বৈষ্ণব মাহাত্ম্য

 



  গৃহীত বিষ্ণুদীক্ষাকো বিষ্ণুপূজা-পরে নরঃ।

 বৈষ্ণবোহর্ভিহিতোহভিজ্ঞৈরিতরোহস্মাদবৈষ্ণবঃ ॥

             

যিনি বিষ্ণুমন্ত্রে দীক্ষা গ্রহণকারী এবং বিষ্ণুপূজায় তৎপর, অভিজ্ঞগণ তাঁকেই বৈষ্ণব বলে থাকেন, তৎব্যতীত অন্য ব্যক্তি অবৈষ্ণব।

 (হরিভক্তিবিলাস ১/৫৫ পদ্মপুরাণ বচন)


     বহ্নি সূর্য্য ব্রাহ্মণেভ্যস্তেজীয়া বৈষ্ণব সদা।

     ন বিচারো ন ভোগশ্চ বৈষ্ণবানাং স্বকর্মনাম্ ॥ 

                

অগ্নি, সূর্য্য এবং ব্রাহ্মণগণ অপেক্ষা বৈষ্ণব সর্বদা তেজবিশিষ্ট। বৈষ্ণবগণের নিজ কর্ম সমূহের ভোগ নাই ও বিচার নাই।


(ব্রহ্মবৈবর্ত কৃষ্জন্মখন্ড ৫৯ অধ্যায় )

      ন কর্মবন্ধনং জন্ম বৈষ্ণবানাঞ্চ বিদ্যতে।

      বিষ্ণুরনুচরত্বং হি মোক্ষমাহ্নর্মনীষিণঃ ॥


 বৈষ্ণবগণের জন্ম ও কর্মবন্ধন নাই। বিষ্ণুর দাস বলে পন্ডিতগণ তাঁদেরকে মুক্তিভাজন বলেন।

(হরিভক্তিবিলাস ১০/১১৩ পদ্মোত্তর বাক্য)

          অতএব বৈষ্ণবের জন্ম মৃত্যু নাই।

          সঙ্গে আইসেন সঙ্গে যায়েন তথাই ॥

          ধর্ম, কর্ম, জন্ম বৈষ্ণবের কভু নহে।

          পদ্মপুরাণেতে ইহা ব্যক্ত করি’ কহে ॥

                      (শ্রীচৈতন্য ভাগবত অন্তঃ ৮/১৭৩-১৭৪)


   ব্রাহ্মণানাং সহস্রেভ্য সত্রযাজী বিশিষ্যতে।

   সত্রযাজি সহস্রেভ্যঃ সর্ববেদান্তপারগঃ ॥

   সর্ববেদান্তবি॥কোট্যা বিষ্ণুভক্তো বিশিষ্যতে।

   বৈষ্ণবানাং সহস্রেভ্যঃ ঐকান্ত্যেকো বিশিষ্যতে ॥

       (ভক্তি সন্দর্ভ ১৭৭ সংখ্যার্ধত গড়–র বচন।)


সহস্র ব্রাহ্মণ হতে একজন সাবিত্র্য-ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ, সহস্র সাবিত্র্য-ব্রাহ্মণ অপেক্ষা একজন বেদান্তবিদ ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ, কোটি বেদান্তবিদ ব্রাহ্মণ অপেক্ষা একজন বিষ্ণুভক্ত শ্রেষ্ঠ, সহস্র বিষ্ণুভক্ত হতে একজন একান্তিক বৈষ্ণব শ্রেষ্ঠ।


আদি পুরাণে শ্রীকৃষ্ণার্জুন সংবাদে বলা হয়েছে -

        বৈষ্ণবান্ ভজ কৌন্তেয় মা ভজস্বান্যদেবতাঃ।

        পুনন্তি বৈষ্ণবা  সর্বে সর্বদেবমিদং জগৎ ।

       মদ্ভক্তো দুল্লর্ভো যস্য স এব মম দুর্লভঃ ॥১৩০॥


হে পার্থ ! বৈষ্ণবগণকে উপাসনা কর, দেবতান্তরের উপাসনার প্রয়োজন নহে ; বৈষ্ণবগণ নিখিল সুরগণের সহিত এই জগত পবিত্র করে থাকেন। আমার ভক্ত যার প্রিয় সেই ব্যক্তি আমারও প্রিয়।                             (হরিভক্তিবিলাস ১০/১৩০)    

                           

তৎপরো দুর্লভ নাস্তি সত্যং সত্যং ধনঞ্জয়।

             জগতাং গুরবো ভক্তা ভক্তানাং গুরবো বয়ম্ ॥১৩১॥


হে অর্জুন ! আমি পুনঃ পুনঃ সত্য করে বলছি, তাহা অপেক্ষা আমার প্রিয় আর নেই। ভক্তগণ সর্ব জগতের গুরু, আর আমি ভক্তগণের গুরু। যে প্রকার আমি অখিলের গুরু, ভক্তগণও তদ্রপ। ভক্তবৃন্দ আমার বান্ধব, আমি ভক্তবৃন্দের বান্ধব। ভক্তগণ মদীয় গুরু এবং আমিও ভক্তগণের গুরু।

                                           (হরিভক্তিবিলাস ১০/১৩১)

   সর্বত্র গুরবো ভক্তা বয়ঞ্চ গুরবো যথা।

   অস্মাকং বান্ধবা ভক্তা  ভক্তানাং বান্ধবা বয়ম্ ।

   অস্মাকং গুরবো ভক্তা ভক্তনাং গুরবো বয়ম্ ।

   মদ্ভক্তা যত্র গচ্ছন্তি তত্র গচ্ছামি পার্থিব।

   ভক্তামনুগচ্ছন্তি মুক্তয়ঃ শ্রুতিভিসহ ॥১৩২॥

                 হে ধনঞ্জয় ! ভক্তগণ যে স্থানে গমন করেন, আমিও সেই স্থানে গমন করি। মুক্তিগণ শ্রুতিগণ-সমভিব্যবহারে ভক্তগণের অনুসরণ করেন। 

                                    (হরিভক্তিবিলাস ১০/১৩২)

     যে মে ভক্তজনাঃ পার্থ ন মে ভক্তাশ্চ তে জনাঃ।

     মদ্ভক্তানাঞ্চ যে ভক্তাস্তে মে ভক্ততমা মতাঃ ॥

                                 (হরিভক্তিবিলাস ১০/১৩৩)

হে কৌন্তেয় ! যে সকল জন আমার ভক্ত, তারা প্রকৃত ভক্ত বলে গণ্য নহে ; মদীয় ভক্তগণের ভক্ত সকলই মদীয় সর্বোত্তম ভক্ত বলে পরিকীর্র্তিত।


তেজোদ্রবিনপঞ্চরাত্রে বলা হয়েছে-


      বৈষ্ণবো বৈষ্ণবং দৃষ্টা দন্ডবৎ প্রণমেদ্ভুবি।

      উভয়োরন্তরা বিষ্ণুঃ শঙ্খচক্রগদাপদ্মধরঃ ॥

                        (হরিভক্তিবিলাস ১০/৩২১)


বৈষ্ণবকে দর্শণ করে ভূমিতে দন্ডের ন্যায় পতিত হয়ে প্রণাম করা বৈষ্ণবের কর্তব্য, যেহেতু শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী হরি উভয়েরই অন্তঃস্থিত রয়েছেন।


       বৈষ্ণবঞ্চাগতং বীক্ষ্যভিগম্যালিঙ্গ্য বৈষ্ণবম্ ।

       বৈদেশিকং প্রীণয়েয়ুর্দর্শয়ন্তঃ স্ববৈষ্ণবান্ ॥

                        

                       (হরিভক্তিবিলাস ১০/৩২৩)


বিদেশস্থ বৈষ্ণবের আগমন দর্শনে তৎসমীপে গিয়ে আলিঙ্গন করবে এবং নিজসঙ্গী বৈষ্ণবগণকে তাঁহাদিগের নামোল্লেখ করে পরিচয় প্রদানপূর্বক আনন্দিত করাইবে। 


স্কন্ধ পুরাণে শ্রীমার্কন্ডেয় ভগীরথ সংবাদে -

       দৃষ্টা ভাগবতং দৈবাৎ সম্মুখে যো ন যাতি হি।

        ন গৃহ্নাতি হরিস্তস্য পূজা দ্বাদশবার্ষিকীম্ ॥


                         (হরিভক্তিবিলাস ১০/৩২৬)

যে ব্যক্তি অকস্মাৎ ভগবদ্ভক্তকে দর্শন করে সম্মুখে গমন না করে, ভগবান দ্বাদশ বৎসর তার পূজা গ্রহন করেন না।


       যো ন গৃহ্নাতি ভূপাল বৈষ্ণবং গৃহমাগতম্ ।

       তদ্গৃহং পিতৃভিস্ত্যক্তং শ্মশানমিব ভীষষম্ ॥

       অথবাভ্যাগতং দূরাৎ যো নার্চয়তি বৈষ্ণবম্ ।

       স্বশক্ত্যা নৃপশার্দূল নান্যঃ পাপরস্ততঃ ॥


                 (হরিভক্তিবিলাস ১০/৩২৭-৩২৮)


হে রাজন্ ! গৃহাগত বৈষ্ণবকে যে ব্যক্তি গ্রহণ করে না, তার শ্মশানসদৃশ ভীষণ গৃহ পিতৃগণ বিসর্জন করেন।

হে নৃপ শ্রেষ্ঠ ! দূরদেশ হতে অভ্যাগত বৈষ্ণবকে সামর্থ অনুসারে যে ব্যক্তি পূজা করে না, তাহা অপেক্ষা পাপী আর নাই।


       অপূজিতো যদা গচ্ছেদ্বৈষ্ণবো গৃহমেধিনঃ ।

       শতজন্মার্জিতং ভূপ পুণ্যমাদায় গচ্ছতি ॥

                        (হরিভক্তিক্ষলাস ১০/৩৩২) 


বৈষ্ণব অপূজিত হয়ে গৃহ হতে প্রতিগমন করলে, সেই গৃহস্থের শত জন্মার্জিত পুণ্য সেই বৈষ্ণবসহ গমন করে।


  প্রত্যক্ষং বা পরোক্ষং বা যে প্রশংসন্তি বৈষ্ণবম্ ।

  প্রসাদাদ্বাসুদেবস্য তে তরন্তি ভবার্ণবম্ ॥

                   (হরিভক্তিবিলাস ১০/৩৪৬)


যাঁরা প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে বৈষ্ণবের প্রশংসা করেন, তাঁরা বাসুদেবের অনুগ্রহে ভবসাগর হতে উত্তীর্ণ 

হন।


        কিং দানৈঃ কিং তপোভির্বা

                            যজ্ঞৈশ্চ বিৈিধঃ কৃতৈঃ।

        সর্বং সম্পদ্যতে পুংসাং

                             বিষ্ণুভক্তাভিপূজনাৎ ॥

পূজয়েৎ বৈষ্ণবানেতান্ প্রযতেœন বিচক্ষণঃ।

 স্বশক্ত্যা বৈষ্ণবেভ্যো যদত্তং স্যাদক্ষয়ং ভবেৎ ॥

                   (হরিভক্তিবিলাস ১০/৩৪৯-৩৫০)


দান, তপস্যা ও বিবিধ যজ্ঞানুষ্ঠানে কি ফল ? হরিভক্তের পূজা করলে নিখিল সম্পত্তি প্রাপ্ত হওয়া যায় ; সুতরাং যত্ন সহকারে বৈষ্ণবগণের পূজা করাই সুধীজনের কর্তব্য। নিজ সামর্ত অনুসারে বৈষ্ণবগণকে যাহা প্রদত্ত হয়, তাহাই অক্ষয় ফল প্রদান করে।


   যো বিষ্ণুভক্তান্ নিষ্কামান্ ভোযয়েৎ শ্রদ্ধয়ান্বিতঃ।

   ত্রিসপ্তকুল সংযুক্তঃ স যাতি হরিমন্দিরম্ ॥


                        (হরিভক্তিবিলাস ১০/৩৫৪)


যিনি শ্রদ্ধাপূর্বক নিষ্কাম বিষ্ণুভক্তগণকে ভোজন করান, তিনি একবিংশতি কুলসহ হরিমন্দিরে গমন করেন।


কোন মন্তব্য নেই

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.