শ্রীবামন-দ্বাদশী
“লব্ধা বৈরোচনাদ্ভূমিং পদ্ভ্যাং দ্বাভ্যামতীত্য যঃ।
আব্রহ্ম ভুবনং ক্রান্তং বামনং তং নমাম্যহম্ ॥”(বৃহন্নারদীয় পুরাণ)
‘যিনি বিরোচন-নন্দন বলির নিকট হইতে ত্রিপাদ-ভূমি দানলাভ করিয়া দুই পদ দ্বারা ভূর্লোক অতিক্রম পূর্বক ব্রহ্মলোক পর্য্যন্ত অধিকার করিয়াছিলেন, সেই শ্রীভগবান বামনদেবকে নমস্কার করি।’
এই কল্পে তিনবার বামনদেবের আবির্ভাব হয়। প্রথমতঃ তিনি ‘স্বায়ম্ভুব’ মন্বন্তরে বাস্কলি-নামক দৈত্যের যজ্ঞে এবং দ্বিতীয়তঃ ‘বৈবস্বত’ মন্বন্তরে ধুন্ধু-নামক অসুরের যজ্ঞে গমন করেন। আর সর্বশেষে এই ‘বৈবস্বত’ মন্বন্তরের সপ্তম চতুর্যুগে কশ্যপ হইতে অদিতির গর্ভে আবির্ভূত হন এবং তিনিই বলির যজ্ঞে গমন করেন। এই তিন বামনমূর্ত্তিই প্রতি গ্রহের জন্য ত্রিবিক্রম-রূপের প্রকাশ ঘটাইয়াছিলেন-(লঘু-ভাগবতামৃত)।
শ্রীবামন-দ্বাদশী-ব্রতের কাল নির্ণয়
শ্রীমদ্ভাগবতে ভগবান্ শ্রীবামনদেবের আবির্ভাব প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে,
“শ্রোণায়াং শ্রবণদ্বাদশ্যাং মুহূর্ত্তেহ্নভিজিত প্রভুঃ।
সর্ব্বে নক্ষত্রতারাদ্যাশ্চক্রুস্তজ্জন্ম দক্ষিণম্ ॥
দ্বাদশ্যাং সবিতা তিষ্ঠন্মধ্যন্দিন-গতো নৃপ।
বিজয়া নাম সা প্রোক্তা যস্যাং জন্ম বিদুর্হরেঃ॥ (ভাঃ ৮।১৮।৫-৬)
‘শ্রবণ দ্বাদশীতে চন্দ্র শ্রবণস্থ হইলে, অভিজিদ্-মুহূর্ত্তে পরম শভলগ্নে প্রভু অবতীর্ণ হইয়াছিলেন। সেই সময় সমস্ত নক্ষত্র এবং গ্রহগণ তাঁহার জন্মবাসরকে প্রশস্ত করিয়াছিলেন ; এই দ্বাদশীকে ‘বিজয়া-দ্বাদশী’ বলা হইয়া থাকে।’
সুতরাং ভাদ্রমাসের শুক্লা দ্বাদশী তিথিতে শ্রবণা নক্ষত্রের যোগ হইলে, উক্ত দিনে উপবাসী থাকিয়া শ্রীবামনদেবের পূজা করণীয়। কিন্তু দ্বাদশীতে শ্রবণার যোগ না হইলে কিংবা একাদশী ও দ্বাদশী- এই উভয়দিনেই শ্রবণার অপ্রাপ্তি ঘটিলে একাদশীতে উপবাসী থাকিয়া দ্বাদশীতে শ্রীবামনদেবের পূজা করিতে হইবে।
শ্রীবামন-দ্বাদশী-ব্রত মাহাত্ম্য
শ্রীবামন দ্বাদশী-ব্রতসাধনে ভগবান্ অভীপ্সিত সকল শুভকামনা পরিপূর্ণ করিয়া দেন। শ্রীবরাহ পুরাণে এই ব্রতমাহাত্ম্য প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে, পুত্রহীন রাজা হর্য্যশ্ব পুত্রকামনায় এই ব্রতের অনুষ্ঠান করিলে তিনি উগ্রাশ্ব নামে মহাবল পরাক্রান্ত একপুত্র লাব করিয়াছিলেন, তিনি পরবর্তীকালে রাজচক্রবর্তী হইয়াছিলেন। এই ব্রতানুষ্ঠানে অপুতওকের পুত্র, ধনার্থীর ধন, রাজ্যচ্যুতের রাজ্যসুখ লাভ হইয়া চরমে বিষ্ণুলোকে গতি হইয়া থাকে। কিন্তু শুদ্ধভক্তগণ কোন প্রকার জাগতিক প্রাপ্তির আশা কিংবা অপেক্ষা না করিয়াই কেবল হরি-প্রীতির জন্যই এইসকল হরিবাসর ব্রতের অনুষ্ঠান করেন।
শ্রীবামন-ব্রতবিধি
ব্রতের সঙ্কল্প মন্ত্র-
“একাদশ্যাং নিরাহারঃ স্থিত্বা চৈবাপরেহ্নহনি।
ভোক্ষ্যে শ্রীবামনানন্ত শরণাগত-বৎসল ॥”
অর্থাৎ, ‘হে শ্রীবামনদেব, হে অনন্ত, হে শরণাগত-বৎসল এই শ্রীবামন-ব্রত-উপলক্ষে আমি একাদশীতে উপবাস থাকিয়া পরদিবস বোজন করিব।’
সুতরাং এই ব্রতে একাদশীব্রতের ন্যায়ই উপবাস বিধি। তবে উক্ত ভাদ্র মাসের শুক্লা দ্বাদশীতে ‘শ্রবণা’-নক্ষত্রের যোগ হইলে যে শ্রবণ-মহাদ্বাদশীর উদয় হইয়া থাকে, সেই দ্বাদশীতে তখন উপবাস কর্তব্য। উপবাসের সহিত ভগবান্ শ্রীবামনদেবের চিত্রপট সুসজ্জিত করিয়া শাস্ত্র হইতে তাঁহার সম্বন্ধে কথা শ্রবণ কীর্তন করিবেন। গ্রন্থরাজ শ্রীমদ্ভাগবতের ৮ম স্কন্ধের ১৬শ অধ্যায় হইতে ২৩শ অধ্যায় পর্য্যন্ত শ্রীবামনদেবের লীলা বর্ণিত আছে। সম্ভব হইলে শ্রীবামন-পুরাণ হইতেও তাঁহার কথা আলোচনীয়।
এই ব্রতের পরদিবস যথাবিধি ভগবান্ শ্রীবামনদেবের পূজা অবশ্য কর্তব্য। উক্ত পূজা দ্বাদশী মধ্যেই সম্পন্ন করিতে হইবে। অতি অল্পকাল দ্বাদশী থাকিলেও উক্ত পূজা দ্বাদশী মধ্যেই কর্তব্য।
এই প্রকারে পূজা সমাপনান্তে প্রভাতে বৈষ্ণব-ব্রাহ্মণগণকে মহাপ্রসাদ ভোজন করাইয়া অনন্তর স্বয়ং পারণ করিবেন।
কোন মন্তব্য নেই