সকল বর্ণ ও আশ্রমের একই লক্ষ্য।
দেহত্যাগের পূর্বেই যৌনবাসনাকে কমাতে কমাতে শেষ পর্যন্ত যদি শূন্যের কোঠায় নামাতে না পারি তা হলে পুনরায় জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আবর্তন অবশ্যম্ভাবী। যৌনবাসনার সামান্য গন্ধও যদি, অবশিষ্ট থাকে, তা হলেও পুনর্জন্ম অবশ্যম্ভাবী। তাই বৈদিক পরিকল্পনা হল, দেহত্যাগের পূর্বেই যৌনবাসনাকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। আর দেহত্যাগ তত যে-কোনাে মুহূর্তেই হতে পারে।
তাই ব্রহ্মচারী, গৃহস্থ, বানপ্রস্থী এবং সন্ন্যাসী—সকলেরই এক চেষ্টা এবং তা হচ্ছে কৃষ্ণভাবনায় তীব্র উন্নতির মাধ্যমে (তীব্রণ ভক্তিযােগেন)। যৌনভাবনাকে শূন্য করে দেওয়া। কারণ জন্ম-মৃত্যু-জরা-ব্যাধির চক্রটি বড়ই ভয়ঙ্কর।
ব্রহ্মচারী তার শৈশব থেকেই চেষ্টা করেন যৌনবাসনাকে শূন্যের। কোঠায় নামাতে। সফল হলে তিনি নৈষ্ঠিক ব্রহ্মচর্যের ব্রত গ্রহণ করে আজীবন ব্রহ্মচারী থেকে কৃষ্ণভাবনায় দ্রুত অগ্রগতি লাভ করেন। ব্যর্থ ব্রহ্মচারী গৃহস্থ আশ্রম বরণ করেও একইভাবে চেষ্টা চালিয়ে যান। বুদ্ধিমান গৃহস্থ এই দুঃখের জগতে জন্ম-মৃত্যুর চক্রে কষ্ট পেতে মহাভয় পান। তাই চতুর গৃহস্থও চেষ্টা করেন তার যৌন বাসনাকে সম্পূর্ণরূপে | শূন্যের কোঠায় নামাতে। তাই শুধুমাত্র সন্তান উৎপাদনের প্রয়ােজন ছাড়া তিনি যৌনবাসনার আগুনে ভােগের পেট্রোল ঢালেন না। যদি ঢালেন, শ্রীকৃষ্ণও তাকে অনন্তবার জন্ম-মৃত্যুর চক্রে ঘােরাতে প্রস্তুত। সুতরাং গৃহস্থ হলেও যৌনবাসনাকে শূন্যের কোঠায় নামানাের যে লক্ষ্য, তার কোনাে পরিবর্তন করা উচিত নয়।
যদিও ৫০ বছর বয়সে বানপ্রস্থের বিধান রয়েছে, কিন্তু তার আগেও তাে আমাদের মৃত্যু হতে পারে। সুতরাং ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত গৃহস্থ জীবন যাপনের মানে এই নয় যে তিনি যৌনবাসনাকে শূন্য করার সংগ্রাম থেকে বিরত হবেন। অবশ্য ৫০ বছর বয়সের পর সকলকেই বানপ্রস্থ এবং কার্যত সন্ন্যাস নিতেই হবে। বাইরের বিচারে চার বর্ণ এবং চার আশ্রম। কিন্তু অভ্যন্তরে সকলেরই এক লক্ষ্য কৃষ্ণভাবনার মাধ্যমে যৌনবাসনাকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে জন্ম-মৃত্যুর চক্রকে রােধ করা।
আদর্শ গৃহস্থ জীবন থেকে সংগ্রহীতর্
কোন মন্তব্য নেই