শ্রীভক্তি সন্দর্ভ





(১০-১১) অনুচ্ছেদ

ভক্তি লাভের উপায় (কর্তব্য হরিকথা শ্রবণ-কীর্তনাদিতে রতি)

পূর্বোক্ত শ্লোক সমূহে ভক্তির অন্তিম ভূমিকা পর্যন্ত সরলভাবে সংকেতে বলবার জন্য ধর্ম-অর্থ-  কামের ক্লেশাপেক্ষা-রহিত হয়ে যুক্তিমাত্র অবলম্বন পূর্বক হরিকথা রুচিরূপা প্রথম ভূমিকা প্রকটিত করাইয়ে তার গুণ স্মরণ করাচ্ছেন

যদনুধ্যাসিনা যুক্তাঃ কর্মগ্রন্থিনিবন্ধনম্ ।

ছিন্দন্তি কোবিদাস্তস্য কো ন কুর্যাৎকথারতিম্ (ভাঃ ১/২/১৫) ॥১০॥


সংযতচিত্ত বিবেকীগণ যে হরির চিন্তারূপ খড়গমাত্র দ্বারা নানাদেহে অহঙ্কার-বন্ধনরূপ কর্মছেদন করেন সেই হরির কথায় কে না রতি করিবে ? 


‘কোবিদ’ বলতে বিবেকী এবং ‘যুক্ত’ শব্দে সংযতচিত্ত। যে হরির অনুধ্যান অর্থাৎ চিন্তা মাত্রই অসিস্বরূপ। নানাদেহে অঙ্কাররূপ গ্রন্থিবন্ধনই কর্ম। সেই খড়গদ্বারা তাদৃশ কর্ম বিখন্ডিত করেন। এই প্রকার পরম দুঃখ কর্মবাদে আবদ্ধ। তা হতে উদ্ধার লাভ করবার কথায় কে না রতি করবে ? ॥১০॥

             

হতভাগ্যগণের এবংবিধ হরিকথায় রুচি জন্মে না, এই আশঙ্কায় তৎপ্রাপ্তির সুলভ উপায় বলতে ‘হরিকথা-রুচি’ বিষয় হতে আরম্ভ করে ‘শুশ্রূষোঃ’ হতে ‘এবং প্রসন্নমনসোঃ’ পর্যন্ত পরের ৫ টি শ্লোকে নৈষ্ঠিকী ভক্তি পর্যন্ত উপদেশ করছেনঃ হে বিপ্রগণ!  ভগবদ্ধাম সেবাফলে দৈবাৎ সুকৃতিক্রমে মহৎকৃপাজনিত মহতের সেবা হয়। সেই মহতের সেবাফলে জাতশ্রদ্ধ পুরুষ সদ্গুরুচরণাশ্রয় করতে সমর্থ হয়। সদ্গুরুর নিকট শ্রবণ ফলেই বাসুদেব-কথায় রুচি উৎপন্ন হয়।   

               

শুশ্রূষোঃ শ্রদ্ধধানস্য বাসুদেবকথারুচিঃ।

স্যান্মহৎসেবয়া বিপ্রাঃ পুণ্যতীর্থনিষেবণাৎ ॥ (ভাঃ ১/২/১৬) ॥১১॥


স্বামীপাদের এই টীকানুসারে পুণ্যতীর্থ-নিষেবনমূলে যথেচ্ছাপ্রাপ্ত যে মহৎসেবা, তৎদ্বারা বাসুদেব কথায় রুচি হয়। কেহ অন্যকার্যে তীর্থে ভ্রমন করলেও তার তীর্থভ্রমনকারী বা তীর্থবাসকারী সাধুগণের দর্শন-স্পর্শন সম্ভাষনাদি লক্ষণযুক্ত সেবা স্বভাবতই ঘটে থাকে। তৎপ্রভাবফলে মহতের আচরণে শ্রদ্ধা হয়। হরিজনগণের স্বাভাবিক পরস্পর ভগবৎকথায় তৎ শ্রবণকারীগণের “ইহারা কি বিষয় কথোপকথন করছেন, তা আমি শ্রবণ করব” এইরূপ ইচ্ছা হয়। সাধুগণের পরস্পরের হরিকথা কর্ণে প্রবেশ করলে শ্রবণকারীর হরিকথায় রুচি জন্মে এবং মহতের নিকট হতে শ্রবণ করলে অত্যল্পকালের মধ্যেই উহা কার্যকারী হয়। এতৎ প্রসঙ্গে কপিলদেবের বাক্য

                   

সতাং প্রসঙ্গান্মম বীর্যসংবিদো ভবন্তি হৃৎকর্ণরসায়নাঃ কথাঃ।

                   তজ্জোষণাদাশ্বপবর্গবর্ত্মনি শ্রদ্ধা রতির্ভক্তিরনুক্রমিষ্যতি ॥(ভাঃ ৩/২৫/২৫)


সাধুগণের প্রকৃষ্ট সঙ্গ হতে কৃষ্ণেতর অনর্থনাশিনী কথা হয়। অনর্থনাশিনী হরিকথা হতে নিষ্ঠার উৎপত্তিক্রমে ভগবন্মাহাত্ম্যের পরিজ্ঞান হয়, আর রুচির উৎপত্তিহেতু হরিকথায় হৃদয় ও কর্ণের রসায়ণ হয়। সাধুসঙ্গে অর্থাৎ প্রকৃষ্ট সঙ্গের পূর্বে শ্রবণক্রিয়া। শ্রদ্ধা হতে সঙ্গ। হৃৎকর্ণরসায়নী কথা প্রীতির সহিত আস্বাদন করতে করতে আসক্তি, রতি, ভাব, ভক্তি ও প্রেমভক্তি ক্রমপন্থায় উদিত হয়। ॥১১॥


কোন মন্তব্য নেই

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.