শ্রীশ্রীকৃষ্ণনামাষ্টকম
নিখিল-শ্রুতি-মৌলিরত্নমালানিখিল-
দ্যুতি-নীরাজিত-পাদপঙ্কজান্ত।
অয়ি! মুক্তকুলৈরুপাস্যমানং
পরিতস্ত্বাং হরিনাম সংশ্রয়ামি ॥১॥
হে হরিনাম! তুমি শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহ থেকে অভিন্ন বলে নিখিল উপনিষদ-রূপ রত্নমালার কিরণ দ্বারা তােমার শ্রীপাদপদ্মের নখরসমূহ নির্মঞ্ছিত হচ্ছে, অর্থাৎ সমস্ত বেদগণ তােমার পাদ পদ্ম প্রান্তেরও মহিমা কীর্তন পূর্বক স্তব করছে এবং যােগী, ঋষি প্রভৃতি মুক্ত পুরুষগণও তােমার উপাসনা করছেন; অতএব আমি সর্বতােভাবে তােমার আশ্রয় গ্রহণ করছি।
জয় নামধেয়! মুনিবৃন্দ গেয়!
জন-রঞ্জনায় পরমক্ষরাকৃতে ।
ত্বমনাদরাদপিমনাগুদীরিতং
নিখিলােগ্রতাপ-পটলীং বিলুম্পসি ৷৷ ২ ৷৷
হে কৃষ্ণনাম! মুনিগণ সর্বদা তােমাকে কীর্তন করছেন, তুমি নিখিল জনমণ্ডলীর চিত্ত বিনোেদনার্থে পরম-অক্ষর-রূপ আকৃতি অর্থাৎ বিগ্রহ ধারণ করেছ এবং অবহেলাপূর্বকও যদি কেউ তােমাকে একবার মাত্র উচ্চারণ করে, তাহলে তুমি তার ভীষণ পাপরাশি ধ্বংস ক’রে থাক; অতএব হে নাম! তােমার জয় হােক।
যদাভাসােহপ্যুদ্যন্ কবলিত-ভবধ্বান্ত-বিভবাে
দৃশং তত্ত্বান্ধানামপি দিশতি ভক্তি-প্রণয়িনীম্ ।
জনস্তস্যোদাত্তং জগতি ভগবন্নাম-তরণে
কৃতী তে নির্বক্তুং ক ইহ মহিমানং প্রভবতি ॥ ৩ ৷৷
হে কৃষ্ণনাম-রূপ সূর্য! যদি কেউ কোনও সঙ্কেতে বা আভাসেও তােমাকে উচ্চারণ করে, তাহলে তুমি তার সংসারাসক্তি-রূপ অজ্ঞানান্ধকার দূরীভূত ক’রে থাক এবং তুমি তত্ত্বজ্ঞান-বিহীন ব্যক্তিকেও কৃষ্ণভক্তি বিষয়িণী জ্ঞান-দৃষ্টি প্রদান করে’ থাক; অতএব হে নাম! এ জগতে এমন বিদ্বান্ কে আছেন যে তিনি তােমার মহিমা বর্ণন করতে সমর্থ হবেন?\n\n
যদ্ ব্রহ্ম-সাক্ষাৎ-কৃতিনিষ্ঠয়াপি
বিনাশমায়াতি বিনা ন ভােগৈঃ ।
অপৈতি নাম! স্ফুরণেন তত্তে
প্রারব্ধ-কর্মেতি বিরৌতি বেদঃ ৷৷ ৪ ।।
অবিচ্ছিন্ন তৈল-ধারার মতাে নিষ্ঠা সহকারে অবিরাম ব্রহ্মচিন্তা করলেও ভােগ ব্যতিরেকে যে প্রারব্ধ কর্মের অর্থাৎ অনাদিকাল সঞ্চিত পাপ ও পুণ্যজনিত কৰ্মসমূহের ফলাফল বিনষ্ট হয় না, হে নাম! জিহ্বাগ্রে তােমার স্পন্দন মাত্রেই অর্থাৎ মুখে তােমার উচ্চারণ করা মাত্রই সেই প্রারব্ধ কর্ম বিনাশপ্রাপ্ত হয়ে থাকে।
অঘদমনযশােদানন্দনৌ নন্দসূননা
কমলনয়ন-গােপীচন্দ্র বৃন্দাবনেন্দ্রাঃ ।
প্ৰণতকরুণাকৃষ্ণাবিত্যনেকস্বরূপে।
ত্বয়ি মম রতিরুচ্চৈবর্ধিতাং নামধেয় ৷৷ ৫।
হে অঘদমন! হে যশােদাননন্দন! হে নন্দসূনাে ! হে কমল নয়ন! হে গােপীকান্ত! হে বৃন্দাবনেন্দ্র! হে প্রণতকরুণ! হে কৃষ্ণ! ইত্যাদি অনেক স্বরূপে হে নাম!তুমি জীবের ভববন্ধ-মােচনের জন্য প্রকটিত থেকে অপার করুণা প্রদর্শন করছ; অতএব হে নাম! তােমাতে আমার অনুরাগ প্রচুর পরিমাণে বর্ধিত হােক।
বাচ্যং বাচকমিত্যুদেতি ভবতাে নামস্বরূপ-দ্বয়ং
পূর্বস্মাৎ পরমেব হন্ত করুণং তত্রাপি জানীমহে ।
যস্তস্মিন্ বিহিতাপরাধানিবহঃ প্রাণীসমন্তাদ্ভবে ।
দাস্যেনেদমুপাস্য সােহপি হি সদানন্দাম্বুধৌ মজ্জতি ৷৷ ৬ ৷৷
হে নাম! তােমার দুইটি স্বরূপ—(১) বাচ্য অর্থাৎ বিভু চৈতন্যানন্দময় বিগ্রহ (মূর্তিমান শ্রীবিগ্রহ) ও (২) বাচক অর্থাৎ কৃষ্ণ, গােবিন্দ প্রভৃতি বর্ণাত্মক বিগ্রহ (অক্ষরময় নাম-বিগ্রহ); তুমি এই দুইটি স্বরূপে বিরাজ করছ; পরন্তু আমি তােমার বিভু- চৈতন্যাত্মক বাচ্য-স্বরূপ থেকে কৃষ্ণ-গােবিন্দাদি-নামাত্মক বাচক-স্বরূপকেই অধিকতর সদয় বিবেচনা করি, যেহেতু যদি কোন ব্যক্তি তােমার বিভু-চৈতন্যাত্মক বাচ্য-স্বরূপ অবলম্বন ক’রে অর্থাৎ শ্রীবিগ্রহ আশ্রয় ক’রে তােমার উপাসনা করতে করতে অপরাধী হয়ে পড়েন এবং তখন যদি তিনি মুখে তােমার কৃষ্ণ-গােবিন্দাদি-নামােচ্চারণাত্মক বাচক-স্বরূপ অবলম্বন ক’রে অর্থাৎ অক্ষরময় ‘নাম’ আশ্রয় পূর্বক ‘নাম’ কীর্তন ক’রে উপাসনা করতে থাকেন, তাহলে হে নাম! তােমার প্রভাবে তিনি সব রকম অপরাধ থেকে অব্যাহতি লাভ ক’রে নিরবচ্ছিন্ন আনন্দসাগরে নিমগ্ন হন।
সূদিতাশ্রিতজনার্ত্তিরাশয়ে
রম্য-চিদঘন-সুখ-স্বরূপিণে ।
নাম! গােকুল-মহােৎসবায়তে
কৃষ্ণ পূর্ণ-বপুষে নমাে নমঃ ।। ৭ ৷৷
হে নাম! হে কৃষ্ণ-স্বরূপ! তুমি আশ্রিত জনগণের নামাপরাধ-জনিত দুর্গতি বিনাশ ক’রে থাক, তুমি পরম চিদানন্দ-ঘন-রূপ বিগ্রহে বিরাজিত, তুমি গােকুলবাসিগণের সাক্ষাৎ আনন্দ-স্বরূপ এবং তুমি স্বীয় মহিমা ও মাধুর্যে পরিপূর্ণরূপে ব্যাপ্ত হয়ে রয়েছে; অতএব হে নাম! আমি তােমাকে বার বার নমস্কার করি।
নারদ-বীণােজ্জীবন! সুধোর্মি-নির্যাস-মাধুরীপুর ।
ত্বং কৃষ্ণনাম কামং স্ফূর মে রসনে রসেন সদা ৷৷ ৮ ৷৷
হে কৃষ্ণনাম! তুমি দেবর্ষি নারদের বীণার জীবনস্বরূপ এবং তুমি অমৃতময় মাধুর্য-তরঙ্গে পরিপূর্ণ; তুমি কৃপাপূর্বক আমাকে তােমাতে অনুরক্ত ক’রে আমার জিহ্বায় অবিশ্রান্ত স্ফুর্তি লাভ কর অর্থাৎ আমাকে এই কৃপা কর যেন আমি মুখে সর্বদা তােমাকে উচ্চারণ করতে পারি।
কোন মন্তব্য নেই