আহার মানুষের চেতনাকে সবচাইতে বেশি প্রভাবিত করে - ভক্তিচারু স্বামী
আহার মানুষের চেতনাকে সবচাইতে বেশি প্রভাবিত করে। মানুষ যা খায় তা দিয়ে তার দেহের কোষ সৃষ্টি হয় এবং সেই অনুসারে তার মনােবৃত্তি গড়ে ওঠে। তৃণভােজী পশু ও মাংসাশী পশুর আচরণে সেই সত্য সহজেই উপলব্ধি করা যায়। | প্রকৃতির নিয়মে বিভিন্ন জীৰ বিশেষ আহারের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই আকৃষ্ট হয়। যেমন পশুজগতে সিংহ শাবককে কখনও ফলের প্রতি আকৃষ্ট হতে দেখা যায় না, তেমনই আবার মেষ শাবককে কখনও মাংসের প্রতি আকৃষ্ট হতে দেখা যায় না। প্রকৃতির নিয়মেই। তাদের আহার নির্ধারিত হয়। কিন্তু মানুষের বেলায় আমরা সেই নিয়মের একটি বিশেষ ব্যতিক্রম দেখতে পাই। তার কারণ ৮০ লক্ষ বিভিন্ন যােনিতে ভ্রমণ করার পর মানব শরীরের মাধ্যমে প্রকৃতি জীবকে এক বিশেষ সুযােগ দান করে জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার। সেই সুযােগের সঙ্গে আসে একটি মস্ত বড় পরীক্ষাও। সেটি হচ্ছে মনুষ্যেতর আশি লক্ষ যােনির যে কোন যােনি বেছে নেওয়ার সুযােগ। মানুষ যে কোন প্রাণীর মতাে আচরণ করতে পারে এবং তার সেই আচরণ অনুসারে পরবর্তী জীবনে সেই যােনিতে জন্ম। গ্রহণ করতে পারে। অর্থাৎ মনুষ্য জীবনে যেমন সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত হওয়ার সুযােগ। রয়েছে, তেমনই সর্বনিম্নস্তরের অধঃপতিত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। মানুষ ইচ্ছা করলে শূকরের মতাে বিষ্ঠা আহার করতে পারে, আবার দেবতাদের মতাে যুক্তবশেষ বা ভগবানের প্রসাদ আহার করতে পারে । তাই দুর্লভ মনুষ্য জীবনের যথাযথ সদ্ব্যবহার করাই বুদ্ধিমান মানুষের কর্তব্য।
পৃথিবীর ইতিহাস যথাযথভাবে পর্যালােচনা করলে দেখা যায় যে ব্যাপকভাবে আমিষ আহারের প্রচলন সাম্প্রতিক। পাশ্চাত্য দেশগুলিতেও যান্ত্রিক সভ্যতার প্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আমিষ আহারের প্রচলন বৃদ্ধি পেয়েছে। যান্ত্রিক সভ্যতার প্রসার শুরু হওয়ার আগে মানুষ যখন প্রধানতঃ কৃষিজীবী ছিল, তখন মাঝে মধ্যে পশুমাংস আহার করলেও সাধারণতঃ তারা নিরামিষ আহাৱের উপরই অধিক নির্ভরশীল ছিল।
ভারতবাসীরা যে সাধারণতঃ নিরামিষাশী তা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে গেলে সহজেই বােঝা যায়। পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণের ফলে ভারতবর্ষের যে ব্যাপক সর্বনাশ হয়েছে, আহার তার অন্যতম। এই সর্বনাশ থেকে এককতাবে নিজেদের রক্ষা করার এবং সমষ্টিগতভাৰে,সারা পৃথিবীর মানুষদের রক্ষা করার একটা মস্ত বড় প্রয়ােজন আজ দেখা দিয়েছে। কি করলে এককভাবে এবং সমষ্টিগতভাবে সকলের মঙ্গল হবে, তা বিচার করে
সেই অনুসাৱে আচরণ করতে হবে। সেইটিই বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ। তাই আমরা সারা পৃথিবীর বুদ্ধিমান মানুষদের কাছে ঐকান্তিকভাবে অনুরােধ করছি, তারা যেন তাদের মঙ্গলের পথ বেছে নেন।
পৃথিবীর সংস্কৃতি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে সংস্কৃতি যত বর্ধিষ্ণু, তার রন্ধনকলাও তত উন্নত এবং স্বাভাবিকভাবে আহারও তত সুস্বাদু। ভারতের রন্ধনকলা এবং আহারের স্বাদ থেকেই বােঝা যায় এই সভ্যতা কত উন্নত। এই সংস্কৃতির গভীরে প্রবেশ করলে বােঝা যায় যে এটি নিঃসন্দেহে উন্নত মানের জীবন যাপন করার শিক্ষাই দেয় না, তাদের শেখায় কিভাবে জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে সচ্চিদানন্দময় ভগবদ্ধামে ফিরে যাওয়া যায়। সেই উদ্দেশ্য সাধনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানব জীবনের প্রকৃত সার্থকতা।
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইস্কন সারা পৃথিবী জুড়ে ভারতের সনাতন বৈদিক সংস্কৃতি প্রচার করার মাধ্যমে মানুষকে সেই শিক্ষা প্রদান করছে। ইসূনের এই প্রচারের ফলে সারা পৃথিবীর মানুষ জানতে পারছে কিভাবে এই পৃথিবীতে অবস্থান কালেও দিব্য আনন্দময় জীবন যাপন করা যায় । তাই আজ ভারতের বাইরের দেশগুলিতেও অসংখ্য মানুষ আমিষ আহার ত্যাগ করে কেবল নিরামিষাশীই হচ্ছে না, তারা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে তা নিবেদন করে তার প্রসাদ গ্রহণ করছে। এই ভগবৎ-প্রসাদ মানুষকে তার পূর্বকৃত পাপ থেকে মুক্ত করে এবং তার সুপ্ত চিন্ময় চেতনা বা ভগবক্তি বিকশিত করে।
ইসকনের বিভিন্ন প্রকাশনায় ভারতীয় রন্ধন সম্বন্ধে যে সমস্ত প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তার থেকে মনােনয়ন করে ও অনুবাদ করে শ্রীমান প্রেমাঞ্জন দাস অধিকারী এই গ্রন্থটি সংকলন করেছে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের বন্ধন কলার এই সমন্বয় বহু রন্ধনকুশল এবং রন্ধন অভিলাষী ব্যক্তিদের সুযােগ দেবে নানা রকম সুস্বাদু ভােজ্য বস্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করে, আঁর মহাপ্রসাদ গ্রহণ করে, তাঁর কৃপালাভে ধন্য হওয়ার।
- ভক্তিচারু স্বামী
কোন মন্তব্য নেই