্দেশ্য হইলোক ও পরলোকে দৈহিক সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করা
অথবা সেই ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্খাকারী কর্মী ও জ্ঞানীরা তাদের বুদ্ধিজনিত জ্ঞানের অভাবের ফলে কখনো পরাভক্তি লাভ করতে সক্ষম হন না।
শ্রীল জীবগোস্বামীপাদ
বলেন-
সত্ত্বগুণে
অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা পুর্ণ্যবান ও ধার্মিক হয়েও যদি পারমার্থিক স্তরের উচ্চতর চেতনা
সম্পন্ন না হন তবে পরম সত্য সম্পর্কে যর্থাথ জ্ঞান লাভ করতে অসমর্থ হন । তাই সত্ত্বগুণে
অধিষ্ঠিত অনেক দেবতারাও শ্রীকৃষ্ণকে উপলদ্ধি করতে পারেননি।
আর নিজের
অস্তিত্বের বাস্তবতা উপলদ্ধি করতে না পারা এবং তার পারিপাশ্বিক জগৎ সম্বন্ধে মনগড়া
ধারণা করে ভগবদ্ধামের অস্বিত্ব সম্বন্ধে অনুরূপ ধারণা পোষনকারীরা হন রজগুণ সম্পন্ন
।
জীবনের উচ্চতর
উদ্দেশ্য রহিত হয়ে তমগুনীরা তাদের মনকে বিভিন্ন ধরনের আহার, নিদ্রা, আত্মরক্ষা মৈথুন চিন্তায় মগ্ন রেখে ইন্দ্রিয়তৃপ্তি দায়ক উপলদ্ধ জ্ঞান
অর্জন করার ফলে সর্বদা প্রভাব বিস্তার করতে তৎপর থাকেন।
কৃষ্ণভিন্ন দৈহিক বা মনে প্রভাববিস্তারকারী অন্য যে কোন আসক্তি
রহিত না হলে কি প্রকৃতির গুণের উর্ধ্বে কৃষ্ণভাবনার
যে দিব্যস্তর তাতে উপনীত হওয়া কখনো সম্ভব হবে
? আর কৃষ্ণভাবনামৃতের উচ্চতর রসাস্বদের দিব্যস্তরে যতক্ষণ না উপনীত হচ্ছেন ততক্ষণ স্বরূপগত অবস্থান ও মুক্তস্তরের কার্যকলাপ কি উপলদ্ধ করা সম্ভব ?
শ্রীল প্রভুপাদ
বলেন- কেউ যতক্ষণ না তার চিন্ময় স্বরূপ উপলদ্ধি করতে পেরে অন্য আশা ছেড়ে কেবল শ্রীকৃষ্ণে
শরণাগত না হন ততক্ষণ তার সত্যিকারের আত্মউপলদ্ধি হয় না। আত্ম-উপলদ্ধির অর্থ হচ্ছে কৃষ্ণের
সঙ্গে নিজের সম্পর্ক উপলদ্ধি করা।
শ্রীল প্রভুপাদ
আরও বলেন-”পৃথিবীর বর্তমান সঙ্কটজনক অবস্থার কারণ হচ্ছে সবাই নিজেকে কর্তা মনে করছে
। নেতারা তো আরও বেশি। ত্রিগুণ দ্বারা ক্রিয়ামান সমস্ত কার্য্যকে স্বীয় কার্য্য বলে
মনে করে -
”আমি কর্তা-এই রকম অভিমান করে।”
এটা হচ্ছে
নেতাদের অজ্ঞতা, তারা ভুলে যাই যে ভগবানের ইচ্ছাক্রমে তারা নেতৃত্বের পদ লাভ করেছে।
যেহেতু তাঁরা
ভগবান কর্তৃক সেই পদে নিযুক্ত হয়েছেন তাই তাদের কর্তব্য ভগবানের পরামর্শ অনুযায়ী কার্য্য
করা, ভগবদ গীতায় ভগবান যে নির্দেশ দিয়েছেন সেই নির্দেশ অনুসারে কাজ করা যার ফলে সকলেই
সন্তাষ্ট হবে কোথাও কোন রকম অশান্তি থাকবে না।”
কিন্তু আমরা
কি সকলে সেই কাজটি করছি ? যে প্রতিনিধিরা ভগবানের এই নির্দেশিত পন্থার অনুসরণ না করে
আরও ক্ষমতাধর হওয়ার লোভে অনুচর প্রতিনিধিত্বকারী নির্বাচন করছে তাদেরকে কি আমরা সম্মিলিত
ভাবে প্রতিহত করতে সচেষ্ট হয়েছি ? কেন আমরা তা করছি না ? নিজে অগ্রসর হয়ে আমরা যদি
তাতে ভূমিকা না রাখি তাহলে শ্রীল প্রভুপাদ কি আমাদের প্রতি খুশি হবেন ?
শ্রীল প্রভুপাদ বলছেন- কেউ সত্ত্ব, রজ তম যে গুণেই অবস্থান করুণ না কেন হৃদয়ের কলুষ মুক্ত হলে সে কখনো শুদ্ধ ভক্ত হতে পারে না। আর নিজের মধ্যে থাকা মাৎসর্য্যপর কলুষতা মুক্ত করতে পারস্পরিক কলুষমুক্ত সঙ্গের প্রয়োজন বিধায় আমাদের স্ব স্ব প্রচেষ্টা গ্রহণ করাই কি সমুচিত নয়? এই শোক নাম বলি লয় মহামন্ত্র ।
ষোল নাম বত্রিশ-অক্ষর এই তন্ত্র ।।
সাধিতে সাধিতে যবে প্রেমাংকুর হবে।
সাধ্যসাধন-তত্ত্ব জানিবা সে তবে
(চৈঃ ভাঃ আঃ ১৪ অধ্যায়)
কোন মন্তব্য নেই