শ্রী নিত্যানন্দাষ্টকম্
শরচ্চন্দ্র-ভ্রান্তিং স্ফুরদমল-কান্তিং গজগতিং
হরি-প্রেমােন্মত্তং ধৃত-পরমসত্ত্বং স্মিতমুখং।
সদা ঘূর্ণন্নেত্রং কর-কলিত-বেত্রং কলিভিদং
ভজে নিত্যানন্দং ভজন-তরু-কন্দং নিরবধি৷৷১।।
অনুবাদ— যাঁর শ্রীমুখমণ্ডল শরৎকালীন চন্দ্রের শােভাতিশয়কেও তিরস্কার করে, যাঁর সুবিমল অঙ্গকান্তি পরম মনাে-হর-রূপে শােভা পায়, যিনি মত্ত মাতঙ্গের মত মৃদু-মন্থর গতিতে গমন করেন, যিনি সর্বদা শ্রীকৃষ্ণপ্রেমে উন্মত্ত-যাঁর শ্রীহস্তে বেত্র শােভা পায়, যিনি কলি-কলুষসমূহ ধ্বংস করেন, শ্রীকৃষ্ণভক্তি-কল্পতরুর মূল-স্বরূপ সেই শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুকে আমি সর্বদা ভজনা করি।
রসানামাগারং স্বজনগণ-সর্বস্বমতুলং
তদীয়ৈক-প্রাণপ্রতিম্-বসুধা-জাহ্নবী-পতিং।
সদা প্রেমােন্মাদং পরম-বিদিতং মন্দ-মনসাং
ভজে নিত্যানন্দং ভজন-তরু-কন্দং নিরবধি।।২।।
অনুবাদ— যিনি নিখিল রসের আধার, যিনি ভক্তগণের প্রাণধন, ত্রিজগতে কোথাও যাঁর তুলনা নেই, যিনি প্রাণাপেক্ষা প্রিয়তর শ্রীবসুধা ও জাহ্নবা দেবীর প্রাণপতি, যিনি নিরন্তর প্রেমােন্মত্ত, যিনি মন্দমনা ব্যক্তিগণের নিতান্ত অবিদিত, সেই শ্রীকৃষ্ণভক্তি কল্পতরুর মূল-স্বরূপ শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুকে আমি সর্বদা ভজনা করি।
শচীসূনু-প্রেষ্ঠং নিখিল-জগদিষ্টং সুখময়ং
কলৌ মজ্জজ্জীবােদ্ধরণ করণোদ্দাম করুণং।
হরের্ব্যাখানাদবা ভব-জলধি-গর্বোন্নতি-হরং
ভজে নিত্যানন্দং ভজন-তরু-কন্দং নিরবধি।।৩।।
অনুবাদ— যিনি শ্রীগৌরাঙ্গের অতি প্রিয়, যিনি সর্ব জগতের মঙ্গল বিধান করেন,
যিনি পরম সুখময়, কলিযুগে পাপহত জীবগণের উদ্ধারের জন্য যাঁর করুণার অবধি নেই, যিনি শ্রীহরিনাম-সংকীর্তন প্রচার দ্বারা দুস্তর ভবসমূদ্রের গর্ব খর্ব করেছেন অর্থাৎ যিনি সংসার-সাগর অবলীলা-ক্রমে উত্তীর্ণ হবার উপায় বিধান করেছেন, শ্রীকৃষ্ণভক্তিকল্পতরুর মূল-স্বরূপ সেই নিত্যানন্দ প্রভুকে আমি সর্বদা ভজনা করি।
অয়ে ভ্রাতর্নৃণাং কলি-কলুষিণাং কিং নু ভবিতা
তথা প্রায়শ্চিত্তং রচয় যদনায়াসত ইমে।
ব্রজন্তি ত্বামিথং সহ ভগবতা মন্ত্রয়তি যাে
ভজে নিত্যানন্দং ভজন-তরু-কন্দং-নিরবধি।।৪।।
অনুবাদ— “হে ভ্রাতঃ! কলি-পাপচ্ছন্ন জীবগণের গতি কি হইবে? তুমি কৃপা ক’রে ঈদৃশ উপায় বিধান কর, যাতে তারা তােমার শ্রীচরণ লাভ করেত পারে’’— এইভাবে যিনি শ্রীগৌর-ভগবানের সঙ্গে কথােপথকন ও যুক্তি-পরামর্শ করতেন, শ্রীকৃষ্ণভক্তি-কল্পতরুর মূল-স্বরূপ সেই শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুকে আমি সর্বদা ভজনা করি।
যথেষ্টং রে ভ্রাতঃ! কুরু হরিহরি-ধ্বানমনিশং
ততাে বঃ সংসারাম্বুধি-তরণ-দায়াে ময়ি লগেৎ।
ইদং বাহু-স্ফোটৈরটতি রটয়ন্ যঃ প্রতিগৃহং
ভজে নিত্যানন্দং ভজন-তরু-কন্দং নিরবধি।।৫৷৷
অনুবাদ— “হে ভাই সকল! তােমরা নিরন্তর শ্রীহরিনাম যথেষ্টরূপে কীর্তন কর, তাহলে তােমাদের ভব-সমুদ্র পার হবার জন্য আমি দায়ী রইলাম”—এইভাবে বলতে বলতে যিনি বাহু আস্ফালনপূর্বক গৃহে গৃহে ভ্রমণ করতেন, শ্রীকৃষ্ণভক্তিকল্পতরুর মূল-স্বরূপ সেই শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুকে আমি সর্বদা ভজনা করি।
বলাৎ সংসারাম্ভোনিধি-হরণ-কুম্ভোদ্ভবমহাে
সতাং শ্রেয়ঃ-সিন্ধুন্নতি-কুমুদ-বন্ধুংসমুদিতং।
খলশ্রেণী-স্ফুর্জত্তিমির-হর-সূর্য-প্রভমহং
ভজে নিত্যানন্দং ভজন-তরু-কন্দং-নিরবধি ।।৬।।
অনুবাদ— আহা মরি! সাধুগণের সংসার-সমুদ্র শােষণ করতে যিনি কুম্ভ থেকে জাত অগস্ত্যস্বরূপ অর্থাৎ যিনি অনায়াসে শ্রীভগবদ্ভক্তগণের উদ্ধার সাধন করেন, যিনি জীবগণের কল্যাণ-সমুদ্র উদ্বেলিত করবার জন্য চন্দ্ররূপে সমুদিত হন অর্থাৎ যিনি অশেষরূপে জীবের মঙ্গল সাধন করেন, যিনি দুর্জনগণের পাপান্ধকার বিনাশ করতে সূর্যস্বরূপ অর্থাৎ যিনি পাপিগণের পাপরাশি বিধ্বংস করেন, শ্রীকৃষ্ণভক্তিকল্পতরুর মূল-স্বরূপ সেই শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুকে আমি সর্বদা ভজনা করি।
নটন্তং গায়ন্তং হরিমনুবদন্তং পথি পথি
ব্ৰজন্তং পশ্যন্তং স্বমপি মদয়ন্তং জনগণম্।
প্রকুর্বন্তং সন্তং সকরূণ-দৃগন্তং প্রকলনাদ্
ভজে নিত্যানন্দং ভজন-তরু-কন্দং নিরবধি।।৭।।
অনুবাদ— যিনি নৃত্য করতে করতে, কীর্তন করতে করতে, হরিবােল বলতে বলতে ও শ্রীহরিনাম কীর্তনকারী নিজ ভক্তগণের প্রতি দৃষ্টি করতে করতে পথে পথে বিচরণ করতেন এবং যিনি সজ্জনগণের প্রতি করুণ নেত্রে ঈক্ষণ করতেন, শ্রীকৃষ্ণভক্তিকল্পতরুর মূল-স্বরূপ সেই শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুকে আমি সর্বদা ভজনা করি।
সুবিভ্রাণং ভ্রাতুঃ কর-সরসিজংকোমলতরং
মিথােবাক্ত্রা লোকোচ্ছ্বলিত-পরমানন্দ-হৃদয়ম্।
ভ্রমন্তং মাধুর্যৈরহহ!মদয়ন্তং পুরজনান্
ভজে নিত্যানন্দং ভজন-তরু-কন্দং নিরবধি ।।৮।।
অনুবাদ— যিনি শ্রীগৌরাঙ্গের সুকোমল করকমল ধারণপূর্বক পরস্পরের বদনচন্দ্র সন্দর্শন-জনিত পরমানন্দে পরিপূর্ণ হতেন এবং যিনি নগরবাসিগণকে স্বীয় অনির্বচনীয় মাধুর্যে উন্মত্ত ক’রে চতুর্দিকে বিচরণ করতেন, শ্রীকৃষ্ণভক্তি কল্পতরুর মূল-স্বরূপ সেই শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুকে আমি সর্বদা ভজনা করি।
রসানামাধানং রসিক-বর-সদ্বৈষ্ণব-ধনং
রসাগারং সারং পতিত-ততি-তারং স্মরণতঃ।
পরং নিত্যানন্দাষ্টকমিদমপূর্বং পঠতি যস্ত-
দঙিঘ্র- দ্বন্দ্বাব্জং স্ফুরতু নিতরাং তস্য হৃদয়ে ।।৯৷৷
অনুবাদ— যিনি ভক্তিরস-সমূহ প্রদানকারী, যিনি রসিক ভক্তগণের সর্বস্ব-ধন, যিনি নিখিল রসের আধার-ভূত, যিনি ত্রিজগতের সারবস্তু, যাঁর স্মরণ করলে পাপিগণের পরিত্রাণ লাভ হয়ে থাকে, সেই শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর এই অত্যুত্তম ও অপূর্ব অষ্টক যিনি পাঠ করবেন, তাঁর হৃদয়ে তদীয় সুদুর্লভ শ্রী পাদপদ্ম সুচারুরূপে স্ফুর্তিপ্রাপ্ত হবে।
কোন মন্তব্য নেই